বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে জোর করে ধর্মান্তরের অভিযোগ

0
430

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ফুসলিয়ে ধর্মান্তরের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার দুপুরে নগরীর ফরিদ মোল্লার মোড় এলাকায় মেয়েটিকে তার বাড়ি থেকে পুলিশের সহায়তায় মানবাধিকার কর্মীরা নেয়ার চেষ্টায় ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। এর আগে গত শনিবার সকালে গল্লামারী পুলিশ বক্সের সামনে থেকে নিখোঁজ মেয়ে মোবাশ্বিরা ফেরদৌসি মুক্তা (২৮)-কে উদ্ধার করে তার পরিবার। চট্টগ্রামের এশিয়ান ওমেন্স ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নকালে ‘বর্ণমালা’ নামের একটি সংগঠনের প্ররোচনায় চারপারা কোরআনের হাফেজ মোবাশ্বিরা ফেরদৌসি মুক্তাকে ধর্মান্তর করে নাম দেয়া হয় সরস্বতী সিন্ধু নিষাদ। ভুক্তভোগী ও পরিবারের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মুক্তার মা বটিয়াঘাটা গার্ল কলেজের প্রভাষক ফাতেমা-তুজ-জোহরা জানান, “এইচএসসি পাশের পর চট্টগ্রামের এশিয়ান ওমেন্স ইউনিভার্সিটিতে ‘ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি’ বিষয়ে অনার্সে ভর্তি করে চলে আসি আমি। কিছুদিন পর অসৎ সঙ্গে মিশে সাবজেক্ট পরিবর্তন করে ‘বাংলা’য় ভর্তি হয় সে, যা আমাদের অজানা ছিল। তবে মুক্তার অসংলগ্ন কথা-বার্তায় বুঝতে পারি তার মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি। সেখান থেকে তাকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে আসার পর ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এস এম ফরিদুজ্জামানকে দেখানো হয়। চিকিৎসা শেষ না করেই কিছুটা সুস্থ হয়ে আমাদের অমতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যায় সে। তারপর বছর তিন পর আমাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমার মেয়ে মুক্তা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে। সে ‘বর্ণমালা নামের সংগঠনে যুক্ত হয়ে বোম নাথ নামের একটি ছেলের সাথে ‘লিফটুগেদার’ থাকছে। সেখানে অনেক চেষ্টা করেও তাকে আনতে ব্যর্থ হই আমরা। অসহায় হয়ে খালি হাতে ফিরে আসি আমি। পরে বাড়ির থেকে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে মুক্তাকে উদ্ধার করতে গেলে তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, গত শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে আমি কলেজে যাচ্ছিলাম, এসময় দেখি গল্লামারী পুলিশ বক্সের সামনে আমার মেয়ে মুক্তা একটি ছেলের সাথে। তাকে বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করলে সে মাদকাসক্ত অবস্থায় আমার সাথে উল্টাপাল্টা ব্যবহার ও অসংলগ্ন কথা-বার্তা বলতে থাকে। একপর্যায়ে গল্লামারী পুলিশ ফাঁড়ির সহায়তায় সোনাডাঙ্গা থানা থেকে মুক্তাকে ধুতি পরা অবস্থায় বাড়ি নিয়ে আসি। বুধবার দুপুরে কতিপয় পুলিশ সদস্য ও মানবাধিকার সংগঠন ‘ব্লাস্ট’র পরিচয়ে মুক্তাকে বাড়ি থেকে নিতে আসে, আমি তাদের কাছে আমার মেয়েকে দেইনি।
বোম নাথের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা গেছে, “বর্ণ নিয়ে কাজ করে বলে নিষাদকে তার পরিবারের লোকজন মৌলবাদী মুসলমানদের সহযোগিতায় বাস থেকে নামিয়ে জোর করে নিয়ে গেছে। আমাকে মেরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে নানান মিথ্যা অভিযোগে। আমি এখন খুলনার খালিশপুর থানায়।”
সোনাডাঙ্গা থানাস্থ বিভাগের একমাত্র ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ এস আই ফারজানা ববি বললেন, মানবাধিকার সংগঠন “ব্লাস্ট” মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিল, বয়সপ্রাপ্ত মেয়েকে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে! সে মর্মে আমরা গিয়েছিলাম। তবে ওরা বাড়ির গেট না খোলায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে ফিরে এসেছি।” এর বাইরে আর কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।
ব্লাস্ট খুলনার লিগ্যাল এইডের সদস্য এড. ফাতেমা খন্দকার রিমা বলেন, “ওই মেয়েটি ফোন করে ব্লাস্টেও নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে জানিয়েছিল তার পরিবার তাকে জোর করে ধরে আটকে রেখেছে। তাই প্রধান অফিসের নির্দেশে তাকে উদ্ধারে গিয়েছিলাম। যতদূর জেনেছি, মেয়েটি চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছে। সে বোম নাথ সরকার নামের একটি ছেলের সাথে ইউটিবের ‘লী’ এবং ‘ত্রিশূল’ নামের চ্যানেলের জন্য শর্টফিল্ম তৈরি করে। ওরা কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না। বোম নাথ সরকারও আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছে।”
মুঠোফোনে বোম নাথ সরকার জানান, “আমরা ইউটিউবের লী ও ত্রিশূল নামের দু’টি চ্যানেলে কাজ করি। এখানে ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন জায়গা নেই। বয়সপ্রাপ্ত ও শিক্ষিত একটি মেয়েকে কেন আটকে রাখা হবে বলুন? ওকে যদি জোর করে ধর্মান্ততর করে থাকি তাহলে এখন ওরা তাকে মুসলমান করে নিক।”