ভারী যান চলাচলে মাত্র ৪ বছরেই দেবে গেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাইকগাছার তালতলা-কাশিমনগর ৬ কি:মি’র সড়কটি

0
461

যেকোন সময় বিচ্ছিন্ন হতে পারে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা

শেখ নাদীর শাহ্:::


বিভিন্ন ইট ও টালী ভাটার মাটিবাহী ট্রাক-ট্রলি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপকরণবাহী ট্রাকের চাপে ডেবে গেছে সদ্য নির্মিত খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী-পাইকগাছার কপিলমুনি সড়কটি। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোপরেশন এজেন্সি (জাইকার) যৌথ অর্থায়নে ৫ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬ শত ১৬ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৮৬০ মিটার রাস্তার অন্তত ১ শ’ স্থানে ফাঁটল ও দেবে গেছে। বহু স্থানের পিচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় কোথাও কোথাও চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় স্থানীয়,জাতীয় ও অনলাইন দৈনিকে ব্যাপক লেখালেখি হলেও এখন পর্যন্ত কতৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এলাকাবাসী বলছেন,চলতি বর্ষা মৌসুমের যেকোন সময় সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দু’উপজেলার একমাত্র সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

জানাগেছে,খুলনার ডুমুরিয়া,পাইকগাছা ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সালতা নদীর পাইকগাছার তালতলা এলাকায় নব নির্মিত ব্রীজের একমাত্র এ্যাপ্রোচ সড়ক ও তালতলা থেকে কপিলমুনি ভায়া কাশিমনগর বটতলা ৫৮৬০ মিটার সড়কটি গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোপরেশন এজেন্সি (জাইকার) যৌথ অর্থায়নে ৫ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬ শত ১৬ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়।

তবে নির্মাণ পরবর্তী অদ্যবধি বিভিন্ন ইট,টালী ভাটা ব্রীজের অপর প্রান্ত ডুমুরিয়া এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপকরণবাহী ভারী ১০ চাকার ট্রাকের অব্যাহত চাপে চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কটির বিভিন্নস্থানে অন্তত ১ শ’রও বেশী স্থানে ১ থেকে দেড় কোথাও দু’ফুট পর্যন্ত দেবে রীতিমত বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণের মাত্র ৪ বছরে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ জনপদের লাখ লাখ মানুষের মধ্যে নানা আশংকা জেঁকে বসেছে। সড়কটি নির্মাণের পর থেকে প্রতিদিন দু’উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের পাশাপাশি চলাচল করে আসছে ছোট ছোট যানবাহন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সড়কের বেহাল অবস্থায় তারা জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি দূর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণে।

এলাকাবাসী জানায়,সড়কটি নির্মাণের পর থেকে অবাধে স্থানীয় বিভিন্ন ইট ও টালী ভাটার মাটি ও ইটবাহী ট্রাক-ট্রলি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপকরণবাহী ১০ চাকার ভারী ট্রাক চলাচল করছে। স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে বিভিন্ন সময় পত্রিকান্তে লেখালেখি হওয়ায় ইতোপূর্বে কয়েক দফায় ইট ও টালী ভাটার ট্রাক-ট্রলি বন্ধ থাকলেও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে তারা ফের ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত রাখে। এতে রীতিমত বাড়ে ঝুঁকির আশংকা। তদারকি ও মনিটরিং না থাকায় সড়কটি অরক্ষিত হয়ে পড়ছে আশংকা করে জনপ্রিয় অনলাই দীপ্ত নিউজ২৪.কম একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও স্থানীয় প্রশাসনের ন্যুনতম টনক নড়েনি। শেষে সেই আশংকাই সত্যি হয়ে চরমভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

শুধু এখানেই শেষ নয়,অবাধ বেপরোয়া গতির যন্ত্র দানবের কারণে সড়কটিতে প্রায়ই ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে। ইতোপূর্বে জীবনহানির মত ঘটনাও ঘটেছে সড়কে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য নিশ্চিত করে যে,ভাটা মালিকদের সাথে গোপন যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসকল অবৈধ যান চলাচলে তাদের সুযোগ করে দেয়।

এলাকাবাসী জানায়,কতিপয় মহলকে ম্যানেজ করে ভাটা কতৃপক্ষ তাদের সকল প্রকার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জলমহল শাষনে ঐ এলাকার নাছিরপুর,কাবুলিয়া,তালতলা ও ফটিকমারি সরকারি খালের নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় সেখান থেকে মাটির যোগান পেতেই ভাটা মালিকরা যেকোন মূল্যে ঐ সড়কে ট্রাক ও ট্রলি ঢোকায়। এব্যপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, ভাটা মালিকদের খাস খাল থেকে মাটি কর্তন ও সড়কটি দিয়ে তা সরবরাহের ব্যাপারে বারংবার নিষেধ করলেও তারা কারো কোন কথায় কর্ণপাত করেননা।

যৌথ মালিকানায় পরিচালিত কাশিমনগর আরবিএস ইট ভাটার মালিক শেখ রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি দম্ভের সাথে এ প্রতিবেদককে বলেন,ভাটার সব নিয়ম-কানুন মেনে তারা ভাটা পরিচালনা করছেন। এছাড়া মাটি নিতে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন,এমনকি সকলকে ম্যানেজ করেই তারা ট্রলিযোগে রাস্তা দিয়ে খালের মাটি কেটে নিয়ে আসেন বলে জানান।

স্বাধীনতা পরবর্তী বঞ্চিত জনপদের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ ও দু’উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের যাতায়াতের জন্য একমাত্র রাস্তাটি নির্মাণ করলেও তার রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে মাত্র কয়েক বছরেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত সড়কটির বেহাল অবস্থার জন্য সড়ক শোষকদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের সরকারের সংশ্লিষ্ঠ উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।