মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কাউন্সিলরসহ নিহত ৯

0
328
বন্দুকযুদ্ধ-rtvonline

অনলাইন ডেস্কঃ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ৯ জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৯ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে, কক্সবাজার, বাগেরহাট, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহে ১ জন করে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলিতে ২ জন মাদক ব্যবসায়ী মারা গেছেন।

শনিবার দিবাগত রাতে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সীতাকুণ্ড

সীতাকুণ্ডে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধে রিহান (২৭) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে উপজেলার গুলিয়াখালী সন্দ্বীপ ফেরিঘাটে এ ঘটনা ঘটে।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, রাতে মাদক বিরোধী অভিযানে বের হলে মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালি সাগরপাড় এলাকায় সন্দ্বীপ ফেরিঘাটের কাছে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষে করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টাগুলি চালায়। এক পর্যায়ে পালানোর সময় ধাওয়া করে ৩ জনকে আটক করা হলেও ঘটনাস্থলে রিহানের মরদেহ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, নিহত রিহান একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারী। তার নামে সীতাকুণ্ড থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।

কক্সবাজার

কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬) নিহত হয়েছেন।

শনিবার দিবাগত রাত রাত ১টার দিকে মেরিনড্রাইভ সড়কের নোয়াখালীয়া পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। এসময় ১০ হাজার ইয়াবা, ১টি বিদেশি পিস্তল ও ১টি ওয়ানশুটারগান উদ্ধার হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

নিহত একরামুল হক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নিহত একরামুল প্রায় ১২ বছর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন আরটিভি অনলাইনকে জানান, রাতে কক্সবাজার র‌্যাবের একটি দল মাদকবিরোধী অভিযানে নামে। এসময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি দল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী একরামুল হকের অবস্থান জানতে পারেন। মেরিনড্রাইভ সড়কের টেকনাফের নোয়াখালীয়া পাড়া এলাকায় র‌্যাব অভিযান শুরু করলে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে একদল ইয়াবা ব্যবসায়ী র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে একজনের মরদেহ, ১০ হাজার ইয়াবা, বিদেশি ১টি পিস্তল, ১টি ওয়ানশুটারগান উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর স্থানীয়রা মরদেহটি টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. একরামুল হক বলে শনাক্ত করেন। মরদেহটি টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ডি ব্লক মাঠে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ী হালিম মণ্ডল (৩৫) নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবী, ঘটনাস্থল থেকে ৮শ’ পিস ইয়াবা, আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে এবং বন্দুকযুদ্ধের সময় পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়েছেন।

নিহত হালিম মণ্ডল (৩৫) কুষ্টিয়া পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে জানান, গতকাল শনিবার রাত দেড়টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ডি ব্লক মাঠে মাদকদ্রব্য কেনা বেচার জন্য একদল মাদককারবারি অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদে টহল পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়। এসময় উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন গুলিবিদ্ধ হয়। অন্যরা পিছু হটলে পুলিশ গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ জানতে পারে নিহত ব্যক্তি পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হালিম মণ্ডল।

বাগেরহাট

বাগেরহাটের চিতলমারীতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিঠুন বিশ্বাস (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।

শনিবার রাতে উপজেলার চিংগুরি মোচন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি শাটারগান, দুই রাউন্ড গুলি, দুই কেজি গাঁজা ও ১০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। নিহত মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়।

চিতলমারী থানার ওসি অনুকূল বিশ্বাস জানান, মাদক বিক্রেতার মরদেহ বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

নোয়াখালী

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মো. হাছান প্রকাশ ইয়াবা হাছান (৩৫) নিহত হয়েছেন। এসময় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পৌর এলাকার বগাদিয়া ইজতেমা মাঠে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে ইয়াবা হাছানকে আটক করে রাতে হাসানের দেয়া তথ্য মতে তাকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধারের জন্য বগাদিয়া ইজতেমা মাঠ এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় হাছানের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে হাছান গুলিবিদ্ধ ও তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে হাছানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, নিহতের মরদেহ সোনাইমুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। হাছানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ৩টিসহ থানায় মোট ২১টি মামলা রয়েছে।

চাঁদপুর

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেলিম (৩৭) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার হাজীর ডোন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ কুতুবউদ্দিন জানান, থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযানে হাজীর ডোন এলাকায় অভিযান চালায়। মাদক মামলার আসামি সেলিমকে আটক করে। সেলিমকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে সেলিম গুলিবিদ্ধ হন। পরে সেলিমকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৪ রাউন্ড গুলি, ৬ রাউন্ড কার্তুজ, ১শ’ ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ২টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সেলিমের বিরুদ্ধে থানায় ৭ মাদক মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত দেড়টার দিকে নগরীর মরাখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো. আশিকুর রহমান জানান, খবর আসে ওই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী মাদক ভাগাভাগি করছে। পরে সেখানে অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে ওই জায়গায় তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ এক মাদক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল হতে ১০০ গ্রাম হেরোইন, ৪টি গুলির খোসা, ২টি রামদা ও ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের শৈলকুপার বড়দাহ গ্রামের জামতলা নামক স্থানে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে লিটন মোল্লা (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

তিনি একই উপজেলার শেখ পাড়া গ্রামের হাকিম মোল্লার ছেলে।

রোববার রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি শুটারগান, ৩ রাউন্ড গুলি, ১০ বোতল ফেনসিডিল ও কিছু ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

শৈলকুপা থানার ওসি আলমগীর হোসেন আরটিভি অনলাইনকে জানান, নিজেদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলিতে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুলিবিদ্ধ মরদেহ, অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করে। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায় নিহতের নাম লিটন মোল্লা। তার বিরুদ্ধে শৈলকুপা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

মেহেরপুর

মেহেরপুরের গাংনীতে দু’পক্ষের গুলাগুলিতে হাফিজুর রহমান হাফি (৪৮) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও ১১২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার রাত তিনটার দিকে গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়ীয়া বাথানপাড়া মাঠে মাদক ব্যবসায়ী দু’পক্ষের মধ্যে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে জানান গাংনী থানার ওসি।

গাংনী থানা ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, রাত আড়াইটার দিকে গাড়াবাড়য়ী গ্রামের বাথানপাড়া মাঠে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির খবর পায় পুলিশ। পুলিশের কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ঘটনাস্থল থেকে ১১২ বোতল ফেনসিডিল ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে স্থানীয় লোকজন তার পরিচয় নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে। গুলাগুলির ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।