বাগেরহাটের শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই লবনাক্ত উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট

0
264

বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই লবনাক্ত উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানীর সংকট তীব্রতর থেকে তীব্র হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট এই অবস্থা নতুন নয়,দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছে জেলার ছয় উপজেলার মানুষ। তবে এবার শুষ্ক মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এ সংকট যেন প্রকট হয়ে উঠেছে। সাগর সন্নিবেশিত লবন বিধৌত এই অঞ্চলের স্থানীয়দের দাবি, পর্যাপ্ত উৎস না থাকায় তারা সুপেয় পানি পাচ্ছে না এ ছাড়া স্থাপিত পিএসএফ গুলি সংস্কারের পাশাপাশি ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ট্যাংক দিলে পানির সংকট কিছুটা কমবে । এ অবস্থায় অ পরিশোধিত পানী পান করে পানীবাহিত রোগের কারণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
জেলার নয় উপজেলার মধ্যে ছয়টিই শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির তীব্র সংকট থাকে। লবন অধ্যুষিত উপজেলাগুলো হলো সদর, রামপাল, মোংলা,মোড়েলগঞ্জ,শরণখোলা ও কচুয়া। লবণাক্ত এসব উপজেলায় কোন গভীর বা অগভীর নলকূপ নেই। দূর্যোগ পরবর্তি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই নয় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পিএসএফ স্থাপন করলেও তা তদরকি আর অযত্নে ফলে অকেজো হয়ে। ফলে এসব উপজেলার বাসিন্দাদের চাতকের মত পান করতে হচ্ছে বৃষ্টির পানী অথবা অ-পরিশোধিত পুকুরের পানি।
এলাকায় গিয়ে জানা যায় ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে উপজেলাগুলোয় স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্থাপিত আড়াই হাজার পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) এর বেশির ভাগই নষ্ট হওয়ার ফলে সুপেয় পানির সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে।
শরণখোলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের গৃহবধূ শ্যামলী দেবনাথ বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমরা বৃষ্টির জল পান করি। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম এলেই জলের কষ্ট শুরু হয়। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে পুকুরের জল সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়। অনেক সময় ব্যবহার করতে হয় হাজা-মজা পুকুরের জলও। অপরিশোধিত এ জল ব্যবহারের ফলে ছোট-বড় অনেকের-ই পেটের ব্যথা, বমি ও ডায়রিয়ায় ভুগতে হয়। কিন্তু এ জল পান করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।
এছাড়া প্রফুল্ল চন্দ্র, আব্বাস তালুকদারসহ আরো অনেকে বলেন, পিএসএফগুলো অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো সংস্কারের পাশাপাশি ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ট্যাংক দিলে পানির সংকট কিছুটা কমবে।
বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন পুলক দেবনাথ বলেন, শীতের সময় এসব এলাকার মানুষ তুলনামূলক বেশি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অধিকাংশই আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত রোগে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় পানিবাহিত রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শামীম আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় এক লাখ ট্যাংক বিতরণ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এসব ট্যাংকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে পানির সংকট অনেকটা কমে আসবে। এছাড়া পানির সংকট সমাধানে গত দুই বছরে ওই ছয় উপজেলায় ৬৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে।