বসুন্ধরা কিংস ফাইনালে

0
379

শেখ রাসেলের না খাওয়ার দম্ভ চূর্ণ করে তৌহিদুল আলম সবুজে রঙিন হয়ে গেল বসুন্ধরা কিংস। ১১৮ মিনিটে সৌভাগ্য নিয়ে ফেরা এই বদলি ইনজ্যুরড দেশি স্ট্রাইকারের গোলে প্রিমিয়ারে অভিষেক টুর্নামেন্টে তারা ফাইনালে পৌঁছে গেছে। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে তারা আগামী শুক্রবার মুখোমুখি হবে ঢাকা আবাহনীর।
শেখ রাসেলের গর্ব কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গোলহীন থাকা। সুবাদে তাদের রক্ষণের খ্যাতিও ছড়িয়েছিল চারদিকে; আর সেটাই সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষের ভয়ের কারণ। ১১৮ মিনিটে সেই ভয় জয় করা এক মহামূল্য গোলের পর সবুজ আনন্দে আত্মাহারা, ‘আমার আসলে খেলার কথা ছিল না। ডান পায়ের ইনজুরিতে দুই দিন প্র্যাকটিস করতে পারিনি। কোচকে বলেছিলাম, ম্যাচ হারতে থাকলে আমি নামব। আমি নেমেছি এবং গোল করে দলকে ফাইনালে তুলতে পেরেছি, এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’ ম্যাচের ৭০ মিনিটে তিনি নামেন ইমন বাবুর জায়গায়, একদম ‘নাম্বার নাইন’-এর ভূমিকায়। কিন্তু শেখ রাসেলের রক্ষণ যে প্রাচীরসম, তাকে টলানো বড় কঠিন। সারা মাঠ দাপিয়েও ওই এক জায়গায় গিয়ে ঠেকে যাচ্ছে কিংস। এভাবে ঠেকিয়েই রাসেল ম্যাচ নিয়ে গেছে অতিরিক্ত সময়ে। আর দুই মিনিট পার করতে পারলেই টাইব্রেকার, তা-ই চেয়েছিল তারা। কিংসের ভাগ্য সেই ‘জুয়া’য় যেতে দেননি ‘লাকি’ সবুজ।
খেলার ধারা দেখলে ম্যাচটা অত কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। সেই প্রথম মিনিট থেকেই বসুন্ধরা কিংসের দাপটে রাসেল একরকম দাঁড়িয়ে গেছে রক্ষণে। ৯ মিনিটে এক মুভে সুযোগ নষ্ট হয়েছে দু-দুবার। ছয় গজি বক্স থেকে মাহবুবুর রহমান সুফিল বল তুলে দিতে গিয়েছিলেন গোলে। সেটা গোলরক্ষক আশরাফুল রানা অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার পর মাশুকের পরের শটটিও গোললাইন সেভ করেন নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার আলিসন উদোকা। বাঁ দিক ধরে ইব্রাহিমের এক দৌড়ে ২৩ মিনিটে জাগে আরেক সম্ভাবনা, সেটিও ফিরিয়ে দেন রাসেল গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে একদম নিষ্প্রভ শেখ রাসেল, সবাই রক্ষণে নেমে ফরোয়ার্ড রাফায়েলকে ওপরে রাখে কাউন্টারের সুযোগ নিতে। কিংসের হাই ‘ব্যাক-লাইনের’ কারণে একবার সে রকম বিপদে পড়লেও গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো রক্ষা করেন বক্স থেকে বেরিয়ে এসে। বিরতির পর রাসেল একটু ওপরে উঠে খেললেও আক্রমণে নেই সেই গতি। ৮৪ মিনিটে ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের এক কাউন্টারে এলোমেলো হয়ে যায় রাসেল রক্ষণ। এর পরও দুর্ভাগ্য, স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হোর্হে গোতরের শট ফেরে গোলপোস্টে লেগে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পরও খেলার ধারা বদলায়নি। গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে কিংস। অথচ এই ম্যাচে রাসেলের ছিল দারুণ সুযোগ। দুই বিদেশি কিরগিজস্তান জাতীয় দলের মিডফিল্ডার বখতিয়ার ও ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ভিনিসিয়াসকে ছাড়াই সেমিফাইনালে নেমেছে কিংস। রাসেল কোচ সাইফুল বারীও বলেছেন সেই সুযোগের কথা, ‘দুই বিদেশি নেই, এটা ছিল আমাদের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু আমাদের খেলায় সেই ইতিবাচক মুভমেন্ট ছিল না। খেলোয়াড়দের মধ্যে তেড়েফুঁড়ে খেলার স্বাভাবটা দেখিনি।’
বিস্ময়করভাবে সেটা দেখা গেছে নিয়মিত দুই বিদেশিহীন বসুন্ধরা কিংসের খেলায়। এক মিনিটের জন্যও তারা মনঃসংযোগ হারায়নি। ‘দুই বিদেশিকে ছাড়াও কিংস যে শক্তিশালী এবং ভালো ম্যাচ খেলতে পারে, সেটা দেখিয়েছে এই ম্যাচে। শুরু থেকে আমরা অ্যাটাকিং ফুটবল খেলেছি। আমরা বরাবরের মতোই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেই জিততে চাই। রাসেলের রক্ষণভাগ খুব ভালো, এর পরও দুটো দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করেও নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ বের করতে পারিনি। শেষে সবুজই গোলভাগ্য নিয়ে ফিরেছে মাঠে।’ ১২০ মিনিট শেষ হওয়ার দুই মনিট আগে ‘সুপার-সাবে’র এ গোলেও পরোক্ষ অবদান আছে ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের। প্রায় ২২ গজ দূর থেকে এই কোস্টারিকান বিশ্বকাপারের ডান পায়ের মাটি কামড়ানো শটটি পোস্টে লেগে ফিরলে সবুজের মহামূল্য টোকায় বসুন্ধরা কিংসের ফাইনালে আরোহণ সম্পন্ন হয়।
রাসেলের বিপক্ষে এমন দাপুটে পারফরম্যান্সের পরও কোচ অস্কার ব্রুজন বলছেন সেরাটা দেখানো এখনো বাকিই তাদের, ‘দুজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিল না আজ। কয়েকজনের চোটও আছে। এর মধ্যেই খেলতে হচ্ছে আমাদের। আজকের ম্যাচটাকে আমাদের খেলা সেরা ম্যাচ বলা যাবে না তাই কিছুতেই। সামনে আরো ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারব বলে আমরা আশা করি।’ ফাইনালের প্রতিপক্ষ আবাহনীর জন্য এটা সতর্কবার্তাই। তথ্য সূত্র: অনলাইন ডেস্ক