বণিক সমিতির নিবন্ধন বাতিলের পরও হয়রানীর অভিযোগ

0
899

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
মোংলা বন্দর বণিক সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাতিল ও সাংগঠনিকভাবে কোন কার্যকলাপ না থাকলেও হাবিবুর রহমান মাষ্টার এই সংগঠনের সাইন বোর্ড দেখিয়ে এবং নিজেকে সভাপতি পরিচয় দিয়ে মোংলা বাজার এলাকায় বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাবিব মাষ্টারের হয়রানির শিকার ব্যবসায়ীরা এ থেকে পরিত্রাণের জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। মোংলা বন্দর বণিক সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৯০ (৩) ধারা অনুযায়ী বাতিল করা হলেও বেআইনিভাবে হাবিবুর রহমান মাষ্টার এর অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২২ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর দীর্ঘদিনের নির্বাচন সম্পন্ন না করায় মোংলা বন্দর বণিক সমিতির (রেজি: নং খুলনা-৩৩৬) এর নিবন্ধন বাতিল করেন উচ্চ আদালত। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর আদালত রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার পর ওই আদেশ বাতিলের জন্য শ্রম আপিল ট্রাইবুনালে (ঢাকা) আপিল করলে আপিল ট্রাইবুনাল ২০১৫ সালের ২৬ মে আপিল নামঞ্জুর করে বাতিল আদেশটি বহাল রাখেন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ফলে সমিতির কোন বৈধতা না থাকার পরও বছরের পর বছর ধরে সমিতির সাইন বোর্ড টানিয়ে, সভাপতি পরিচয়ে সিল-সই ব্যবহার করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানীর পাশাপাশি দালালির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া মোংলা বন্দর বণিক সমিতির সাবেক এ সভাপতি হাবিবুর রহমান মাস্টারের বিরুদ্ধে। অভিযোগে আরো জানা যায়, মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ীদের সিবিএ ছিল মোংলা বন্দর বণিক সমিতি। দীর্ঘদিনে সমিতির কোন কার্যকলাপ নেই। তারপরও সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান মাস্টার নিজেকে বর্তমান সভাপতি পরিচয় দিয়ে বন্দরের বরাদ্দকৃত প্লট মালিক ব্যবসায়ীদের প্লটের নাম পরিবর্তন, নবায়ন চুক্তি ও প্লানের অনুমোদনের কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে দালালী স্বরুপ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার মাধ্যমে এ সকল কাজ না করলে তিনি তাতে বাধার সৃষ্টি করেন। এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে তার মত ছাড়া কাজ করে না দেয়ার জন্য সংগঠনের সভাপতি পরিচয় দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার কথা না শুনলে মিথ্যা মিথ্যা টাকা নেয়ার কথা বলে হুমকি ধামকি ও নামে বেনামে অসত্য বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে তাদেরকেও হয়রানী করে থাকেন। সম্প্রতি হাবিবুর রহমান মাস্টার প্লট সংক্রান্ত বিষয়ে ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে বন্দরের সিভিল ও হাইড্রোলিক (সওহ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাবেয়া রউফের দপ্তরে যান। কাগজপত্র ও ফাইলে ক্রুটি থাকায় তিনি তা সংশোধন করে নিয়ে আসার জন্য বললে হাবিব মাস্টার তাকে হুমকি-ধামকি, গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখান। এবং ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বেনামে মিথ্যা অভিযোগ বন্দরের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ঘটনায় ওই প্রকৌশলী বন্দরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এভাবে বন্দরের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী তার কথা মত কাজ না করলে নানাভাবে হয়রানী করে থাকে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বন্দরের ব্যবসায়ী কে, এম এইচ কবির, মো: এনামুল হক, আবুল হাসান, মো: জাকারিয়া, গোলাম সরোয়ার, শেথ মজনু, সরদার মজিবর, মো: সুলতান, মোছলেম গাজী, রেজাউল কবিরসহ আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, আমরা মোংলার ব্যবসায়ীরা হাবিব মাস্টারের ভয়ে ও আতংকে থাকি। কারণ সংগঠনের কোন কার্যক্রম নেই তারপরও তিনি সব জায়গায় বর্তমান সভাপতি বলে পরিচয় দিয়ে সর্বক্ষেত্রে প্রতারণা মাধ্যমে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়ারানী করছে। সুতরাং তিনি যাতে বণিক সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের কোন ধরণের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান মাস্টার বলেন, আমি বণিক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি, তাই আমি সভাপতি পরিচয় দিই। তবে সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে কোটে মামলা চলমান রয়েছে। তাই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত আমিই বৈধ সভাপতি।
যুগ্ম শ্রম পরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স খুলনা এর যুগ্ম শ্রম পরিচালক মো: মিজানুর রহমান বলেন, যেহেতু মোংলা বন্দর বণিক সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে, সেহেতু হাবিবুর রহমান মাস্টার এর সভাপতি পরিচয় ও কোন ধরণের কার্যক্রম করতে পারবেন না। যদি করে থাকেন তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। #