বিএনপি চায় সরকার দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করুক: তথ্যমন্ত্রী

0
394

খুলনাটাইমস: তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি চায় রাষ্ট্র দুর্নীতির সাথে আপোস করুক। কিন্তু রাষ্ট্রের অবস্থান সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স। এজন্য খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনে বিরোধিতা না করতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সরকারের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা মানা সম্ভব নয় বলে জানান হাছান মাহমুদ। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের প্রথম সিনেপ্লেক্স সিলভার স্ক্রিন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এবং বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। খালেদা জিয়ার জামিন বিসয়ে এক প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দ-িত হয়ে কারাগারে আছেন। এতিমখানার জন্য যে টাকা বাইরে থেকে এসেছে, এতিমখানা নির্মাণ না করে সে টাকা তিনি তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন। সে কারণে সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ায় তার শাস্তি হয়েছে। তিনি যখন জামিন চান, এ ধরনের মামলায় রাষ্ট্র যেখানে পক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে জামিনের বিরোধিতা করা এবং সেটি যদি করা না হয় তাহলে তো সেখানে দুর্নীতির সাথে আপোস করা হয়। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে খালেদা জিয়ার কারামুক্তির পথ খুলতে আদালতে জামিন আবেদনের বিরোধিতা না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবিটা করা হচ্ছে তা হল দুর্নীতির সাথে যেন রাষ্ট্রপক্ষ আপোস করে। এটা তো করা সম্ভবপর নয়। শুধু এটুকু বলব খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি একেবারেই আদালতের এখতিয়ার। দুর্নীতির সাথে আপোস বা তাদের আবদার রক্ষা করার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ দুর্নীতির বিরোধিতা করলেও কিংবা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও আদালত যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নানাদিক বিবেচনায় নিতে পারেন। সেটি হচ্ছে আদালতের এখতিয়ার। আদালত কী করবে সেটা কিন্তু আমি বলতে পারব না। খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা কখনও বলেন আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা হবে। আবার বলেন যেন রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা না করে। আবার বলেন যে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। এফডিসিতে নানা অনিয়মের বিষয়ে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। আবার এটিও সত্য যে এফডিসিতে দেখা যাচ্ছেÑকোনো যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলো, কিন্তু সেটি চালানোর মতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। একটি যন্ত্রপাতি কেনার সময় কিছু পার্টস মিসিং থাকায় সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম হয়ে আসছে। এগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এফডিসিতে আগের মতো এসব অনিয়ম চলবে না। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সংকটকাল গেছে, এখন উত্তরণ ঘটছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চলচ্চিত্রের জন্য আগে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হবে ১০ কোটি টাকা। আগে একটি ছবির জন্য সরকার ৬০ লাখ টাকা অনুদান দিত। এখন শর্ত সাপেক্ষে সেটি ৭৫ লাখ টাকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রেক্ষাগৃহ খোলার বিষয়ে যদি মালিকেরা উদ্যোগ নেন সে ক্ষেত্রে তাদের যেন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া যায় সেটি ভাবা হচ্ছে। এর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন প্রেক্ষাগৃহ খোলার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অমিতাভ রেজা এফডিসি কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, সরকার চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর পরিমাণে টাকা বিনিয়োগ করছে। কিন্তু মাঝখানের কিছু ‘চোর-ছ্যাচড়ার’ কারণে আমাদের চলচ্চিত্র এগোচ্ছে না। টাকা মেরে দেওয়া হচ্ছে। আমি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদানের আবেদন করলে দেখি একজনে বলছে পাঁচ লাখ টাকা দেন পেয়ে যাবেন। এখন সরকার নানা জায়গায় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা চাই সিনেমা হলগুলোর দিকেও বিষয়টি আসুক। কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণের ম রমিজউদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ আশিক রহমান। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সহযোগী সম্পাদক কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পত্রিকাটির সম্পাদক রুশো মাহমুদ।