ফুলবাড়িগেটে মেলায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান : জুয়া ও অবৈধ লটারীর চালানোর অভিযোগে আটক ১৫

0
625

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস:

খুলনা মহানগরীর ফুলবাড়িগেটে মেলায় অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত ও RAB ৬ সদস্যরা। এসময় জুয়া ও অবৈধ লটারীর চালানোর অভিযোগে ১৫ জনকে আটক করেছেন তারা। রাত ১০টার পর এই অভিযান চলে। খুলনা জেলা প্রশাসন এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এসময় কতিপয় জুয়ারিদের আটক করা গেলেও মেলার মূল পরিচালনাকারী তথা মালিক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

র‌্যাব-৬এর একটি বিশেষ টিম মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে অভিযান শুরু করে। প্রায় তিন ঘন্টার এ অভিযান শেষে জুয়ার সাথে জড়িত ১৫ জনকে ১৫ দিন করে কারাদন্ড দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। ধৃত বাকী পাঁচ জনকে যাচাই-বাছাই শেষে ছেড়ে দেয়া হয়।

দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, একলাছ ব্যাপরী (৪০), মোঃ হাসান(২১), শিপন শেখ(২১), রাজিব (২৬), মোঃ শাহজালাল(৩০), মোঃ বিল্লাল (৪০), মিল্টন(৩৫), সাহেব আলী(৪৫), মাসুম সরদার(৩০), সবুজ (২৮), খোকন মুন্সি (৩৮), মোঃ কামরুল (৫০), পরিমল কুমার (৪৬), জাহাঙ্গীর (৩২) ও মোঃ বাবু (১৯)।

র‌্যাব-৬এর স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, কয়েকদিন ধরে মেলার মাঠে গোয়েন্দা নজরদারি ছিলো। মঙ্গলবার বিকেল থেকে অভিযান পরিচালনা হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত অভিযানে ২০জনকে আটক করে র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযানের সময় ৮টি জুয়ার বোর্ডের মালামাল ও নগদ ১২হাজার ৩শ’ টাকা জব্দ করা হয়।
তবে শীতকালীন মেলার নামে বিগত প্রায় এক মাস ধরে চামেলী র‌্যাফেল ড্র’র টিকিট বিক্রি করে অন্তত: কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মূল হোতারা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। বিশেষ করে সম্প্রতি এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের একটি অর্ডার কেএমপির খানজাহান আলী থানাসহ বিভিন্ন স্থানে দাখিল করেন।
এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার বলেন, মেলা মাঠে অভিযান হয়েছে শুধুমাত্র জুয়ার আড্ডায়। জুয়ার আলামতও উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ১৮৬৭ সালের জুয়া আইনে মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫দিন ধরে ‘২০ টাকার লটারী কাটলেই আপনিও পেতে পারেন লক্ষাধীক টাকা, মোটরসাইকেল সহ আরও নানা আকর্ষণীয় পুরুস্কার’ এমন সব লোভনীয় অফার নিয়ে খুলনা মহানগরীতে আবারও সরব হয় মেলার নামে জুয়া চালানো সেই প্রতারক চক্রটি। শহরজুড়ে ইজিবাইকে প্রকাশ্যে মাইকিং করে বিক্রি হয় ড্র’র টিকিট। তামান্না বদলে নতুন নামে নামকরণ করা হয় জুয়ার ‘চামেলী রাফেল ড্র’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চামেলী রাফেল ড্র আয়োজকদের প্রলোভন দেখানো পুরুস্কার
মোটকথা খুলনা মহানগরীতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এই জুয়ারীরা। তাইতো তামান্নার রাফেল ড্র’র রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয় চামেলী রাফেল ড্র। আর এই লটারীর প্রলোভনে পড়ে সর্বশান্ত হয় সাধারণ মানুষ। তবে দেদারছে জুয়া চললেও পুলিশ ও প্রশাসন নীরব ভূমিকা জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলে নিন্দার ঝড়।
বলা বাহুল্য, খুলনা ‘জেলা আইন-শৃংখলা’ এবং ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ’ কমিটির গত ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মাসিক সভায় মাইকিং করে লটারি, জুয়া এবং এ ধরনের কাজ বন্ধ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। তবে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চামেলী রাফেল ড্র আয়োজকদের প্রলোভন দেখানো কৌশলী প্রচারণার একাংশ
জানা গেছে, খুলনা মেট্রাপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র অনুমতি নিয়ে গেল ২২ ডিসেম্বর থেকে খুলনায় খানজাহান আলী থানা এলাকার ফুলবাড়ীগেট বালুর মাঠে শুরু হয় বর্ণাঢ্য গ্রামীণ মেলা। যার আয়োজক প্রতিবন্ধী কল্যাণ ও পুনর্বাসন সংস্থা এবং সহযোগতিায় রয়েছে চামেলী ট্রেডার্স। আর এই আয়োজক প্রতিষ্ঠান চামেলীর নামেই মেলার মাঠে দেদারছে চলে জুয়ার আসর। চলে মাদক সেবীদের আড্ডাও।
আরও জানা গেছে, কেএমপির পক্ষ থেকে ১৩টি শর্তে এই মেলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো মেলায় কোনা ধরনের হাউজি, জুয়া বা র‌্যাফেল ড্র চালানো যাবে না। মাদকদ্রব্যের বিষয় ছিলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সরজমিনে দেখা গেছে, মেলাকে কেন্দ্র করে মাদক ও জুয়ার আসর বসছে সেখানে। পুরুস্কারের প্রলোভনে পড়ে শহর ও শহরতলী থেকে নিত্যদিন মেলায় ভিড়ছে হাজারো মানুষ। মাদক সেবীদের নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছে মেলা মাঠ।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন নগর ও উপজেলাগুলোতে ২ শতাধীক ইজিবাইক করে র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকা মূল্যের লটারির টিকিট বিক্রির প্রথমদিনই প্রায় ৩০/৩৫ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সর্বসাকুল্যে ৫ লাখ টাকার। বাকি টাকা লটারির আয়োজক ও অন্যান্য ব্যক্তিদের পকেটে ঢুকেছে।
 
