প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর পরিবেশে আনবে দীর্ঘমেয়াদী সুফল

0
117

ঢাকা অফিসঃ সেন্টমার্টিনের পরিত্যাক্ত প্লাস্টিককে সবাই অবমূল্যায়ন করলেও এবার সেই প্লাস্টিককে মূল্যাবান করে তুলবে বিদ্যানন্দ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে এখন আর টাকার প্রয়োজন হবে না। পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই সেন্টমার্টিনের মানুষ ব্যাগভর্তি বাজার বাসায় নিয়ে যেতে পারবে। ফলে টাকার জন্য থেমে থাকবে না প্রতিদিনের বাজার।

 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল ও রঙিন প্রবাল থাকা বিশাল সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য সকলের নজর কাড়লেও প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও দ্বীপের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। যেখানে সেখানে এমনকি সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক ফেলার কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন।

 

স্থানীয় মানুষের ধারণা পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে তা কার্যকর করে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। এছাড়াও পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেয়।

 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের এই প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য একদল স্বেচ্ছাসেবী গ্রহণ করেছে একটি নতুন উদ্যোগ। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই উদ্যোগের আওতায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থাপন করা হবে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। যেখানে মানুষ তাদের ব্যবহারকৃত প্লাস্টিক পণ্যের খালি পাত্র বা বোতল এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারবে চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এতে করে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা যেমন পূরণ হবে ঠিক তেমনই কমবে পরিবেশ দূষণ। এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুইবার করে চালু করা হবে। ফলে মানুষ তাদের জমানো প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিতে পারবে।

 

সংগ্রহকৃত প্লাস্টিক দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করবে বিশাল আকৃতির একটি প্লাস্টিক দানব। ধারণা করা হচ্ছে তৈরিকৃত এই দানব হবে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু। দানব হলো এক ধরনের বিচিত্র জীব, যা দেখতে যেমন ভয়ঙ্কর তেমনই তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা মানব বিশ্বের সামাজিক বা নৈতিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ। এই দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানবসমাজকে একটি ম্যাসেজ দিতে চায় যে, প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যেই হারে দূষিত হচ্ছে তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। আর এই দানবই পরবর্তীতে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

 

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একটি শিক্ষা অনুকূল বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অনাথ ও বঞ্চিত শিশুদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যানন্দ এক টাকায় আহার, শীতকালীন ও ঈদে নতুন কাপড় বিতরণ, বিনামূল্যে শিক্ষা কর্মসূচী এবং এক টাকা চিকিৎসা সহ বেশ কয়েকটি নিয়মিত কর্মসূচি পরিচালনা করছে। বিনা মূল্যে পড়ানোর পাশাপাশি দেওয়া হয় শিক্ষা উপকরণ। এর বাইরেও সংস্থাটি প্রতিনিয়ত সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আর এমনই একটি উদ্যোগ হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণরোধ করতে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ স্থাপন। যার ফলাফল স্বরূপ কক্সবাজারের প্রদর্শিত হবে প্লাস্টিকের তৈরি বিশাল আকৃতির দানব। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হয়েছে এই প্রকল্প। আর এই পুরো প্রকল্পের ক্রিয়েটিভ সুপারভিশনে আছে এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন লিমিটেড।