বাগেরহাটে প্রায় অর্ধলক্ষ্য কাঁচা ঘর-বাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত, বিধ্বস্থ আমনসহ শীত কালীন সবজির ক্ষেত

0
359

বাগেরহাট প্রতিনিধি;
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের তা-বে বাগেরহাটে প্রায় অর্ধলক্ষ্য অধাপাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেঙ্গেছে প্রয় সাড়ে ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, বিধ্বস্থ হয়েছে ৩৫ হাজার ৫২৯ হেক্টর আমন ফসল ও শীতকালীন সবজীর ক্ষেত। ভেঁসে গেছে সাত হাজার ২৩৪টি মৎস্য ঘের । ভেঙে পড়েছে অর্ধ-শতাধিক পল্লিবিদ্যুতের খুঁটি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন। গাছ পড়ে জেলায় দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঝড়ের পূর্বাভাশেই শনিবার মধ্য রাত থেকে পিডিবিও পল্লিবিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলো জেলা শহরসহ উপজেলা গুলোতে। তবে জেলা শহর ছাড়া উপজেলা গুলিতে দুই পার হলেও এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনাই বিদ্যুৎ বিভাগ।
ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে গাছ পড়ে নিহতদের মধ্যে ফকিরহাট উপজেলার মাসুম শেখের স্ত্রী হিরা বেগম অপরজন রামপাল উপজেলার বাবুল শেখের মেয়ে সামিয়া খাতুন।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, বিধ্বস্ত বাড়িঘর ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের ভিত্তিতে জেলার ৭৫টি ইউয়িনের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়নকে দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব জেলার ১ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বলা হয়েছে। মৃত দুইজনের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।
বুলবুলের প্রভাবে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেকের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। ভেসে গেছে ১০ সহস্রাধিক মৎস্য ঘের।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বাংলানিউজকে বলেন, বুলবুলের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। তবে প্রাণহানির হাত থেকে রক্ষা পেলেও বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে আমার এলাকার মানুষের।
কৃষি অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক দীপক কুমার বলেন, বাগেরহাটে ৩৫ হাজার ৫২৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ হাজার ৮০৩ হেক্টর রোপা আমন, ২ হাজার ৩৯৫ হেক্টর সবজি, ৫৪০ হেক্টর পান, ৫৭০ হেক্টর খেসারি ডাল, ৭০ হেক্টর কলা, ৯৫ হেক্টর আখ, ৩৬ হেক্টর মরিচ এবং ২০ হেক্টর সরিষার ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাত হাজার ২৩৪টি মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মাছ চাষিদের প্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ঘের ও টাকার পরিমাণ আরও বেশি। শুধু মোরেলগঞ্জে পাঁচ হাজারের অধিক মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বাগেরহাটের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান খান বলেন, বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৭০টি পোল ভেঙে পড়েছে। নয়টি উপজেলার বেশিরভাগ অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতে আমাদের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান খান বলেন, বুলবুলের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৮ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, বাগেরহাটে এ পর্যন্ত্য ৪৪ হাজার ৫৬৩টি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ী পাওয়া গেছে। এছাড়া বেশকিছু ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহত দুই পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।