ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়ের উৎস কোথায়?

0
555
royal family-money-rtvonline

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

অধিকাংশ মানুষই নিজেদের দৈনন্দিন চাকরি থেকে অর্থ উপার্জন করে থাকে। কিন্তু ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের অধিকাংশ মানুষদের সাথে মিলালে হবে না। ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং তার পরিবারের সদস্যদের আয়ের বিভিন্ন উৎস থাকলেও, যা মনে করছেন তা কিন্তু নয়। তারা সেই অর্থে ততোটা ধনী নন। খবর সিএনএন এর।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায় রাণী এলিজাবেথের ব্যাক্তিগত সম্পদ ৩৬০ মিলিয়ন পাউন্ড (৪৭০ মিলিয়ন ডলার)। যদিও ইংল্যান্ডে ব্রিটেনের রাণীর চেয়ে আরও ৩২০ জন ধনী ব্যক্তি আছেন। চলুন আজ সিএনএন এর এই বিশেষ প্রতিবেদনে দেখব ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের আয়ের উৎস কোথায়।

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

রাণীর তিনটি প্রধান আয়ের উৎস রয়েছে। একটি হচ্ছে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বাৎসরিক হারে পাওয়া সোভরেইন গ্র্যান্ট, ডুচি অব ল্যাংকেস্টার এস্টেট এবং তার ব্যাক্তিগত বিভিন্ন সম্পত্তি ও বিনিয়োগ। সোভরেইন গ্র্যান্টের মাধ্যমে একটি এক্সপেন্স অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ রাজপ্রসাদের যাবতীয় খরচ সামলায়।

এই গ্র্যান্টের আওতায় রাণী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৪২ দশমিক আট মিলিয়ন পাউন্ড করমুক্ত অর্থ পেয়েছিলেন। গেলো অর্থবছরে যে খরচ বেড়ে দাড়িয়েছিল ৭৬ দশমিক এক মিলিয়ন পাউন্ড। বাকিংহাম প্যালেসের সংস্কারের জন্য খরচ বেড়ে গিয়েছিল বলে জানা যায়।

রাণীর আয়ের আরেকটি বিরাট উৎস হলো দ্যা ডুচি অব ল্যাংকেস্টার। এটি ১২৬৫ সাল থেকে চলে আসা একটি প্রাইভেট বাণিজ্যিক, কৃষিজাত ও আবাসিক সম্পত্তি। বছরে এই সম্পত্তি থেকে গড়ে আয় হয় ১৯ দশমিক দুই মিলিয়ন পাউন্ড। এই অর্থ দিয়ে রাণী ব্যক্তিগত খরচ সামলান।

এটি ছাড়াও রাণীর নিজস্ব ‍কিছু সম্পত্তিও আছে যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসল এবং পূর্ব ইংল্যান্ডের সান্দ্রিগ্রাম এস্টেট। এই দুটি সম্পত্তিই রাণী উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তার পিতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে।

এ সব সম্পত্তি ছাড়াও রাণীর সংগ্রহশালায় আছে বহুমূল্য বিরল ডাকটিকেটের সংগ্রহ, এবং বিশ্বের খ্যাতনামা শিল্পীদের শিল্পকর্মের মূল কপি।

রাণীর স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ বলে খ্যাত প্রিন্স ফিলিপ বাৎসরিক ৩৫ লাখ নয় হাজার পাউন্ডের অনুদান পেয়ে থাকেন। তিনি গেলো বছর ষাট বছরের সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

প্রিন্স চার্লস

প্রিন্স অব ওয়ালস বলে পরিচিতি প্রিন্স চার্লস এবং ডাচেস অব কর্নওয়াল বলে পরিচিত তার স্ত্রী ক্যামিলাও অর্থের জন্য জনগণের টাকা এবং নিজেদের ব্যাক্তিগত সম্পত্তির আয়ের উপর নির্ভর করেন।

