ভারতের মিডল আর লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিলেন কাইল জেমিসন

0
298

খুলনাটাইমস স্পোর্টস : উইকেট যেন সবুজের গালিচা। ম্যাচের সকালে হয়েছে এক পশলা বৃষ্টি। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবুও শুরুর তোপ সামলে ভারত পেয়েছিল দৃঢ় ভিত। কিন্তু তাদের মিডল আর লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিলেন কাইল জেমিসন। দীর্ঘদেহী এই পেসারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বিরাট কোহলির দল গুটিয়ে গেল আড়াইশর নিচে। পরে ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখালেন নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনার। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিন শনিবার ৪ উইকেটে ১৯৪ রানের ভালো অবস্থানে থেকেও ভারতের প্রথম ইনিংস থমকে গেছে ২৪২ রানে। টম ল্যাথাম ও টম ব্লান্ডেলের অবিচ্ছিন্ন ৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দিন শেষ করেছে নিউ জিল্যান্ড। ভারতের হয়ে ফিফটি করেছেন তিনজন; পৃথ্বী শ, চেতেশ্বর পুজারা ও হনুমা বিহারি। তিনজনই আউট হয়েছেন পঞ্চাশের ঘরে। অধিনায়ক কোহলিসহ বাকিদের কেউ ভালো করতে পারেননি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা জেমিসন প্রথমবারের মতো নিয়েছেন ৫ উইকেট। আগের টেস্টে অভিষেক ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী পেসার। নতুন বলে নিউ জিল্যান্ডের প্রধান দুই অস্ত্র টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের শিকার ২টি করে। হ্যাগলি ওভালে সকালে হওয়া বৃষ্টিতে খেলা শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের পৌনে এক ঘণ্টা পরে। নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উলিয়ামসন টস জিতে অনুমিতভাবেই নেন ফিল্ডিং। ছুটি কাটিয়ে ফেরা নিল ওয়াগনারকে জায়গা দিতে বাইরে যেতে হয় বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলকে। কিউইরা নামে পাঁচ পেসার নিয়ে। অন্যদিকে ভারতের পেসার ইশান্ত শর্মার চোটে সুযোগ পান উমেশ যাদব। ব্যাটিং ভাবনায় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয় বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাকে। ব্যাটিংয়ে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পৃথ্বী শ ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। সিরিজে প্রথমবার ভারতের উদ্বোধনী জুটি স্পর্শ করে ত্রিশ। এরপরই বিদায় নেন মায়াঙ্ক। বোল্টের ফুল লেংথ বল লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ পৃথ্বী খেলেন চোখ ধাঁধানো কিছু শট। ৮টি চার ও একটি ছক্কায় তিনি ফিফটি পূর্ণ করেন ৬১ বলে। পরের ওভারেই তার ৫৪ রানের ইনিংস শেষ হয় স্লিপে টম ল্যাথামের দুর্দান্ত এক ক্যাচে। তাকে ফিরিয়েই শিকার ধরা শুরু হয় জেমিসনের। দুই ওপেনারকে হারিয়ে ভারত গিয়েছিল লাঞ্চে। বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই সফরকারীরা হারায় কোহলিকে। সাউদির বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হওয়া ভারত অধিনায়ক টানা তিন ইনিংসে ফেরেন বিশের আগে। সাউদি পরে ফেরান থিতু হওয়া অজিঙ্কা রাহানেকেও। আউট-সুইঙ্গার বল ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তখন ১১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে ভারত। কিপার বিজে ওয়াটলিং ৯ রানে বিহারির ক্যাচ না ছাড়লে বিপদ আরও বাড়তে পারত। ক্রিজে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা পুজারা পঞ্চম উইকেটে বিহারিকে নিয়ে গড়েন পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি। দুজনের ব্যক্তিগত রানও স্পর্শ করে পঞ্চাশ। পুজারা ফিফটি পূর্ণ করেন ১১৭ বলে, বিহারির লাগে ৬৭ বল। চা-বিরতির আগের ওভারে বিহারির বাজে শটে ভাঙে ৮১ রানের জুটি। ওয়াগনারের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে শরীরের পেছন দিয়ে কিপারকে ক্যাচ দেন ৫৫ রান করা বিহারি। বিরতি থেকে ফেরার পর ধৈর্য হারান পুজারা। জেমিসনের শর্ট বল হুক করার চেষ্টায় ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ১৪০ বলে ৬ চারে তিনি করেন ৫৪ রান। এরপর উইকেট পড়েছে নিয়মিত। নিজের পরপর দুই ওভারে রিশাব পান্ত, উমেশ ও জাদেজাকে ফিরিয়ে জেমিসন পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। ভারতের রান আড়াইশর কাছাকাছি যেতে পারে মোহাম্মদ শামি ও জাসপ্রিত বুমরাহর ২৬ রানের শেষ উইকেট জুটির কল্যাণে। শামির অফ স্টাম্প উপড়ে দিয়ে সফরকারীদের ইনিংস গুটিয়ে দেন বোল্ট। শেষ সেশনে ২৩ ওভার ব্যাটিং করে নিরাপদে কাটিয়ে দেন ল্যাথাম ও ব্লান্ডেল। বুমরাহ, উমেশ, শামি, জাদেজা মিলে টলাতে পারেননি দুই কিউই ওপেনারের মনোযোগ। ৬৫ বলে ২৭ রানে অপরাজিত ল্যাথামের সঙ্গী ব্লান্ডেল খেলছেন ৭৩ বলে ২৯ রান নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৬৩ ওভারে ২৪২ (পৃথ্বী ৫৪, মায়াঙ্ক ৭, পুজারা ৫৪, কোহলি ৩, রাহানে ৭, বিহারি ৫৫, পান্ত ১২, জাদেজা ৯, উমেশ ০, ০, শামি ১৬, বুমরাহ ১০*; সাউদি ১৩-৫-৩৮-২, বোল্ট ১৭-২-৮৯-২, ডি গ্র্যান্ডহোম ৯-২-৩১-০, জেমিসন ১৪-৩-৪৫-৫, ওয়াগনার ১০-২-২৯-১)
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৩ ওভারে ৬৩/০ (ল্যাথাম ২৭*, ব্লান্ডেল ২৯*; বুমরাহ ৭-১-১৯-০, উমেশ ৮-১-২০-০, শামি ৭-১-১৭-০, জাদেজা ১-১-০-০