বেদেরা কী আজও সমাজের অবহেলীত জনগোষ্ঠী, সমাজে এঁদের পরিচয় কী?

0
146

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা জেলার আশে পাশের থানার উপজেলার বিস্তৃন্ন এলাকা জুড়ে প্রাই নজরে পড়ার মতন কুঁড়ি থেকে পঁচিশটি স্থানে বেদে জনগোষ্ঠীর বসবাস লক্ষ্য করা গেলেও। এই বেদে জনগোষ্ঠীরা কোন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে বসবাস করতে পারেনা। কারণ এদের নাই কোন পৈত্রিক ভিটা বাড়ি নাই কোন নিজস্ব সম্পত্তি। এঁরা সমাজের কাছে ভবঘুরে জনগোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত। বেদেরা সাধারণত ভেঁড়ি বাঁধের উপর, খোলা মাঠে ও নৌকার মধ্যে পরিবার নিয়ে জীবযাপন করে। বেদেরা একই এলাকাই দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করতে অভ্যস্থ না। খুলনা জেলার যে সকল এলাকায় এঁদের সংঘবদ্ধভাবে দেখা যায়। সেই সব এলাকা গুলি হচ্ছে, নিজ খামার, বটিয়াঘাট, নগরীর সাত নম্বর ঘাট এলাকা, চালনা, দাকোপ, দীঘলিয়া, তেরখাদা, ফুলতলা সহ রূপসা উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকাতে খোলা মাঠে নদীর পাড়ে তাবু টাঙ্গিয়ে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবেলা করে পরিবার নিয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। বৈচিত্রময় এঁদের জীবন জীবিকা, মেয়ে বেদেরা নাকে নোলোক কোমরে বিছা বেঁধে এঁটে সেটে শাড়ী পড়ে যদি দুগ্ধজাতক শিশু থাকে শাড়ীর আঁচলে ঝুলা বানিয়ে বুকে ঝুঁলি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যায়। এঁরা সাধারণত জীবিকার জন্য বিভিন্ন ধরণের কবীরাজী টোটকা নিয়ে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে কোমড়ের বাঁতের ব্যথার চুঙ্গা লাগিয়ে বাঁতের বিশ তোলা, দাঁতে পোকা ঝাঁড়া, কট মাছে দাঁত গেটে কড়ি গাছ গাছ গাছরার ছাল বাঁকল নিয়ে বিক্রি করা এঁদের পেশা। অন্যদিকে পুরুষ বেদেরা বিভিন্ন ধরণের গ্রাম্য প্রসাধনী যেমন, আলতা, ¯েœা, পাউডার, কাঁচের চুরি, চুলের ফিতা, নাকের নোলোক ইত্যাদি সামগ্রী নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করে বেড়ায়। বেদে জনগোষ্ঠীদের এক সময় পরিচয় ছিল সাপুড়িয়া হিসাবে গ্রামের যে সকল স্থানে হাঁট বাজার বসত সেই সব এলাকা গুলিতে সাপের ঝাঁকা নামিয়ে ডুক ডুগি বাঁজিয়ে হাঁটের মানুষদের আকৃষ্ট করে সাপের খেলো দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতো তাছাড়া ওঝা গীরির কাজও করতো বেদেরা। এখন আধুনিক ইন্টারনেট ফেসবুকের যুগ পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ঔষধ আবিষ্কারের কারণে ওঝাদেরও এখন নিষ্প্রয়োজন। সেই ক্ষেত্রে বেদে জনগোষ্ঠীদের সরকার স্বীকৃতি স্বরূপ আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে সামাজিক পর্যায়ে সাধারণ জনগণদের কাতারে আনার কথা ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত বেদেদের হয়নি কনো নির্দিষ্ট আবাস স্থান মাথা গোজার ঠাই। এমনকি কোন কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থাও নাই এঁদের। তাছাড়া প্রতিটি বেদে পরিবারে চার পাঁচটা করে সন্তান দেখতে পাওয়া যায়। তবে সকল বেদে শিশু কিশোরদের সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার গ্রহণের সুযোগ থাকলেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি এঁদের অবজ্ঞা করে। বেদের সন্তানদের সামাজিক বিত্তবানদের শিক্ষার্থী ছেলে মেয়েদের একই সারিতে বসে শিক্ষা গ্রহণ করুক অভিভাবক ও পাশাপাশি শিক্ষকরাও সেইটা চায় না। এখন পর্যন্ত বেদে জনগোষ্ঠীদের সঠিক কর্ম সংস্থান ও আবাসস্থান না হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে বেদে মেয়েরা ও কিশোর বয়সী বেদেরা। শহর মুখি হয়ে ছোট ছোট বাক্স হাতে নিয়ে সংঘ বদ্ধভাবে শহরের পথ চারীদের সাপের ভয় দেখিয়ে পয়সা আদায় করতে দেখা যায়। তা ছাড়া কিশোর বয়সী বেদেরা বিভিন্ন কৌশলে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছে। খুলনা নগরীর সাত নম্বর ঘাট এলাকার সংঘবদ্ধ বেদে মেয়েদের দলের খাদিজা, আলেয়া ও নূরী খাতুনের সঙ্গে পথচারীদের সাথে এহেনো আচারণ করার পাশাপাশি মহামারী করোনার কথা জানতে চাইলে বেদে মেয়েরা খুলনা টাইমস কে তাঁদের ভবঘুরে জীবনের কথা দুঃখ প্রকাশ করে জানায় আমাদের বাড়ি নাই ঘর নাই আগের মতন কবিরাজী কাজও নাই। এখন গ্রামের মানুষদের কাছে গাছ গাছরা বাতের ঔষুধের কথা কইলে তাঁরা আমাগো দূর দূর করে বাড়ি থেকে বাইর কইরা দেয়। আমাগো বেটাগোও লেইচ ফিতা, ¯েœা, পাউডার কেউ কেনেনা সরকারী ভাবে তো কোন সাহায্য পাইনা। কোন এলাকা বেশী দিন ডেড়া বাইন্ধা থাকলে আশেপাশের মাইনষেরা আইসে আমাগোর ডেড়া উঠাইয়া দেয়। যাঁর কারণে মনে হয় আমরা বেদেরা সমাজের কাছে বোঝা। আমাগো কোন মানুষেরা বাড়িতে কাম কাইজ করতেও রাহেনা। তাই বাধ্য হইয়া পেটের দায়ে পোলাপাইনগো খাওয়াইয়া বাঁচানোর লাইগা আপনাগো মতন সাহেবগো কাছে আইসা হাতে পায় ধইরা টাকা রোজগার কইরা বাজার সদাই করে ডেড়ায় ফিরা যাই। ততক্ষণ আমাগো পোলাপানইরা সারাদিন না খাইয়া আমাগো পানে চাইয়া থাকে। আর করোনার কথা কন আমাগো জীবনডাইতো মহামারী, দুর্যোগ আর শেয়াল, কুকুরের সাথে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস। আমাগো রোগ বালাই হইলেও কোন হাসপাতালে ভর্তি নেয় না। তাই আপনি ভেবে দেখেন আমরা কত অসহায়, দুঃখ বেদনা আমাদের নিত্য দিনের সাথী। আমাগো কোন উৎসব নাই, সাদও নাই বলে বেদে জনগোষ্ঠীরা আজও সমাজে অবহেলিত ও বঞ্চিত।