ব্যাটে–বলে দুর্দান্ত সাকিব, জিতল হায়দরাবাদ

0
373

স্পোর্টস ডেস্কঃ

সাকিব আল হাসান ৩২ বল খেলে রান করলেন ৩৫, যা দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বল হাতে ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। তাও আবার সাকিবের শিকার হলেন উড়তে থাকা পার্থিব প্যাটেল ও বিরাট কোহলি। বাংলাদেশের এ অলরাউন্ডারের এমন দুর্দান্ত পারফরমেন্সের পর আর না জিতে থাকতে পারে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ! জিতলও তাই। বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ৫ রানের জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে তারা।

সাকিবদের আজকের জয়টা মূলত এসেছে বেঙ্গালুরুর শেষ দিকের চরম ব্যর্থতায়। ১৪৭ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেষ তিন ওভারে বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ছিল ২৫। হাতে ছিল ৫ উইকেট। তাও আবার উইকেটে থিতু হয়ে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে কোলিন ডি গ্রান্ড হোম ও মানদীপ সিং। সেই ম্যাচটিই কিনা জিততে পারল না বেঙ্গালুরু। ১৮ ও ১৯ ওভার মিলিয়ে মাত্র ১৩ রান তুলতে পারায় শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ১২। বাকির খাতায় তখনো ৫ উইকেট। অথচ তারা করতে পারল মাত্র ৬।

এই জয়ে ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফ নিশ্চিত করে ফেলল হায়দরাবাদ। আর সমানসংখ্যক ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে থেকে প্লে অফের দৌড় থেকে প্রায় ছিটকেই গেল বেঙ্গালুরু।

বল হাতে আজ শুরুতেই বেঙ্গালুরু শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। তৃতীয় ওভারে দলীয় ২৪ রান ও ব্যক্তিগত ২০ রানে সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান পার্থিব প্যাটেল। ওয়ান ডাউনে বিরাট কোহলি আসার আগে বেঙ্গালুরুর স্কোরবোর্ডে রান তখন ২.৫ ওভারে ২৪। বেঙ্গালুরুর এই স্কোর ভোজবাজির মতো বদলে যায় কোহলির ব্যাটে। ৫ ওভার শেষে রান ৪৭। অর্থাৎ ১৩ বলে যোগ হয়েছে ২৩ রান। ৭.১ ওভারে সন্দীপ শর্মার বলে দলীয় ৬০ রানে বোহরা ফিরে গেলেও রানের গতি কমেনি। এর মাঝে রশিদের বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে কোহলির ক্যাচ মিস করেন কেন উইলিয়ামসন। ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’—ক্রিকেটের এমন চিরন্তন কথাটি আজ খাটলে শেষ পর্যন্ত আর জয় পাওয়া হতো না হায়দরাবাদের।

৩৩ রানে জীবন পাওয়া সেই কোহলিকেই বেশি আগাতে দিলেন না সাকিব। ৩০ বলে ৩৯ রান করে দশম ওভারে সাকিবের বলে পাঠানের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরে যান কোহলি। পরের ওভারেই ডি ভিলিয়ার্সকে ফেরান রশিদ। দুর্দান্ত এগিয়ে যাওয়া বেঙ্গালুরুর দুই ওভারের মধ্যে ২ উইকেট হারানোতে খেলার রং যায় বদলে। পরের ওভারেই ম্যাচটা আরও নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন সিদ্ধার্থ কুল। তিনি ফিরিয়েছেন মঈন আলীকে। ১১.৪ ওভারে ৫ উইকেটে তখন বেঙ্গালুরুর রান ৮৪।

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুর্দান্ত খেললেন কোলিন ডি গ্রান্ড হোম ও মানদীপ সিং। তাঁদের জুটির ওপর ভর করেই শেষ তিন ওভারে রানের প্রয়োজন মাত্র ২৫। মাত্র বলার কারণ, হাতে তখনো ৫ উইকেট। সব বাজিকরেরাই হয়তো চোখ বন্ধ করে তখন বেঙ্গালুরুর পাশে দাঁড়াবেন। অথচ ১৮ ও ১৯তম ওভারে রান হল মাত্র ১৩। সহজ ম্যাচটা দাঁড়াল কঠিন সমীকরণে। শেষ ওভারে রানের প্রয়োজন ১২, হলো মাত্র ৬। ২১ রান করে অপরাজিত থাকলেন মানদীপ। আর ৩৩ রান করে শেষ বলেই আউট হয়েছেন গ্রান্ড হোম।

এর আগে সাকিব ও কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটের ওপর ভর করেই ১৪৬ রান করে হায়দরাবাদ। ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তোলার দায়িত্বটা বেশ ভালোভাবেই পালন করেছেন এই যুগল। সাকিব ও উইলিয়ামসন যথাক্রমে রান করেছেন ৩৫ ও ৫৬।

শেখর ধাওয়ানের সঙ্গে ১৫ বলে ১৫ রানের স্লথ উদ্বোধনী জুটি গড়ে অ্যালেক্স হেলস আউট হয়ে যান মাত্র ৫ রানে। ধাওয়ানও টিকতে পারেননি। ১৯ বলে মাত্র ১৩ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের শিকার হন এই ওপেনার। এমন বিপদের সময় ৭ বল খেলে মাত্র ৫ রান করেন মনীশ পান্ডে। উইলিয়ামসন একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কেবল সতীর্থদের এই আসা-যাওয়া দেখছিলেন। এমন মুহূর্তে ব্যাটিংয়ে এসে অধিনায়ককে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন সাকিব। তারা ৬৪ রানের জুটি গড়েন। ৩৯ বলে ৫ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ৫৬ রান করে উইলিয়ামসন উমেশ যাদবের শিকার হন। এরপর পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সাকিব। ইনিংসের ১৮তম ওভারে এসে টিম সাউদিকে সুইপ করতে গিয়ে উমেশের হাতে ধরা পড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৩২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করেন তিনি। বেঙ্গালুরুর পক্ষে ২৫ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ।