বন্য প্রাণী পাচারের তালিকায় বাংলাদেশ

0
399

খুলনা টাইমস ডেস্ক :
বিশ্বজুড়ে বন্য প্রাণী পাচারের ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারি বা ‘ফোকাস’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশসহ ২৬টি দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশগুলোতে বন্য প্রাণী নিয়ে তিন ধরনের অপরাধ হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, দেশগুলো থেকে বন্য প্রাণী পাচার হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বন্য প্রাণী পাচারের পথ বা রুট হিসেবে এগুলোর ভূখন্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। তৃতীয়ত, ওই দেশে পাচার হওয়া বন্য প্রাণী ব্যবহৃত হচ্ছে। এই তিনটি অপরাধের যেকোনো একটি যদি কোনো দেশে সংঘটিত হয় তাহলে সেই দেশের নাম ফোকাস দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে সে দেশের পার্লামেন্ট বা কংগ্রেসে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে সেটি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামনের বছর থেকে বিশ্বের এই দেশগুলোর বন্য প্রাণী পাচার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। প্রতিবেদনে কঙ্গো, লাওস ও মাদাগাস্কারের বন্য প্রাণী পাচার নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বাঘ হত্যা ও পাচার নিয়ে দুটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে দেয়। সেখানে সুন্দরবনে বাঘ হত্যা ও তা বিদেশে পাচারের সঙ্গে একটি প্রভাবশালী চক্র জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। ‘বাংলাদেশ সুন্দরবনে বাঘের বাণিজ্য’ শীর্ষক ২০১৬ সালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৭৬ শতাংশ কমে গেছে। পেশাদার বন্য প্রাণী শিকারি একটি চক্র বাঘ হত্যা করে তা ভারতে পাচার করছে। ভারত থেকে বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে চীন, মালয়েশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কাঁকড়া ও মাছের চালানের সঙ্গে লুকিয়ে বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাঠানো হয় বলে প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে।

বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন অভিযানে আমরা বাংলাদেশের ভেতর থেকে বন্য প্রাণী পাচার ও আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহৃত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। এ ধরনের অপরাধ দমনের জন্য আমরা বন অধিদপ্তর থেকে বন্য প্রাণী অপরাধ দমনবিষয়ক একটি আলাদা বিভাগ চালু করেছি। ২০১৫ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে।’

বন্য প্রাণী পাচার রোধ আইন, ২০১৬ অনুসারে মার্কিন কংগ্রেসে প্রথমবারের মতো ওই বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৯ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, তার প্রধান চারটি বিষয়ের একটি হলো বন্য প্রাণী পাচার রোধ। সংঘবদ্ধ এ অপরাধ চক্র ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

কোন রাষ্ট্রগুলো বন্য প্রাণী চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং কোন কোন রাষ্ট্র এতে মদদ দিচ্ছে, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কংগ্রেসে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বন্য প্রাণী পাচার ও ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহারের তথ্য আমরা বিভিন্ন সময় শুনেছি। কিন্তু কোন ধরনের বন্য প্রাণী বিদেশে পাচার হচ্ছে ও কোন দেশে তা যাচ্ছে, সে বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ হওয়া দরকার। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বাংলাদেশ ছাড়া তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো ব্রাজিল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, লাওস, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, টোগো, উগান্ডা, আরব আমিরাত ও ভিয়েতনাম।