বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর,ভাষা সৈনিক শহীদ এমএ গফুরের ৪৯ তম শাহাদাৎবার্ষিকী আজ

0
559

শেখ নাদীর শাহ্ :


আজ ৬ জুন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক পাইকগাছা-কয়রার কৃতি সন্তান সাবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।

প্রতিবছর তাঁর শহীদ দিবসে আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচী পালিত হলেও এবছর করোনা ইস্যুতে কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পালিত হচ্ছে দিবসটি। এউপলক্ষ্যে শুক্রবার (৪ জুন) জুম্মাবাদ এলাকার বিভিন্ন মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ভাষা দিবসের ৬৮ বছরেও ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি পাননি বরেণ্য এ ভাষা সৈনিক। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও মেলেনি স্বাধীনতা পদক। তবে দেরিতে হলেও বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের শাষনামলে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন শহীদ এম,এ গফুর (মরনোত্তর) ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি এবং স্বাধীনতা পদক পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন শহীদ এম.এ গফুরের পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জনপদের সাধারণ মানুষ।

খুলনার ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এমএ গফুর বাংলা ১৩৩২ বঙ্গাব্দে ২৬ বৈশাখ খুলনার (বর্তমান) কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামের এক সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত জনাব আলী সানা, মাতা সোনাবান বিবি। কর্মময় জীবনে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন,আলোকবর্তিকা।

৪ ভাই ও দু’বোনের মধ্যে শহীদ এম এ গফুর ছিলেন পঞ্চম। তিনি কপিলমুনি স্কুল থেকে প্রাইমারী শেষ করে পাশ্ববর্তী আশাশুনির বুধহাটা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন খুলনার ঐতিহ্যবাহি বিএল কলেজে। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (ন্যাপ) রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এইচএসসি পাশ করার পর বিএ পড়াকালীন শুরু হয় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রæয়ারি ঢাকার রাজপথে রক্তঝরার খবরটি পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারী খুলনায় পৌছানোর পরই রাজপথে নেমে আসে খুলনার ছাত্রসমাজ। এদিন সমীর আহম্মেদের নেতৃত্বে নগরীর আহসান আহম্মেদ রোডের এ কে শামসুদ্দিন আহমেদ শুনুর আজাদ গ্রন্থাগারে প্রথম বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে এমএ গফুরসহ উপস্থিত ছিলেন, আবু মোহাম্মদ ফেরদৌস, এমএ বারী, নূরুল ইসলাম দাদু, এসএম জলিল, জাহিদুল হক ও তোফাজ্জেল হোসেনসহ অনেকেই। বৈঠকে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্তে ঐক্যমতে পৌছান সবাই। পরবর্তীতে আন্দোলনে নেতৃত্বদেন এমএ গফুর। তখনকার মুসলিমলীগের গুন্ডা ও পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে গফুরসহ তার সহকর্মীরা পায়ে হেঁটে নগরীর স্কুল, কলেজগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। পুলিশের হয়রাণীর শিকার ও মিথ্যা মামলায় জেলও খাটেন আন্দোলনকারীদের অনেকেই।

এম এ গফুর বিএল কলেজ থেকে বিএ পাশ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে যোগদান করার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে ঝাঁপিয়ে পড়েন গণঅভ্যূত্থানে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বস্থতার সাথে কাজ করায় আস্থাভাজন হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধুর। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাইকগাছা-কয়রা ও আশাশুনি এলাকা থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ৯নং সেক্টরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৯ মাসের স্বসস্ত্র সংগ্রামে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসার পর এমএ গফুরের অনুরোধে ভেঁড়ি বাঁধ নির্মাণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২২ ফেব্রæয়ারি সফর করেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আলমতলা এলাকায়।

ভেঁড়িবাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন কাজ ও সহজ সরল জীবন যাপনে সাধারণ মানুষের কাছে এমএ গফুর হয়ে ওঠেন একজন আলোকিত ব্যক্তি। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে ওঠেন স্বার্থন্বেষী একটি মহল। ১৯৭২ সালের ৬ জুন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক এমএ গফুর। ১৯৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন সহধর্মীনি লায়লা বেগম। বরেণ্য এ ব্যক্তির নামে জন্মস্থান হরিনগর ও পাইকগাছা সরল এলাকায় দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা সদরে একটি মিলনায়তন ও সরল এলাকার প্রাইমারী স্কুলের সাথেই একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো পড়ে রয়েছে অবহেলায়।

বর্তমানে শহীদ এম এ গফুরের ৭ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হোসনেয়ারা আমেরিকা প্রবাসী, ছেলে আনোয়ার ইকবাল মন্টু পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পাইকগাছার সরল এবং আনোয়ার জাহিদ, কন্যা নিশাত বানু ও তামারা বানু খুলনায় বসবাস করছেন।

৫২’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিলেও এ আন্দোলনে অবদানকারী অনেকেরই স্থান হয়নি ইতিহাসের পাতায়। শহীদ এমএ গফুর তাদের অন্যতম । ভাষা আন্দোলনে এম এ গফুরের অবদান এলাকাবাসী স্মরণ করলেও আজও ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি পাননি তিনি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হয়েও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও তাকে দেওয়া হয়নি স্বাধিকতা পদক।

তবে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না পাইকগাছায় যোগদানের পর তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে দু’ দু’বার শহীদ এমএ গফুরকে স্বাধীনতা ও ভাষা সৈনিকের মরনোত্তর সম্মাননা প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে শহীদ এমএ গফুরের জৈষ্ঠ্য পুত্র আনোয়ার ইকবাল মন্টু পিতার শাহাদাৎ বার্ষিকীর প্রতিক্রিয়ায় জানান, ভাষা আন্দোলনে খুলনার অবদানের বিষয়টি ইতিহাসে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। যার ফলে অনেকের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই মেলেনি। ওই সময় যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন তাদেরকে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত এবং একইসাথে আমার পিতা হিসেবে নয় শহীদ এমএ গফুর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হওয়ায় আমার ও পরিবারের পাশাপাশি সাধারণ এলাকাবাসীর আশা বর্তমান সরকার ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতির পাশাপাশি মরনোত্তর স্বাধীনতা পদক দিয়ে সম্মানিত করবেন শহীদ এমএ গফুরকে।