বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনার সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই, উল্টো দখল

0
306

টাইমস প্রতিবেদক:
স্বাধীন বাংলার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭০ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাঠে স্থাপিত শহীদ মিনারে দাড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এই শহীদ মিনারসহ স্কুল মাঠটি সংরক্ষনের বদলে যেনো দখলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে! সরেজমিনে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্কুল মাঠটি পরিদর্শনে গেলে এমনই এক নেতিবাচক চিত্র ফুঁটে ওঠে। দেখা গেল, সেই শহীদ মিনারকে আড়াল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় দোকান ঘর তৈরি করা হচ্ছে। অবশ্য, বিকেলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে নির্মানাধীন স্থাপনার আংশিক ভেঙ্গে ফেলে।
আরও দেখা গেছে, ৩ একরের অধিক পরিমাণ জমির উপর স্কুলটি করা। তবে এর প্রায় অর্ধেক জমি লিজ দেয়া। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজসে নামমাত্র মূল্যে মাঠের বিশাল একটা অংশ ভাড়া দিয়ে মূলত: নিজেদের পকেট ভারী করছেন। এজন্য সর্বপ্রথম মাঠের বিশাল অংশ দখল করা হয়। তারপর সেখানে ইটভাটা গড়ে ওঠে। ভাটায় মাটির প্রয়োজন পূরণে মাঠের একাংশ অস্তিত্ব হারায়। ক্রামন্বয়ে তা পুকুরে পরিণত হয়।
পুকুরটিও নামমাত্র মূল্যে লিজ দেয়া। তবে বিদ্যালয়ের ফান্ডে এই অর্থ জমা হয় না। বরং লিজদাতা মেরামতের বাহানা তুলে প্রতিবছর সংস্কারের বিল ধরিয়ে দেন ম্যানেজিং কমিটিকে। পুকুরের দুপাশ ঘিরে দোকান ঘর করা। সেখানেও আছে কারচুপি। এছাড়া স্কুলের মাঠে স্থাপিত ইট ভাটা মূল স্থাপনার জায়গায় এখন ধান চাষ করা হচ্ছে। ভাটা প্রতিষ্ঠান মাঠ ছেড়ে দিলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি তখন ওই অংশটুকু নতুন করে লীজ দেন। লীজদাতা সেখানে ধান চাষ করছে। এভাবেই একের পর এক ঘটনায় ক্রমান্বয়ে দখলের সাথে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারসহ স্কুল মাঠটি।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবিএম শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, যে মাঠে বঙ্গবন্ধু পদার্পণ করেছেন, যে শহীদ মিনারে দাড়িয়ে তিনি ভাষণ দিয়েছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও তা সংরক্ষের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং দিনে দিনে মাঠটি দখল হচ্ছে।
এবার শহীদ মিনারকে আড়াল করে স্থাপনা নির্মাণ, স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তির উপর বিরোধীদের চ‚ড়ান্ত ছুরিকাঘাত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায়ও শহীদ মিনারকে আড়াল করার প্রতিবাদ করেন। এতে রোষানলে পড়েন তিনি। তাকে নানাভাবে হেনস্থা করার এবং মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান প্রতাপ কুমার রায়।
দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে রেজুলেশন করে দোকান নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুলের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ কাজ চলছে। মূলত: শহীদন মিনারকে সুরক্ষিত করতে রাস্তার পাশে দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরে দেয়াল থেকে দোকান করা হলে স্কুলের আয় বাড়বে, এমন চিস্তা নিয়ে স্থাপনা করা হচ্ছে, উৎকোচ বিনিময়ে নয়।
স্কুল পরিচালনার এডহক কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্কুলের আয় বৃদ্ধির জন্য কমিটির সভায় দোকান নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্মান কাজ শেষ হলে উন্মুক্তভাবে দোকান ভাড়া বা বরাদ্দ দেয়া হবে।
আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন শিক্ষা কমিটির সভাপতি এড. প্রতাপ কুমার রায় বলেন, জাতির পিতার স্মৃতি সম্বলিত ঐতিহাসিক শহীদ মিনারকে আড়াল করে দোকান ঘর নির্মান করা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও ভাষা শহীদদের অবমূল্যায়ন করার শামিল। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সাথে যুক্তদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা: সঞ্জিব দাশ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পর্যবেক্ষন ও স্থানীয়দের সাথে আলাপ করেছি। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়ে নির্মান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। বিষয়টি উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
জানা যায় খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা মিলনস্থান চুকনগর। সেই চুকগরের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের মাঠে ১৯৫৩ সালে ভাষা শহীদদের স্মরণে স্থাপিত হয় শহীদ মিনার। যা ডুমুরিয়া উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত সর্বপ্রথম। ১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ওই শহীদ মিনারের উপরে দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমান ভাষন দিয়েছিলেন। ওই ভাষনে যশোর জেলার কেশবপুর, সাতক্ষীরা জেলার তালা, খুলনার ডুমুরিয়াসহ তৎকালীন বৃহত্তর খুলনার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ভাষন শোনেন। সেই শহীদ মিনারটির কোন সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে আজও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।
আরও জানা যায়, করোনার কারণে স্কুল পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আপদকালিন এডহক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি মনোনীত হন আওয়ামী লীগ আটলিয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি ইউপি মেম্বর মোস্তাফিজুর রহমান দুলু। তিনিসহ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহীদ মিনারকে আড়াল করে দোকান নির্মান করে ভাড়া দেয়ার উদ্যোগ নেন। স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদকারীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।