এ ব্যাপারে খানজাহান আলী থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, মেলা করার জন্য মন্ত্রণালয় এবং কেএমপি’র নিকট থেকে অনুমতি নিয়েছে তারা। আর মেলায় রাফেল ড্র প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব দিয়েই এই লটারী কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ আদালতের স্থগিত আদেশের এক চিঠি দেখিয়
এছাড়া মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মনির ভূইয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, দৌলতপুর কেডিএ’র কল্পতরু মাঠে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় জোনাকি র‌্যাফেল ড্র। ১০ টাকার বিনিময়ে লাখ টাকার পুরস্কার জেতার আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। মেলায় মাদক ও জুয়ার আসর বসলেও সে ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় ছিল দৌলতপুর থানা পুলিশ। যা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করে স্থানীয়দের মাঝে। তবে গত ৫ জানুয়ারি জোনাকি রাফেল ড্র বন্ধ হয়।
জানা গেছে, ‘চামেলী রাফেল ড্র’ নামে জুয়া চালানো শক্তিশালী সিন্ডকেটের কারণেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে জোনাকি। এক পর্যায়ে তারা বাধ্য হয়ে চামেলী’র সাথে মিলে যৌথভাবে জুয়া খেলার এই কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। চামেলীর পক্ষে জনৈক নসু ও জোনাকির পক্ষে পাসপোর্ট অফিসের দালাল স্বপন সবপক্ষকে ম্যানেজ করতে মাঠে নেমেছে বলে সূত্র জানায়। তবে নেপথ্যে প্রভাবশালী এক চক্র রয়েছে বলে আরও জানা গেছে। আর এই চক্রের হোতারা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।