বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বঙ্গবন্ধুর গতিশীলতা ও দূরদর্শিতায় তৈরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0
161

টাইমস ডেস্ক :

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর গতিশীলতা ও দূরদর্শিতার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি তৈরি হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নিউইয়র্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।
ড. মোমেন বলেন, আদর্শগতভাবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত অবিচল, কিন্তু একইসাথে দেশের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বাস্তববাদী। আর এজন্য তিনি সার্বজনীন মুল্যবোধ ও নীতির ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ওয়েবিনারটির প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক ও লেখক সলীল ত্রিপাঠি, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার অনার প্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনিয়র কুটনীতিক থমাস এ ডাইন এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। প্যানেল আলোচনা পর্বের সঞ্চালক ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইনস্টিটিউট ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজ এর নির্বাহি পরিচালক ড. সঞ্চিতা বি. সাক্সেনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জাতির পিতার “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়” নীতি-আদর্শ উল্লেখ করে বলেন, এই আদর্শই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি এবং এই আদর্শ অনুযায়ীই ভবিষ্যতে পরিচালিত হবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি গতিশীল পররাষ্ট্রনীতি হিসেবে চিহ্নিত, বিশ্বঅঙ্গনে যার রয়েছে নিরপেক্ষতার খ্যাতি এবং উচ্চ নৈতিক অবস্থান; আর একারণেই অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
এর আগে উদ্বোধনী বক্তব্য জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শ যা ১৯৭৪ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তাঁর প্রথম বাংলায় ভাষণে প্রতিভাত হয়েছিল, তা অনুসরণ করেই বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কে অব্যাহত রয়েছে। সে সময়ের বৈশ্বিক অর্থনীতির অসমতা দূর করতে বঙ্গবন্ধু মানুষের ভ্রাতৃত্ব ও একাত্তার শক্তির পূনর্জাগরণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক; বিশেষকরে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে আজ যখন বিশ্ব উন্নয়ন ব্যবস্থা অত্যন্ত ভঙ্গুর, ঠিক এসময়েই জাতির পিতার সেই আহ্বানের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এলডিসি ক্যাটেগরি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের উদাহরণ টেনে তিনি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
লেখক ও সাংবাদিক সলীল ত্রিপাঠি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক জাতীয়তাবাদ’ এর প্রবক্তা, যার শিকড় নিহিত ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে। জাতির পিতার এই ধারণা আজকের পৃথিবীতে বড়ই প্রাসঙ্গিক। জাতির পিতা যে সব আদর্শ রেখে গেছেন তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। উদাহরণ হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের সম্মানজনক পূনর্বাসনে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন। সলীল ত্রিপাঠি বিখ্যাত গ্রন্থ “দ্যা কর্ণেল হু উড নট রিপেন্ট: দ্যা বাংলাদেশ ওয়ার অ্যান্ড ইটজ্ আনকোয়ায়েট লিগ্যাসি” শীর্ষক বইয়ের লেখক।
কুটনীতিক থমাস এ ডাইন একাত্তরের মুত্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন প্রশাসনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে উন্নয়ন ও অগ্রগতির উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ সেসময়ের মার্কিন নেতৃত্বকে ভুল প্রমান করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
বঙ্গবন্ধু কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছিলেন তা বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে উল্লেখ করেন প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য আলোচকগণ। স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরবর্তী সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অবদান মুছে ফেলতে চেয়েছিল বলে এ সময় উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তরুন প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধু নীতি-আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর উপর আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।