বার বার নিষেধাজ্ঞার কারণে দৌলতপুর মোকামের কাঁচা পাট রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত

0
370

নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ১০ বছরে তিন বার কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় খুলনার দৌলতপুর মোকাম থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিতে ধ্বস নামে। দৌলতপুর দেশের বৃহত্তম কাঁচা পাট বিক্রি কেন্দ্র। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে কাঁচা পাট রপ্তানিকারকরা বিদেশের বাজার হারিয়েছে। ২০টি দেশের স্থলে এখন আটটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিগত দিনের রপ্তানি বন্ধের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের কাছে মোটা অংকের টাকা ঋণী হয়েছে।
পাট কাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর পর রৌদে শুকিয়ে যে পাট পাওয়া যায় তাকে ‘ধানকাট’ বলা হয়। তোশা জাতের পাটের খারাপ অংশকে ‘বিটিআর’ বলে আর সাদা জাতের পাটের খারাপ অংশ থেকে ‘বিডাব্লিউআর’ বলা হয়। রপ্তানিকারকদের ভাষ্য, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জাতাকলে পড়ে ব্যবসায়ীরা যে লোকশান দিয়েছে সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ২০০৯ সালের ৭ ডিসেম্বর সরকার কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করে। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তোশা জাতের পাটের খারাপ অংশটি রপ্তানি বন্ধ করে বাকি ‘বিডাব্লিউআর’ জাতের পাট রপ্তানির সুযোগ দেয়। ২০১১ সালের ৯ মার্চ সব ধরণের পাট রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর আবারো পাট রপ্তানি বন্ধ হয়। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। গত বছরের ২৮ জানুয়ারি ‘বিটিআর’ ও ‘বিডাব্লিউআর’ জাতের পাট রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল দৌলতপুরের বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। ওই সভায় উল্লেখ করা হয়, যুগযুগ ধরে কাঁচা পাট ব্যবসা স্থিতিশীল ছিল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ২০১০ সালে জাটজাত পণ্য দিয়ে মোড়কজাত করা বাধ্যতামুলক আইন করা হয়। তখন পাটকলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এক মাস কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। পাটকলের চাহিদা মিটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে লাখ লাখ বেল পাট রপ্তানিকারকদের গুদামে মজুদ থাকে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ২৯ মে সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
এই সূত্র মতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে নারায়ণগঞ্জ ও দৌলতপুর থেকে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৯ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করে দেশ ৮৫৯ কোটি টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮ বেল বাঁচা পাট রপ্তানি করে ১৩৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। গত তিন মাসে ভারতে ৮৫ হাজার বেল, পাকিস্তানে ১১ হাজার বেল, চীনে ১৬ হাজার ও নেপালে ১১ হাজার পাট রপ্তানি হয়েছে। বিগত দিনে যেসব দেশ পাট আমদানি করতো দৌলতপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সে পরিমান সরবরাহ না পাওয়ায় তারা এ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।
বিজেএ’র সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী এ্যাসোসিয়েশনের ৫৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বলেন, বারবার কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণেই দেশের কাঁচা পাট ব্যবসায় ধস নামে। ৮০ শতাংশ পাট রপ্তানিকারক ব্যাংকের খেলাপী তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে কাঁচা পাট উৎপাদন হচ্ছে বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ বেল। জুট স্পিনিং মিলগুলোতে প্রয়োজন হয় বার্ষিক ৫০ লাখ বেল। উদ্বৃত্ত পাট রপ্তানিকারকদের গোডাউনে পড়ে থাকে। অথচ: একটি চক্র বার বার সরকারকে ভুল বুঝিয়ে পাট রপ্তানি বন্ধের কারণে রপ্তানিকারকরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তিি বলেন, এ বিষয়টি স্পস্ট করতে প্রধানমন্ত্রী’র কাছে দাবি তুলবো। আশাকরি আগামী দিনগুলোতে কাঁচা পাট রপ্তানি বাণিজ্য চাঙ্গা হবে।