বাহারি ফুলে রঙিন নার্সারি

0
1724

আজিজুর রহমান, খুলনাটাইমস :
পথের ধারের নার্সারিতে ফুটে আছে লাল, হলুদ, বেগুনি, ডালিয়া, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ও কসমসসহ বাহারি রঙের ফুল। এর পাশের ফল ও সবজির গাছগুলোতে ধরে আছে সবুজ পেয়ারা, লেবু, কমলা। শীত এখন জাঁকিয়ে না থাকলেও শীতের ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে পথের ধারের নার্সারিগুলো। চলতি পথে সেদিকে তাকালে মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।

খান-এ-সবুর রোড়ের নূরনগর এলাকায় পথের ধারে নার্সারিগুলোতে ফুটেছে নানান রঙের ফুল। শনিবার ফুলের চারা কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী ফিরোজা খানম। নার্সারি ঘুরে তিনি পছন্দ করলেন ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ ও রজণীগন্ধার চারা। সঙ্গে নিলেন একটি টমেটোর চারা। বলছিলেন, ‘টবে করে এই চারাগুলো রাখা হবে বাসার বারান্দায়। প্রতি শীত মৌসুমে ফুলের গাছ কেনা হয়। বাসার ভেতর বিভিন্ন রঙের ফুল দেখতে বেশ ভালো লাগে।’

শীতের শুরুতে খুলনা নগরীর বিভিন্ন জায়গার নার্সারিগুলো ভরে ওঠে সবুজ আর বাহারি রঙে। বাসা কিংবা অফিসের সৌন্দর্য বাড়াতে অনেকেই আসছেন এই নার্সারিগুলোয়। চলছে বিকিকিনি। চারা তৈরিসহ পরিচর্যার ব্যস্ততা থাকে বিক্রেতাদের।

খুলনার বাংলাদেশ বেতার কার্যালয়ের সামনে পাশাপাশি গড়ে উঠেছে ছোট বড় সাতটি নার্সারি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পলিব্যাগে ও টবে সাজিয়ে রাখা ফুল, ফল ও শীতের সবজির চারায় পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন নার্সারির কর্মীরা। কোনো টবে চলছে নতুন মাটি ভরানোর কাজ। ক্রেতারা এলেই ঘুরে দেখানো হচ্ছে হরেক রকমের গাছের চারা। বাসাবাড়ির বারান্দা আর ছাদ সাজাতে নগরীর নার্সারিগুলো থেকে ফুল-ফলের চারা কিনছেন বৃক্ষপ্রেমীরা।

বিক্রেতারা জানালেন, ফুলের মধ্যে গোলাপ, ডায়ানথাস, রজণীগন্ধা, পিটুনিয়া, চন্দ্রমালিকা, ডালিয়া, সালভিয়ার চাহিদা বেশি। আর সবজি ও ফলের মধ্যে লেবু, টমেটো, কমলা ও পেয়ারার চারা বেশি বিক্রি হয়। ফুলের ছোট চারাগুলো ১৫ থেকে ২৫ টাকা আর বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। সবজি চারা ৮ থেকে ২০ টাকা ও ফলের চারা ১০০ থেকে শুরু। চারাগুলো নার্সারিতেই তৈরি করা হয়। আর চাহিদা বেশি থাকলে চারা আনা হয় যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদাহ, বগুড়া ও ঢাকা থেকে।

খালিশপুর কদমতলা মোড় থেকে আসা মো. সিদ্দীকুর রহমানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সোনালী নার্সারির সামনে। তিনি বললেন, ‘এই নার্সারি থেকে প্রায় ২ হাজার টাকার চারা কিনেছি। কেনার সময় চারার বয়স আর গোড়া দেখে কিনছি। বেশি বয়সী চারার নিচের দিকের পাতাগুলো মরা থাকে। আর গোড়ার মাটি শক্ত থাকলে সেই চারা মজবুত হয়। বহন করার সময় নষ্ট হয় না।’

বিক্রেতাদের দেখা গেল, চারা বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে এর পরিচর্যার বিষয়গুলোও জানাচ্ছেন ক্রেতাদের। ‘সোনালী নার্সারি’র সামনে বৈকালী থেকে আসা শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা নামের এক ক্রেতার কাছে চারা বিক্রি করছিলেন এর স্বত্বাধিকারী সফিকুল ইসলাম। ক্রেতাকে বলছিলেন, রোদ আসে এমন জায়গায় চারা রাখতে হবে। ব্যবহার করতে হবে জৈব অথবা রাসায়নিক সার।

সফিকুল ইসলাম খুলনাটাইমসকে বললেন, শীতকালে নার্সারিগুলোতে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণে আমরাও চেষ্টা করি সব ধরনের ফুলের চারা রাখতে। কারণ, এ সময়টাতে বেচাকেনা একটু জমে ওঠে। তিনি জানালেন, পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে এখন ফেরোম ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করেন অনেকে। নূরনগর ছাড়াও নগরীর, জজ কোর্ট, রূপসা ফেরিঘাট, গল্লামারি সেতু, সরকারি করোনেশন বালিকা বিদ্যালয়, জিরোপয়েন্ট মোড়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খালিশপুর, খান-এ-সবুর সড়কের পাশের ফুটপাতেও অনেক নার্সারি গড়ে উঠেছে। এসব নার্সারিতেও মৌসুমি ফুলের চারার সন্ধানে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।