বৈধতা না থাকলেও সারাদেশে দাপটের সঙ্গে চলছে ২০ লাখ এর অধিক

0
177

ঢাকা অফিস, খুলনাটাইমস:
মোটরযান আইন অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক অবৈধ। রাস্তায় চলাচলে এর বৈধতা নেই, এটি একটি অযান্ত্রিক বাহন। তবে পুরোদস্তর যান্ত্রিক যানবাহন হিসেবে সারাদেশে বর্তমান ২০ লাখ এর অধিক ইজিবাইক চলাচল করছে। রাজধানী ঢাকার অলিগলি সহ আশে পাশেও চলাচল করছে দাপটের সঙ্গে।
এই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক এর দৌরাত্য কোনভাবেই কমছে না। ব্যাটারিচালিত এই গাড়িগুলো কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সুপারিশকৃত বা প্রত্যাশিতভাবে প্রস্তুত নয়। উপরুন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান যেমন: প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় ও বিআরটিএ কর্তৃক পরীক্ষিত ও অনুমোদিত নয়।
অনুমোদনবিহীন এই অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ হিসাবে আমদানী করে স্থানীয় বিভিন্ন গ্যারেজে সংযোজন করে বিক্রি করা হচ্ছে এবং পরিনত হচ্ছে একটি বিপদজনক বাহনে। খুচরা যন্ত্রাংশ হিসাবে আমদানী করায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব ।
এই অনিরাপদ গাড়িগুলোতে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় যাত্রীদের এবং যত্রতত্র দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়। নির্মাণ ত্রুটির কারনে বিশেষ করে মহিলারা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। মহিলাদের ওড়না চলন্ত ইজিবাইকের মোটরে আটকে যায় এতে করে ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে যায়, মেরুদন্ডে আঘাত লাগে, পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়, শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে যায় এবং কেউ কেউ প্রাণ হারায়। অনেকে সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পূনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) দীর্ঘ দিন যাবত থেরাপি নেয়।
সড়ক ও মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা সৃষ্টির জন্য হাইকোর্ট এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের আধিক্যে শহরের যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়কগুলো দখল করে রাখে ইজিবাইক। এর ফলে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয় এবং সকলে ভোগান্তির শিকার হয়। মহাসড়ক, আন্ত:জেলা সড়ক ও জেলা শহরের মধ্যে যত্রতত্র ইজিবাইক চলাচলের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে।
সাধারনত এ ধরনের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকগুলোর ড্রাইভারদের কোন ধরনের প্রশিক্ষন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু- কিশোররা ইজিবাইকের ড্রাইভার।
পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব অবৈজ্ঞানিক ইজিবাইক। সঠিকভাবে এগুলোর ব্যাটারি চার্জ করা হয় না, চলে চোরাই বিদ্যুতের চার্জ দিয়ে, ফলে সরকারের বাজেটে একটা বিরূপ প্রভাব পড়ে।
শহর ও শহরতলীতে কয়েক হাজার অবৈধ ইজিবাইক গ্যারেজ রয়েছে, এই গ্যারেজ গুলিতে প্রতি মাসে কয়েক লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ চুরি হয়ে থাকে, এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার। এ জন্য এগুলোবন্ধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ।
প্রতিটি ইজিবাইকে ১২ ভোল্টের তিনটি হেভি ব্যাটারি থাকে এবং প্রতিদিন দ’ুবার করে চার্জ দিতে হয়। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়।
পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক সনাতনি লিড এসিডের ব্যাটারি রিসাইকেল সেন্টার নেই। ফলে
ব্যবহার শেষে ব্যাটারিগুলো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়, যা পরিবেশ ও মানবজীবনের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে গ্রামীন অর্থনীতিতে ও বেকারত্ব কমাতে ইজিবাইক এর ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক আছে। তাদের অভিমত দেশে পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চালু আছে। দেশ এখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এ অবস্থায় উন্নতমানের যানবাহন চালুর ব্যবস্থা করা উচিত। বর্তমানে এর রেজিষ্ট্রেশন বন্ধ রাখা হয়েছে, এটা চালু হওয়া উচিত।
অপরদিকে যারা এই ইজিবাইক ক্রয় করছেন তারা বিভিন্ন ভাবে হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন এবং আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই গাড়িগুলির জন্য নেই কোন বিক্রয়োত্তর সেবা, কোন ওয়ারেন্টি ও কোন ওয়ার্কশপ নেই। শো-রুম থেকে বের হলেই সব দায় দায়িত্ব ক্রেতার। খুচরা যন্ত্রাংশেরও অভাব রয়েছে। ধার-দেনা করে ক্রয়কৃত ইজিবাইক এখন গলার কাটা