ভোল পাল্টাচ্ছে খুলনার মাদক ব্যবসায়ী-প্রশ্রয়দাতা : পৃষ্ঠপোষকতায় ৭৪

0
689

কামরুল হোসেন মনি:
দেশব্যাপী র‌্যাব পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে খুলনায় যেসব মাদকের আশ্রয়দাতা ও জনপ্রতিনিধিরা নামের তালিকা রয়েছেন, তারাই এখন মাদকবিরোধী কার্যক্রমে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছেন। এদের প্রচারণায় বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। খুলনা জেলা ও মহানগরীতে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী, ডিলার, চোরাকারবারী, পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ৭৪ জনের নামের তালিকা রয়েছে।
সূত্রমতে, খুলনার ৯ উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী, চোরকারবারীদের পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী ব্যক্তিদের তালিকা রয়েছে ১২ জনের। যাদের নামের তালিকা রয়েছে এদের মধ্যে কেউ ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের আত্মীয়-স্বজন। জেলা পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের মধ্যে তেরখাদায় একজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজন, রূপসা আইচগাতী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান, দাকোপে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বারাকপুরের ইউপি চেয়ারম্যানসহ ছাত্রলীগের নেতা ও যুবলীগ মিলে মোট ১২ জনের তালিকা রয়েছে। খুলনার ৯ উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারী হিসেবে মহিলা ও পুরুষ মিলে ১১৮ জনের তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে এর মধ্যে তেরখাদায় ২২ জন, রূপসায় ২২ জন, দাকোপে ১৮ জন, পাইকগাছায় ৭ জন, কয়রায় ১৫ জন, ডুমুরিয়ায় ৭ জন, বটিয়ঘাটায় ৬ জন, দিঘলিয়ায় ৭ জন, ফুলতলায় ১২ জন। এ সব মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি মাদক বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছেন। এ সব উপজেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহকারী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ জনের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রূপসা আইচগাতী ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাহিদ, রূপসা থানা এএসআই রবিউল ইসলাম, দাকোপ থানার এএসআই সবুর হোসেন, পাইকগাছা থানার এসআই মোমিন, কয়রা থানার এসআই ইকবাল ও আজম, ডুমুরিয়া মাগুরঘোনা ক্যাম্প ইনচার্জ নাহিদ হাসান, বটিয়াঘাটা থানার এসআই শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, দিঘলিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান ও এসআই মধুসুদন এবং ফুলতলার ওসি আসাদুজ্জামান।
এছাড়া মহানগরীতে মাদক ব্যবসায়ী, চোরকারবারীদের পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের তালিকায় রয়েছে ২৮ জন। তারা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত। জড়িতদের মধ্যে ঘাট শ্রমিক লীগ, ঘাটের মেম্বার, খাদ্যগুদামের ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, ট্রাক টার্মিনাল কাঁচাবাজার সমিতির সেক্রেটারিসহ অনেকের নাম রয়েছে। মহানগরীতে ১৫৪ জন পুরুষ ও মহিলা মাদক বিক্রেতার তালিকা রয়েছে। এছাড়া মহানগরীর ৮টি থানায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাদকের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হিসেবে ২২ জনের নাম তালিকায় উঠে এসেছে। এরা হচ্ছে খানজাহান আলী থানার শিরোমণি পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মোঃ শহীদুল ইসলাম, আটরা পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মোঃ মিজান, দৌলতপুর পুলিশ ফাঁড়ির মোঃ মিকাইল হোসেন, খালিশপুর থানার এসআই কানাই লাল মজুমদার, খালিশপুর থানার এসআই নুরু, সদর থানা এসআই শাহআলম, আশরাফুল আলম ও শুব্রত কুমার বাড়ৈ, সোনাডাঙ্গা থানার এসআই সোবহান ও এএসআই এমদাদুল হক ও নূরুজ্জামান, লবণচরা থানার এসআই মোঃ বাবুল ইসলাম, লবণচরা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোঃ ওসমান গনি, লবণচরা থানার এসআই মনজিল হাসান, হরিণটানা থানার এএসআই মোহাম্মদ রিপন মোল্লা, সদর থানার এসআই টিপু সুলতান ও এসআই মিলন কুমার, খানজাহান আলী থানার এসআই রাজ্জাক, ইলিয়াস ও সুমঙ্গলের নাম রয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি বিএম নূরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদকের তালিকাভুক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি যাদেরই মাদকের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের নিয়মিত বাহিনী দিন-রাত অভিযান চালাচ্ছেন। অনেক জায়গায় অভিযানে মাদকসহ মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এরকম দেশব্যাপী র‌্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অভিযান চলাকালে মাদকের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা এখন মাদকবিরোধী প্রচারণায় হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছে। অনেক সময় বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় তাদের নাম প্রকাশ হলে তারা এর সাথে তারা সম্পৃক্ত নয় বলে অনেক সময় সাংবাদিকদের হুমকি ধামকিও দিয়েছেন। স্থানীয় সময়ের খবর এর নিজস্ব প্রতিবেদক আশরাফুল ইসলাম নূর একটি প্রতিবেদনে মাদকের সরবারহকারীর নামের তালিকা প্রকাশ করলে তাকে হুমকি প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় ওই সাংবাদিক সাধারণ ডায়েরি করেন। এখন অধিকাংশ মাদকের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীই বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী সমাবেশ ও মিছিল করে যাচ্ছেন। যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা ও তাদের তালিকা থেকে সমন্বয় করে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া কেউ কেউ  এর সাথে জড়িত নন মর্মে লিখিত আকারে আবেদনও করছেন। এ পর্যন্ত ৮-১০ জন আবেদনও করেছেন।