ভারতীয় হওয়ার পরও সত্যিই আমাদের তাড়িয়ে দেয়া হবে?’: বিজেপি নেতার ঘোষণায় আসাম জুড়ে বিভ্রান্তি, শংকা

0
395

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি-র অন্যতম নীতিনির্ধারক নেতা রাম মাধব আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা নিয়ে সম্প্রতি যে ঘোষণা দেন, তা নিয়ে আসামের বহু মানুষের মনে নতুন করে আশঙ্কা তৈরী হয়েছে।নাগরিক তালিকা চূড়ান্ত করার পর যাদের নাম বাদ যাবে, তাদের দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে বলে রাম মাধব ঘোষণা করেন।নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গেছে, তারা এই ঘোষণার পরে একদিকে যেমন বিতাড়িত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন, অন্যদিকে মনে করছেন নতুন করে তাঁদের ওপরে অত্যাচার না শুরু হয়!

রাম মাধব তার বক্তৃতায় তিনটি ডি-র ভিত্তিতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেছেন – ডিটেক্টশন, ডিলিশান এবং ডিপোর্টেশন। এখন নাগরিক তালিকা নবায়নের যে প্রক্রিয়া চলছে, তাকে তিনি ডিটেক্টশনের পর্যায়ে ফেলছেন। অর্থাৎ প্রক্রিয়া শেষ হলে ওই তালিকায় নাম না থাকা ব্যক্তিদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।তাঁর এই ঘোষণা নিয়ে একদিকে যেমন তৈরী হয়েছে নতুন করে আশঙ্কা, অন্যদিকে তৈরী হয়েছে বিভ্রান্তি।কাগজে রাম মাধবের ওই বক্তব্যের কথা পড়ে তো আমি সত্যিই কনফিউজড, ” বলছিলেন নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়া শিলচরের বাসিন্দা পাপড়ি ভট্টাচার্য। কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে কাউকে আসাম থেকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না। এখন আবার রাম মাধবের মতো বড়ো নেতা বলছেন সবাইকে তাড়ানো হবে। তাঁর মতো নেতা তো নিশ্চই দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কথা বলেই এই ঘোষণা করেছেন,তিনি বলেন।

রাম মাধবঘোষণাটি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা রাম মাধব

তাহলে কি ভারতীয় হওয়া স্বত্ত্বেও, ভারতের পাসপোর্ট হোল্ডার আর সরকারী চাকুরে হওয়া স্বত্ত্বেও সত্যিই আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে? আর সেটা না করা হলেও ডিটেইন করে রাখাও তো হতে পারে! সত্যিই আতঙ্কিত আমি,” বলছিলেন মিসেস ভট্টাচার্য।

একটা সময়ে আসামের বাংলাভাষী হিন্দু-মুসলমান মনে করতেন যে নাগরিক তালিকা নবায়ন হওয়ার পরে তাঁদের দিকে যেভাবে মাতৃভাষার কারণে অবৈধ বাংলাদেশী বলে আঙ্গুল তোলা হত, সেটা বন্ধ হবে।কিন্তু নাগরিক তালিকা বা এনআরসি প্রক্রিয়া যখন প্রায় শেষের দিকে, ততই অনেকের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে যে এটা আসলে বাংলাভাষী মানুষের ওপরে দীর্ঘমেয়াদে অত্যাচার নামিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া নয় তো?

এনআরসি-র প্রক্রিয়াটাকে এতদিন ধরে যেভাবে একটা ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া বলে আমাদের বোঝানো হয়েছে, এখন তো দেখা যাচ্ছে কাজটা তো সেভাবে হচ্ছে না,” বলছিলেন শাহজাহান আলি আহমেদ। সুপ্রীম কোর্ট বলছে তারা গোটা প্রক্রিয়ার ওপরে নজরদারি চালাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তো কোনও নজরদারি দেখতে পাচ্ছি না। শুধুমাত্র এনআরসি-র ভারপ্রাপ্ত একজন অফিসারের ওপরেই আদালত ভরসা করছেন।এটা আসামের সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিক যেসব বাংলাভাষী মানুষ, তাদের ওপরে অত্যাচার চালানোর একটা পূর্বপরিকল্পিত প্রক্রিয়া নয় তো,মিঃ আহমেদ প্রশ্ন তোলেন।