বাগেরহাটে ছিনতাইকালে জনতার হাতে ধরা পুলিশ সদস্যকে ছেড়ে দিয়েছে থানার ওসি

0
492

আজাদুল হক, বাগেরহাট:
বাগেরহাটের ফকিরহাটে আব্দুর রব শেখ নামে এক মাছ ব্যবসায়ির কাছ থেকে টাকা ছিনতাইকালে স্থানীয়রা এক পুলিশ সদস্যকে ধরে গনপিটুনী দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে খুলনা-মংলা মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার যুগীখালী সেতুর পাশে এই ঘটনা ঘটে।
তবে পুলিশ বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করে জনতার হাতে ধরা পড়া ছিনতাইকারি পুলিশ কনষ্টেবল শাহনেওয়াজকে ছেড়ে দিয়েছে। সে পিরোজপুর জেলা পুলিশের সদস্য এবং পুলিশ লাইনে বর্তমানে কর্মরত। তার বাড়ী খুলনার রুপসা উপজেলার লবনচরা এলাকায়।
প্রায় চার মাস আগে এই শাহনেওয়াজ ফকিরহাট উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া এলাকায় টাকা ছিনতাইকালে ধরা পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। শাহনেওয়াজের সাথে থাকা অপরজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
মাছ ব্যবসায়ি আব্দুর রব শেখ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামের আলী আকবর শেখের ছেলে। ছিনতাইয়ের শিকার মাছ ব্যবসায়ি আব্দুর রব শেখের সাথে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তিনি কোন কথাই বলতে রাজি হননি।
প্রর্ত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামের আলী আকবর শেখের ছেলে মাছ ব্যবসায়ি আব্দুর রব শেখ কাটাখালী থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় একটি মটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে মাছ ব্যবসায়ি আব্দুর রব শেখের পথরোধ করে তার কাছে মাদকদ্রব্য রয়েছে দাবি করে তার দেহ তল্লাসি শুরু করেন। দেহ তল্লাসি করে রবের কাছে মাদক না পেয়ে ওই দুই ব্যক্তি তার কাছে থাকা ১৯ হাজার ৫০০ টাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় আব্দুর রর ছিনতাইকারি ছিনতাইকারি বলে ডাক-চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় বস্তির শতাধিক নারী পুরুষ ছুটে এসে একজনকে ধরে ফেলে গনপিটুনী দেয়। এ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে দূরে দাড়িয়ে থাকা তার অপর সহযোগি টাকা নিয়ে দ্রুত খুলনার রুপসার দিকে পালিয়ে যায়। পরে জনতার হাতে ধরা পড়া ওই ব্যক্তিকে কাটাখালী হাইওয়ে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে কাটাখালী হাইওয়ে পুলিশ তাকে ফকিরহাট থানায় হস্তান্তর করে।
ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে কাটাখালী হাইওয়ে থানার এসআই জামাল শেখ বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে স্থানীয় লোকজন ছিনতাইকারি ধরেছে বলে হাইওয়ে পুলিশে খবর দেয়। আমরা সেখানে গিয়ে শাহনেওয়াজ নামে একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। স্থানীয়দের অভিযোগ আব্দুর রব শেখ নামে এক মাছ ব্যবসায়ির কাছ থেকে দুই ব্যক্তি ১৯ হাজারের বেশি টাকা ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ শাহনেওয়াজকে ধরে ফেলে এবং অপরজন আগেই রবের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া টাকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ফকিরহাট থানার এসআই স্বপন শহনেওয়াজকে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহিদ শেখ সাংবাদিকদের বলেন, আপনি যা জানতে চেয়েছেন তার সবই ঠিক আছে শুধুমাত্র ভুল বোঝাবুঝি। স্থানীয় ফকিরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী ইয়াছিনসহ এখানকার কর্মরত সাংবাদিকরা থেকে বিষয়টি মিটমাট করে দিয়েছেন। মাছ ব্যবসায়ি আব্দুর রবের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিল সেই টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি খুবই মানবিক। আমি শাহনেওয়াজকে ছেড়েও দিয়েছি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফকিরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী ইয়াছিন বলেন, আমি কোন মীমাংসায় ছিলাম না। তাছাড়া আমি তো মীমাংসার অথরিটি নই। আমরা সংবাদকর্মীরা খবর পেয়ে থানায় যাই। সেখানে যেয়ে শুনি আব্দুর রব নামে যে মাছ ব্যবসায়ির টাকা ছিনতাই হয়েছে তিনি পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেননি। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।
জনতার হাতে ধরা পড়া পুলিশ সদস্য শাহনেওয়াজকে ছেড়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, যে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ির টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#