মধ্য আশ্বিনেও পুড়ছে খুলনাঞ্চলের মানুষ : গত বছরের তুলনায় তাপমাত্রা বেড়েছে ৭ ডিঃ সেঃ 

0
480

কামরুল হোসেন মনি : আশ্বিন মাসের আজ ১৬ তারিখ। সাধারণত এ সময়ে শীতের আগমনের সঙ্কেত দিতে থাকে প্রকৃতিক রূপ। কিন্তু এবার তার উল্টো। মধ্য আশ্বিনেও দাপদাহ যেন চৈত্র মাসকে মনে করিয়ে দেয়। ১৫ আশ্বিনে (৩০ সেপ্টেম্বর) খুলনায় তাপমাত্রা ছিলো সর্বোচ্চ ৩৬ ডিঃ সেঃ। গত বছর এমন সময়ে ছিলো ২৯ দশমিক ৬ ডিঃ সেঃ।  সে হিসেবে তাপমাত্রা বেড়েছে ৭ ডিঃ সেঃ। জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ায় এরকম পরিস্থিতি বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদগণ।
প্রচ- গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই নগরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা গরমে কাহিল হয়ে পড়েছেন। খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে, ২৯ সেপ্টেম্বর (১৪ আশ্বিন) খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৫ ডিঃ সেঃ, ৩০ সেপ্টেম্বর (১৫ আশ্বিন) তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ ডিঃ সেঃ, ২৮ সেপ্টেম্বর (১৪ আশ্বিন) তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২৭ সেপ্টেম্বর (১৩ আশ্বিন) তাপামাত্রা ছিলো সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
খুলনার আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ রোববার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, গত বছরে তুলনায় এ সময়ে তাপমাত্রা ৬-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর আশ্বিনের এ সময়ে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে হিসেবে গড়ে এ চলতি বছরে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। ওই আবহাওয়াবিদ বলেন, শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৫ ডিঃ সেঃ ওই দিন বাতাসের গতিবেগও ছিলো না। পরের দিন বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায় দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসে দাঁড়ায়। আগামী ২-৩ দিন আবহাওয়ার এরকম পরিস্থিতি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে বৃদ্ধ আমিরুল ইসলাম (৬৮) জানান, আমার বয়সে আশ্বিন মাসে এমন সময়ে এরকম তীব্র গরম অনুভব কোনোদিনও করিনি। এই গরমকে যেন চৈত্র মাসে রোদের তেজকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। শরীর থেকে অবিরাম ঘাম ঝরছে। এর ওপর গত কয়েকদিন থেকে শহরের অধিকাংশ এলাকায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং।
খুলনা সিভিল সার্জন পরিসংখ্যান বিভাগের সূত্র মতে, খুলনার ৯ উপজেলা, শিশু হাসপাতাল ও মীরেরডাঙ্গা সংক্রামক বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মিলে গত ৮ মাসে মোট ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৩ হাজার ৯৬৪ জন। এর  মধ্যে শিশু হাসপাতালে শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩ হাজার ৮৯৭ জন।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সূত্র মতে, বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে সর্দি-কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে মীরেরডাঙ্গা সংক্রামক বক্ষব্যাধি হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। এছাড়া হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। আর ইনডোরে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়েও রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংক্রামক বক্ষব্যাধি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাবিবুর রহমান রোববার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনই ৭-৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার কেউ সুস্থ হয়ে দুপুরের মধ্যে চলে যাচ্ছে আবার রাতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এ সময়ে  রোদ এড়িয়ে এবং পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানি পান ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন হাসপাতালের এই চিকিৎসক।