মাদকবিরোধী অভিযানে গতরাতেও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১১

0
490

অনলাইন ডেস্কঃ
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গেলো কয়েকদিনের মতো রোববার রাতেও রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদ ও নিজেদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে রাজধানীর মিরপুরে একজন, কুমিল্লায় দুজন, পিরোজপুরে দুজন, চাঁদপুরের একজন ও নাটোরে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহে দু’দলের মধ্যে গোলাগুলিতে চারজন নিহত হওয়া খবর পাওয়া গেছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

কুমিল্লা

কুমিল্লার দেবীদ্বার ও সদর দক্ষিণ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে ২ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ১০ কেজি গাঁজা, ১০০ পিস ইয়াবা, একটি পাইপগান, কার্তুজ ও ১০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, কুমিল্লার দেবীদ্বারে ভিংলাবাড়ি বেড়িবাঁধে মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এনামুল হক দোলন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মাদক ব্যবসায়ী এনামুল হক দোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে।

অন্যদিকে সদর দক্ষিণের গলিয়ারায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নুরু মিয়া নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৩টি মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা, পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের মরদেহ পুলিশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

পিরোজপুর

পিরোজপুরে পৃথক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ওহিদুজ্জামান (৩৫) ও মিজানুর রহমান (৩৪) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় ডিবি ও থানা পুলিশের ৮ সদস্য আহত হয়েছেন।

রোববার রাতে পিরোজপুর সদর উপজেলার কৈবর্তখালী গ্রামে ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের এ ঘটনা ঘটে।
পিরোজপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

জানা যায়, রোববার দুপুরে পিরোজপুর পৌরসভার উত্তর কৃষ্ণ নগর এলাকা থেকে ওহিদুজ্জামানকে পিরোজপুর গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী রাতে সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের টোনা ব্রিজের কাছে কৈবর্তখালী গ্রামে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে ওহিদুজ্জামানের সঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েক গুলি ছুঁড়ে অহিদুজ্জামানকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে ডিবি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। এসময় মাদক ব্যবসায়ী ওহিদুজ্জামান পালাতে গেলে ডিবি পুলিশের গুলিতে ঘটনা স্থলেই তিনি নিহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে ১টি পাইপ গান, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি বগি দা, ১৭৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫০ গ্রাম গাঁজা, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

পিরোজপুর ডিবির পরিদর্শক মিজানুল হক জানান, ওহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মাদক, সন্ত্রাসী, অস্ত্র মামলাসহ মোট ৮ টি মামলা রয়েছে। তিনি একটি মাদক মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি।

অন্যদিকে, রোববার রাতে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে থানা পুলিশ উপজেলার বড় মছুয়া এলাকার গেলে ডাকাত ও মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও তার সঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই মিজানুর রহমান মারা যায়। এতে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের ৬ সদস্য গুরুতর আহত হন।

মঠবাড়িয়া থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার বলেন, মিজানুরের বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতিসহ ৬টি মামলা রয়েছে।

ঢাকা

রাজধানীর মিরপুরে মাদক বিক্রির সময় ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত পরিচয় এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

রোববার রাতে মিরপুরের রূপনগর ট-ব্লকে সরকারি কর্মচারীদের নির্মাণাধীন ভবনের পাশে এ ঘটনা ঘটে।

রূপনগর থানার এসআই মিজানুর জানান, ওই এলাকা মাদক কেনাবেচা হবে- এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি (পশ্চিম) বিভাগের একটি দল ভোরে সেখানে অভিযান চালায়। ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর গুলি চালায়। ডিবিও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজন পড়ে থাকেন। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ও ১টি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভায় নিজেদের মধ্যে ‘গোলাগুলি’তে সুমন বিশ্বাস (৩৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

রোববার রাত পৌনে ২টার দিকে পৌরসভার নয়াদীঘিরপাথর এলাকার মুড়মা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানান, মীরকাদিম পৌরসভার মুড়মা এলাকায় দুই গ্রুপ মাদক ব্যবসায়ীদের মাঝে ‘গোলাগুলি’র ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিপক্ষের গুলিতে সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমন নিহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এসময় তার সঙ্গে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র (ছুরি) ও বিপুল পরিমাণে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত সুমন মাদকসহ ২০ থেকে ২৫টি বিভিন্ন মামলার আসামি।

চাঁদপুর

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে ১০ মাদক মামলার আসামি আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লালা বাদশা নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছে ৬ পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে ১টি বন্দুক, ৩টি ককটেল, ৪ রাউন্ড গুলি ১১১ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়, ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ রোববার রাতে ইয়াবাসহ লাল বাদশাকে আটক করে। পর মাদক উদ্ধারে পুলিশ লাল বাদশাকে নিয়ে অভিযানে বের হয়ে গুপ্টি ব্রিজ এলাকায় গেলে লাল বাদশার সহযোগিরা পুলিশের উপর গুলি ও হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয় আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লালা বাদশা। পরে আহত অবস্থায় তাকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসকরা লালা বাদশাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম আরটিভি অনলাইনকে জানান, নিহত আবু সাঈদ বাদশার বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় ৭টি, চাঁদপুর থানায় ২টি এবং চট্টগ্রামে একটিসহ মোট ১০ মাদক মামলা রয়েছে। সে একজন আন্তঃজেলা মাদক বিক্রেতা।

নাটোর

নাটোরের সিংড়ায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে খালেক উদ্দিন নামে এক মাদক ব্যাবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে একটি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি ও বেশ কিছু মাদক।
রোববার রাত ২টার দিকে উপজেলার ভাগনাগরকান্দি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

র‌্যাব-৫ এর সিপিসি-২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা আরটিভি অনলাইনকে জানান, র‌্যাবের একটি টহল দল নাটোর আত্রাই আঞ্চলিক সড়কে টহল দিয়ে নাটোর ফিরছিল। পথে সিংড়া উপজেলার ভাগনাগরকান্দি গ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র মাদক লেনদেন করছে এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায়। ওই গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালালে সেখানে উপস্থিত মাদকব্যাবসায়ীরা র‌্যাবের উপর গুলি চালায়। এসময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে খালেক উদ্দিন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী আহত হন। খালেককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ সদরের জারগ্রামে দু’দল মাদকব্যবসায়ীর মধ্যে গুলি বিনিময়কালে ফরিদউদ্দীন নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ২০ বোতল ফেনসিডিল ও প্রায় এক কেজি গাজা উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার রাত ১ টার দিকে জারগ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ আরটিভি অনলাইনকে জানান, রাত ১টার দিকে জাড়গ্রামে গোলাগুলির শব্দ শুনে টহল পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌঁছে। সেখানে একজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। মাদকব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে গুলি বিনিময়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফরিদ উদ্দীনের নামে সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার ভোরে সাতক্ষীরা পৌরসভার বাকাল আগুনপুর গ্রামের একটি মৎস্য ঘের সংলগ্ন কাঁচারাস্তা থেকে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের দাবি, মাদক ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে মাদক বিক্রেতাদের দু’পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এ হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।

সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রবীর জানান, সকালে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেছে। মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।