ফলো অনের পর আইরিশদের প্রতিরোধ

0
483

স্পোর্টস ডেস্কঃ
আইরিশদের বোলিংয়ের আনন্দ অনেকটাই উবে গিয়েছিলে ব্যাটিংয়ে নেমে। সবুজাভ উইকেটে টের পেয়েছে তারা টেস্ট ক্রিকেটের উত্তাপ। নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে এড়াতে পারেনি ফলো অন। তবে ফলো অনের পর ব্যাট করতে দুই আইরিশ ওপেনার উপহার দিয়েছেন দারুণ লড়াই।

ডাবলিন টেস্টের তৃতীয় দিন দেখেছে তিনটি ইনিংসের মুখ। ম্যালাহাইডে রোববার ৯ উইকেটে ৩১০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৩০ রানে। ফলো অনের পর দ্বিতীয় ইনিংসে আইরিশরা দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ৬৪ রানে।

আগের দিন পাকিস্তানকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করেছিল লোয়ার মিডল অর্ডারে শাদাব খান ও অভিষিক্ত ফাহিম আশরাফের জুটি। দারুণ সেই জুটি এদিন আর খুব বেশি এগোতে পারেনি। ৫২ রান নিয়ে শুরু করা শাদাব আউট হয়ে যান ৫৫ রানেই।

৬১ রানে দিন শুরু করা ফাহিম আশা জাগিয়েছিলেন অভিষেকে সেঞ্চুরির। তবে তার ইনিংস থামে ৮৩ রানে। অভিষেকে আটে নেমে পাকিস্তানের হয়ে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস।

মোহাম্মদ আমিরও আউট হয়ে যান দ্রুতই। খানিক পর শেষ জুটি ভাঙার অপেক্ষা না করে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় পাকিস্তান।

৩৭ ছুঁইছুঁই বয়সে টেস্ট ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া পেসার টিম মারটাঘ নেন ৪ উইকেট।

যে ভাবনায় ইনিংস ঘোষণা করেন সরফরাজ আহমেদ, অধিনায়কের সেই আশা দারুণ ভাবে পূরণ করে দেন পাকিস্তানের নতুন বলের দুই বোলার। মোহাম্মদ আব্বাস ও মোহাম্মদ আমির লাঞ্চের আগেই এলোমেলো করে দেন আইরিশ টপ অর্ডার।

এই দুজনের দারুণ সুইং বোলিংয়ে ৭ রানেই আইরিশরা হারায় ৪ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের প্রথম বাউন্ডারি আসে ছয় নম্বরে নামা কেভিন ও’ব্রায়েনের ব্যাট থেকে!

পঞ্চম উইকেটে পল স্টার্লিং ও কেভিন ও’ব্রায়েন চেষ্টা করেছিলেন প্রতিরোধের। ১৭ রানে স্টার্লিংকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন ফাহিম, দেখা পান প্রথম টেস্ট উইকেটের।

পাকিস্তানের পেসারদের দাপটে দিশাহারা আইরিশদের পরে আরও নাকাল করে ছাড়েন শাদাব। তরুণ লেগ স্পিনার নিজের দ্বিতীয় ওভারেই নেন দুটি উইকেট।

স্রোতের বিপরীতে দারুণ খেলছিলেন কেভিন ও’ব্রায়েন। তাকে ৪০ রানে থামান আমির। আয়ারল্যান্ডের রান তখন ৮ উইকেটে ৭৩।

সেখান থেকে লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে গ্যারি উইলসনের লড়াই দলকে নিয়ে যায় ১৩০ পর্যন্ত। উইলসন অপরাজিত থাকেন ৩৩ রানে।

প্রথম দিন টস না হওয়ায় ম্যাচ পরিণত হয়েছে চার দিনের টেস্টে, ফলো অন নেমে এসেছে দেড়শ রানের ব্যবধানে। সেই সুযোগ নিয়ে আইরিশদের ফলো অন করান পাকিস্তানী অধিনায়ক সরফরাজ। পাকিস্তান সবশেষ প্রতিপক্ষকে ফলো অন করিয়েছিল সেই ২০০২ সালের মে মাসে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে যে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন এখনকার প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল-হক।

ফলো অনের অভিজ্ঞতা অবশ্য এবার খুব সুখকর হয়নি পাকিস্তানের। প্রথম ইনিংসের হতাশা ভুলে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন আয়ার‌্যান্ডের দুই ওপেনার। আমিরের বলে দুটি ক্যাচ হাতছাড়া না হলে খেলার চিত্রটা ভিন্নও হতে পারতো।

প্রথম ইনিংসে আইরিশদের সবচেয়ে বড় জুটি ছিল ৩৪ রানের। এবার প্রথম জুটিই তুলে ফেলেছে প্রায় দ্বিগুণ!

চল্লিস বছরে পা দিয়েও টেস্ট ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিলেন যিনি, সেই এড জয়েস স্বপ্ন ছোঁয়ার ম্যাচে অবশেষে চেনাচ্ছেন নিজের জাত। প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা পেছনে ঠেলে এবার অপরাজিত ৩৯ রানে।

লড়াই করছেন অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডও। উদ্বোধনী জুটির সৌজন্যে দিনের শেষটায় হাসি ফুটেছে আইরিশদের মুখে।

ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখনও প্রয়োজন ১১৬ রান। তবে উইকেট এখনও আছে ১০টিই, আইরিশদের বড় স্বস্তি এটিই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৯৬ ওভারে ৩১০/৯ (ডি.) (আগের দিন ২৬৮/৬) (শাদাব ৫৫, ফাহিম ৮৩, আমির ১৩, আব্বাস ৪*, রাহাত ০*; মারটাঘ ৪/৫৫, র‍্যাঙ্কিন ২/৭৫, কেইন ০/৮৬, টমসন ৩/৬২, কেভিন ০/২০, স্টার্লিং ০/১১)।

আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৭.২ ওভারে ১৩০ (জয়েস ৪, পোর্টারফিল্ড ১, বালবার্নি ০, নিয়াল ০, স্টার্লিং ১৭, কেভিন ৪০, টমসন ৩, কেইন ০, উইলসন ৪৪*, র‌্যাঙ্কিন ১৭, মারটাঘ ৫; আমির ২/৯, আব্বাস ৪/৪৪, রাহাত ০/১৮, ফাহিম ১/১৮, শাদাব ৩/৩১, সোহেল ০/১)।

আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: (ফলো অনের পর) ২৬ ওভারে ৬৪/০ (জয়েস ৩৯*, পোর্টারফিল্ড ২৩*; আমির ০/২, আব্বাস ০/১৩, রাহাত ০/১৮, ফাহিম ০/১৫, শাদাব ০/১৫)।