তাদের আয়ের ৯০ শতাংশই আসে ১৩৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ডুচি অব কর্নওয়াল’ নামক একটি প্রাইভেট এস্টেট থেকে। এই প্রাইভেট এস্টেটটি ইংল্যান্ডের ওয়ালস এবং কর্নওয়েলের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় সম্পত্তি দেখাশুনাসহ বেশ কয়েকটি দ্বীপ এবং কটেজ ভাড়া দিয়ে থাকে।

অতি সম্প্রতি এই যুগল এই এস্টেট থেকে বছরে ২০ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ড আয় করেছেন। এটা ছাড়াও এই যুগল রাণীর সোভরেইন গ্র্যান্ট থেকে বাৎসরিক এক দশমিক তিন মিলিয়ন পাউন্ড পেয়ে থাকেন। এই অর্থ ছাড়াও ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকেও বছরে চার লাখ একষট্টি হাজার পাউন্ড অর্থ অনুদান হিসেবে পান।

তাদের আয়ের অধিকাংশই খরচ হয় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কাজ ও ভ্রমণে। তবে তাদের আয়ের চারভাগের একভাগই চলে যায় করের পেছনে।

royal family-money-rtvonline

খরচ করার পর উদ্বৃত্ত ছয় দশমিক ছয় মিলিয়ন পাউন্ড যায় প্রিন্স চার্লসের সন্তান, অনানুষ্ঠনিক কেনাকাটা এবং রাজকীয় সেভিংস অ্যাকাউন্টের পেছনে।

আর কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে হতে যাচ্ছে ডায়ানাপুত্র প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের। এই বিয়ের পরও মোটা অংকের অর্থ এই যুগলকে দিতে যাচ্ছেন প্রিন্স চার্লস।

প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি

এছাড়াও প্রিন্স উইলিয়াম ও তার পতœী কেট মিডলটন এবং ‍প্রিন্স হ্যারিও রাণীর পক্ষে কোনও আনুষ্ঠানিক কাজে অংশগ্রহণ করার বিনিময়ে অর্থ নিয়ে থাকেন।

শুধু পিতা প্রিন্স চার্লসের অনুদানের উপরই নয়, প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারি দুই ভাইই তাদের মা প্রিন্সেস ডায়ানার সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে ছিলেন।

তবে রাজপরিবারের বাকি সদস্যরা কীভাবে অর্থ পান সে বিষয়ে গনমাধ্যমের কাছে তেমন বেশি তথ্য নেই। প্রিন্স চার্লস ছাড়াও রাণী এলিজাবেথের আরও তিন সন্তান আছেন। এবং সেই তিন সন্তানেরও নাতি পুতি আছে।

রাজপরিবারের বাকি সদস্য

রাণীর সবচেয়ে ছোট দুই ছেলে ডিউক অব ইয়র্ক বলে পরিচিত এন্ড্রু এবং আর্ল অব ওয়েসেক্স বলে পরিচিত এডওয়ার্ড রাজপরিবারের ফুলটাইম কাজ করে থাকেন। তাদের কাজের মধ্যে আছে তাদের মায়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা। রাণী এ কাজের জন্য তার এই দ্ইু সন্তানকে বেশ মোটা অংকের অর্থ দিয়ে থাকেন।

রাজপরিবারের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিজেরাই গড়বে এবং অনেক বেশি স্বাধীনচেতা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে সিএনএন এর এই প্রতিবেদনে। তার লক্ষণও এরইমধ্যে দেখা গেছে। এন্ড্রুর দুই মেয়ে প্রিন্সেস বিয়াত্রিস এবং প্রিন্সেস ইউজিন ব্যবসা ও শিল্পজগতে পূর্ণকালীন চাকরি করছেন। যদিও চাকরি থেকে পাওয়া অর্থের বাইরেও তারা তাদের পিতার কাছ থেকে নিয়মিত অর্থসাহায্য পেয়ে থাকেন।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়ের উৎস কোথায়?