বার্সা-পিএসজি দলবদল–নাটকে নতুন মোড়

0
631

স্পোর্টস ডেস্ক:

এমনিতেই নেইমারকে নিয়ে এই দলবদলের বাজারে বার্সেলোনা ও পিএসজির মধ্যে আগুন লড়াই চলছে। এর মধ্যে বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’র সবচেয়ে প্রতিভাবান কিশোরকে দলে ভিড়িয়ে যেন এ আগুনে আরেকটু ঘি দিল পিএসজি।

গত কয়েক বছর ধরে মাঠের ভেতরের লড়াই ছাড়াও মাঠের বাইরে এক আজব লড়াইয়ে মেতে উঠেছে পিএসজি আর বার্সেলোনা। দলবদলের বাজারে ভালো খেলোয়াড়ের জন্য বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে অলিখিত লড়াই হওয়া নতুন কিছু নয়, কিন্তু গত কয় বছর এই লড়াইটাকেই বার্সেলোনা আর পিএসজি কদর্য রূপ দিয়েছে যেন। সেই কদর্য লড়াইয়ের সর্বশেষ অঙ্ক রচিত হলো বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ একাডেমির সবচেয়ে প্রতিভাবান কিশোর জাভি সিমন্সকে নিয়ে। ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরকে দলে ভিড়িয়েছে পিএসজি।

এখনো পর্যন্ত মূল দলের হয়ে একটা ম্যাচ না খেললেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে জাভি সিমন্সের প্রতিভা সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল ছিল সবাই। বলা হয় লিওনেল মেসির পর লা মাসিয়ার সবচেয়ে প্রতিভাবান কিশোর এই সিমন্স। জাভির নামে নাম, মেসির মতো প্রতিভা, রোনালদিনহোর মতো চুলের ছাঁট— এক কিশোরের মাঝেই নিজেদের তিন কিংবদন্তির ছোঁয়া পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল বার্সেলোনার সমর্থকেরা। পরিকল্পনা ছিল এ মৌসুমে সিমন্সকে বার্সা জুভেনিল (কিশোরদের বয়সভিত্তিক দল) দলের হয়ে খেলিয়ে সামনের মৌসুম থেকে ‘বার্সা বি’ দলে উন্নীত করা হবে। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়?

বার্সার সঙ্গে সিমন্সের চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছিল। চুক্তি বাড়ানোর জন্য বার্সা দুই মাস ধরে দেন-দরবার করলেও সিমন্সের পরিবার ও এজেন্ট মিনো রাইওলা বার্সার প্রস্তাবিত চুক্তিকে যথেষ্ট মনে করেনি। সেই মিনো রাইওলা, যিনি এজেন্ট হিসেবে বেশ সমালোচিত। পল পগবা, মারিও বালোতেল্লি, মার্কো ভেরাত্তি, জিয়ানলুইজি দোনারুমা, রোমেলু লুকাকু, ম্যাথিস ডি লিটের ক্লাব পরিবর্তন করানোর সময়ে আকাশছোঁয়া কমিশন ভোগ করার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। মিনো রাইওলার সাহায্যেই বেশি বেতনের চুক্তির লোভ দেখিয়ে বার্সেলোনা থেকে সিমন্সকে নিয়ে এসেছে পিএসজি। পিএসজির সঙ্গে সিমন্সের চুক্তি হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত।

ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্ট ব্রম থেকে প্রতিভাধর স্ট্রাইকার লুই ব্যারিকে দলে ভিড়িয়েছে বার্সেলোনা, তাদের বয়সভিত্তিক দলে খেলানোর জন্য। এই কিশোরকে চেয়েছিল পিএসজিও। পিএসজি যাতে ব্যারিকে দলে না নিতে পারে, এ জন্য তড়িঘড়ি করে ব্যারিকে দলে নেওয়ার খবরটা প্রকাশ করে দেয় বার্সেলোনা, দলবদলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ট্রান্সফার ফি নির্ধারিত হওয়ার আগেই। ফলে ব্যারিকে দলে নেওয়ার আর কোনো পথই খোলা থাকে না পিএসজির সামনে। বার্সার এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয় ওয়েস্ট ব্রমও। বলা হচ্ছে, ব্যারির দলবদলের ‘প্রতিশোধ স্বরূপ’ বার্সা থেকে সিমন্সকে আকাশছোঁয়া বেতন দিয়ে দলে ভিড়িয়েছে পিএসজি।

দলবদলের বাজারে বার্সা-পিএসজির এই কাদা ছোড়াছুড়ি আজকের নতুন নয়। পিএসজির নতুন মালিক আসার পর বার্সার চোখের সামনে দিয়ে এসি মিলানের ব্রাজিলিয়ান সেন্টারব্যাক থিয়াগো সিলভা আর রোমার ব্রাজিলিয়ান সেন্টারব্যাক মার্কিনহোসকে দলে নিয়েছিল পিএসজি। কার্লেস পুয়োলের অবসরের পর রক্ষণভাগ ঠিকঠাক করার জন্য তখন বার্সার একটা সেন্টারব্যাকের খুব দরকার। পরে সিলভা-মার্কিনহোসের কাউকেই পায়নি বার্সা। এর কয়েক বছর পর পিএসজির ইতালিয়ান মিডফিল্ডার, ‘ইতালিয়ান জাভি’ নামে খ্যাত মার্কো ভেরাত্তিকে দলে নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল বার্সা। পিএসজিকে না জানিয়েই খেলোয়াড়ের সঙ্গে বেতন-ভাতা নিয়ে আলোচনা করা শুরু করে দিয়েছিল বার্সেলোনার বোর্ড। পিএসজি খবর পেয়ে উল্টো নেইমারকে বার্সা থেকে বিশ্বরেকর্ড দামে কিনে নিয়ে আসে!

কিছুদিন আগে পিএসজির শত চেষ্টা বিফল করে দিয়ে আয়াক্স থেকে মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে দলে নিয়ে আসে বার্সেলোনা। সিমন্স-ব্যারির ঘটনা দুটি বার্সা-পিএসজির বোর্ডের মধ্যে তিক্ততাই বাড়াল শুধু।

এখন দেখার বিষয়, এই তিক্ততাটা আবার নেইমারের ফেরত আসার রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না। পিএসজি থেকে বার্সায় আসার জন্য নেইমার অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যে!