বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে সরকারি হিসাবে পড়ে থাকা অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ

0
383

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে অনেক টাকা পড়ে রয়েছে। সরকার ওসব টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে যেসব দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে হিসাব খোলা হয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তার মধ্যে যেসব হিসাবে কোনো লেনদেন হচ্ছে না বা ভবিষ্যতেও কোনো কাজে লাগার সম্ভাবনা নেই- সেগুলোই তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। ওই অর্থ উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা দেয়া হবে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কাজ শুরু করেছে। এ কাজের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার প্রয়োজনে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করবে। অনেক সময় স্বল্পমেয়াদি কাজের শেষে সংশ্লিষ্ট হিসাবের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। ফলে ওই হিসাবটি আর ব্যবহৃত হয় না। ফলে ওই হিসাবে থাকা অর্থও অলস পড়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের আইন অনুযায়ী কোনো হিসাবে দীর্ঘসময় লেনদেন না হলে ওই হিসাব অকার্যকর করে রাখা হয়। দেশভেদে ৮ থেকে ১০ বছর লেনদেন না হলেই তা অকার্যকর হয়ে যায়। একটি পর্যায়ে ওই হিসাবে থাকা অর্থ সে দেশের সরকারি কোষাগারে চলে যায়। ওসব অর্থ উদ্ধারের জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনে সরকার একটি হিসাবের সন্ধান পেয়েছে। সেখানে সিটি ব্যাংক এন এ’র শাখায় দীঘদিন ধরেবাংলাদেশ সরকারের একটি হিসাবে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ডলার বা ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা পড়ে রয়েছে। ওই হিসাবে কোনো লেনদেন না হওয়ায় প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী হিসাবটি বন্ধ করে ওই অর্থ আমেরিকার সরকারি কোষাগারে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো হিসাবে টানা ১০ বছর লেনদেন না হলে ওই হিসাবকে অকার্যকর ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই হিসাবে থাকা অর্থ জমা করা হয় সরকারি হিসাবে। তবে নিয়ম অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেয়ার আগে গ্রাহককে অফিসিয়ালি তিন দফা নোটিশ দিতে হয়। গ্রাহক কোনো সাড়া না দিলে এই উদ্যোগ কার্যকর হবে। বাংলাদেশেও এ ধরনের আইন রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০০৫ সালের আগস্টে ওয়াশিংটনে ওই হিসাবটি খোলা হয়েছিল। ওই সময়ে আমেরিকা থেকে খাদ্য সহায়তার অর্থ ব্যবহারের জন্যই হিসাবটি খোলা হয়। কিন্তু পরে এর আওতায় কোনো খাদ্য আমদানি করেনি বাংলাদেশ। যে কারণে হিসাবটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। হিসাবটিতে কোনো লেনদেন করা না হলে এটি বন্ধ করে দেয়া হবে- এ মর্মে সম্প্রতি ব্যাংক চিঠি দেয় ওয়াশিংটনে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসকে। তারা বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করে। পরে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করে হিসাবটি বন্ধ করে সেখানে থাকা ৪ লাখ ৮৮ হাজার ডলার বা ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ওই দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে অচিরেই ওয়াশিটন দূতাবাসকে চিঠি দেয়া হবে বলে জানা যায়।
এদিকে সরকারের পক্ষে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বা কোনো মন্ত্রণালয় এ ধরনের হিসাব খোলে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এগুলোর সমুদয় তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে বা বৈদেশিক অনুদান পেতে এ ধরনের বিশেষ হিসাব খুলতে হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এর প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যায়। এ ধরনের হিসাব কোথায় কতটি আছে এবং সেগুলোতে জমা অর্থ সম্পর্কে এখন খোঁজ নেয়া হচ্ছে।