ভাড়া না দিয়ে খুলনা স্কুল হেলথ ক্লিনিকের গেষ্ট হাউজ ব্যাবহার করছেন সিভিল সার্জন

0
496

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃখুলনা স্কুল হেলথ ক্লিনিকের গেষ্ট হাউজ সরকারী নিয়মে ভাড়া না দিয়ে গত দুই বছর ব্যাবহার করছেন সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক । আর গেস্ট হাউজে আরাম আয়েশে থাকার জন্য রয়েছে এসিরুম । এসি রুমে থাকার সুভাধে তার অধিনস্থ্র খুলনা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সুন্দরী নারী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভাবে অফিসের কাজের কথা বলে নিয়ে তাদের সাথে আমোদ ফুর্তিতে মেতে উঠেন । তার এ কাজে কোন নারী কর্মকর্তা বাঁধা দিলে কর্মক্ষেত্রে হতে হয় হয়রানির স্বীকার । তার দপ্তরে কোন ফাইল টাকা ছাড়া অবমুক্ত হয়না । সিভিল সার্জন অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলী,পেনসনসহ যে কোন কাজে কোন কর্মচারী তার দারস্থ হলেই বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না ।নারী লোভী খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক এম,এস আর ঠিকাদারদের কাছ থেকেও কমিশন খান । আর এই এম,এস আর ঠিকাদারদের কোন বিল বা ভাউচার পাস করতে হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা পেয়ারা আক্তারের মাধ্যমে এ অর্থ আদায় করা হয় বলে সুত্র জানায় । খুলনার সিভিল সার্জন অফিসের যাবতীয় আর্থিক লেনদেন পিছনে রয়েছে বিপুল অংকের ঘুষ বানিজ্য । জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ঘুষের বানিজ্যের টাকা আদায়ের সিংহ ভাগ টাকাই সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাকের পকেটে দিতে হয় । এ অর্থের আদায়ে সহায়তা করেন হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা পেয়ারা আক্তার,ক্যাশিয়ার মোঃ মাহফুজুর রহমান ,ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট শেখ মোঃ মাহাবুবুর রহমান,কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও কমপ্লেক্সের আর,এমও ডাঃ সুজাত আহম্মেদ ।
কয়রা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ব্যবস্থাপক মোঃ আলমগীর হোসেন খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক ও কয়রা উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও কমপ্লেক্সের আর,এমও ডাঃ সুজাত আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে দায়ের করা ঘুষের অভিযোগের তদন্তে শুক্রবার ঢাকা থেকে আসছেন টিম সদস্যরা । তদন্ত টিমের সদস্যরা শনিবার সকালে খুলনা সার্কিক হাউজে বসে ঘুষের অভিযোগের ব্যাপারে কাজ শুরু করবেন বলে একটি সুত্রে জানা গেছে ।
উল্লেখ, কয়রা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ব্যবস্থাপক মোঃ আলমগীর হোসেন গত ১৬ আগস্ট মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজি) এর লাইন ডাইরেক্টর হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট এর ববারবর অভিযোগটি দায়ের করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
অপরদিকে খুলনার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। চিকিৎসার অভাবে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় খুলনার পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিক ও কয়রার সাগর নার্সিং হোম ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে গঠিত তদন্ত কমিটির শাস্তির সুপারিশ রিপোর্টটি উপেক্ষা করে সিভিল সার্জন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে চালু করার নির্দেশ দেন।
কয়রা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ব্যবস্থাপক মোঃ আলমগীর হোসেন সোমবার (২৭ আগস্ট) এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ১৬ আগস্ট লাইন ডাইরেক্ট বরাবর খুলনা সিভিল সার্জন এবং কয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমরা হাসপাতালের সমস্ত অধিদপ্তরে লাইসেন্স ও সরকারি সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলা সত্ত্বেও কয়রায় বেআইনীভাবে যে সমস্ত ক্লিনিক চলছে তাদের মত আমাকে মাসিক মাসোহারা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। আমি দিতে অস্বীকার করলে সিভিল সার্জনের রোষানলে পড়ি আমি এবং আমাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করছেন। ওদিকে বেআইনীভাবে চলা ক্লিনিকগুলো মাসোহারার মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কার্যক্রম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার অবৈধভাবে চলা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক ও কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুজাত আহম্মেদ মাসিক মাসোহারা গ্রহণ করে ওই সব অবৈধ প্রতিষ্ঠানকে চালুর সুযোগ করে দিচ্ছেন। এর মধ্যে মাসিক ৫ হাজার টাকা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ১ হাজার টাকা করে মাসোহারা নিচ্ছেন। চলতি বছরে ৩ জুলাই প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় পাইকগাছার নূরজাহান ও কয়রার সাগর নার্সিং হোম ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেন খুলনার সিভিল সার্জন। এ ঘটনায় ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত শেষে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে রিপোর্টটি জমা দেন। কিন্তু তদন্ত রিপোর্টের শাস্তির সুপারিশ উপেক্ষা করে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিক চলতি মাসের ১৩ তারিখে পুনরায় চালুর অনুমতি দেন। কয়রার সাগর নার্সিং হোম ক্লিনিক সিভিল সার্জনের দাবিকৃত টাকা পূরণ না হওয়ায় চালু করার অনুমতি এখনো দেননি।
মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং লাইন ডাইরেক্টর হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট অধ্যাপক ডাঃ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন সোমবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে মুঠোফোনে খুলনার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবদেককে বলেন, এ অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য সহকারী পরিচালক রয়েছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে গঠিত তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কয়রা ও পাইকগাছার ক্লিনিকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মৌখিকভাবে সিভিল সাজর্নকে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেই, সিভিল সার্জনের প্রতিবেদন পেলে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে দিবো। তারপরও যদি অভিযুক্ত ওই ক্লিনিকগুলো চালু থাকে তাহলে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বানোয়াট। প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিক এর বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি। কয়রার সাগর ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় তারটা বন্ধ রাখা হয়েছে। গঠিত তদন্ত রিপোর্টে দুই ক্লিনিকে শাস্তির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও তদন্ত রিপোর্ট উপেক্ষা করে চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি স্থানীয় এমপির সুপারিশ ছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেন। কয়রা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসিক মাসোহারা না দেওয়ায় হয়রানি করছেন এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আতিয়ার রহমান সোমবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, চিকিৎসার অবহেলায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় কয়রা ও পাইকগাছার দুইটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। নির্ধারিত সময়েই তদন্ত রিপোর্ট সিভিল সার্জনের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। তদন্ত রিপোর্টে দুই ক্লিনিককে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল উল্লেখ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এটা কর্তৃপক্ষ বলবে আমি এ বিষয়ে কিছুই মন্তব্য করবো না।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুজাত আহম্মেদ তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কয়রার সাগর নার্সিং হোম ক্লিনিক যদি তাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে পুনরায় চালু করে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে কয়রার সাগর ক্লিনিকের মালিক ডাঃ মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, হাসপাতালের কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে এ জন্য আপাতত বন্ধ রয়েছে। কোনো রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। হাসপাতালের ভেতরে রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে গত ৩ জুলাই পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের বেতবুনিয়া গ্রামের ওয়াচকুুরুনীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (২২) সন্তান প্রসবের জন্য কয়রার সাগর নার্সিং হোমে ভর্তি হয়। এখানে অদক্ষ লোকদ্বারা ডেলিভারী করলে প্রসূতির একটি কন্যা সন্তান হয়। পরবর্তীতে সন্তান প্রসবের জটিলতা দেখা দিলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা প্রসূতিকে পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিকে ভর্তি করলে চিকিৎসার অভাবে সেখানে প্রসূতি আনোয়ারা খাতুন মারা যান। এ অভিযোগের ভিত্তিতে পাইকগাছা ও কয়রার দুটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম আব্দুর রাজ্জাক পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিক ও কয়রার সাগর নার্সিং হোম এর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেন।