প্রবাসে থাকাটা কি আমার অপরাধ? আর্তি ফ্রান্স প্রবাসীর

0
787

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবাসে থাকাটা কি আমার অপরাধ প্রশ্নটি তুলেছেন ফ্রান্স প্রবাসী ফেরদাউস আমিনুল হক। শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও প্রবাসী ফেরদাউস আমিনুল হক এ প্রশ্নটি তুলে বলেন, আমি পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ফ্রান্সে বসবাস করে আসছি। ফ্রান্সে থাকা অবস্থায় অতিকষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেডিএ’র কাছ থেকে ১৬/০২/৯৪ইং তারিখে খুলনা নগরীর ৪৭-এ, মজিদ স্মরনীর ৫.৩৩ কাঠার প্লটটি ক্রয় করি। প্লটটির আয়তন লম্বায় ৮০ ফুট এবং চওড়া ৪৮ ফুট। ১৬/০৮/৯৫ইং তারিখে কেডিএ আমাকে প্লটটি’র দলিল সম্পাদন করে দেয় এবং ৩/১০/১৩ইং তারিখে আমাকে দখল বুঝিয়ে দেয়। এরপর ৩১/১২/১৩ইং তারিখে কেডিএ’র কাছ থেকে প্ল্যান পাওয়ার পর জমিতে চারতলা ভবন নির্মাণ করি। ভবনের পেছনের ২ কাঠা জমি গাড়ী পাকিং এর জন্য রেখে দেই। কিন্তু আমরা যেহেতু প্রবাসে বসবাস করি। এই সুযোগে ভবনের আশপাশের বস্তিবাসীদের দিয়ে আমার ওই ফাঁকা জায়গায় ঘর তুলে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। আর প্রতিনিয়ত দখল করতে আসা মহলটিকে মদদ দিচ্ছে শিববাড়ী কালী মন্দির কমিটির একটি অংশের হিন্দু নেতারা এবং স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি। এসব হিন্দু নেতারা এবং ওই জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে মোটা অংকের চাঁদাদাবি করে। তাদের দাবি আমি পূরণ করতে না পারায় তারা নেপথ্যে থেকে বস্তিবাসীদের উস্কানী দিচ্ছে। এসব ঘটনায় আমি বিভিন্ন সময়ে থানায় সাধারণ ডায়রী এবং লিখিত অভিযোগ করেছি। গত ০৪/০৮/১৮ইং তারিখে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাধারণ ডায়রী (নং১৯২) করি। একই থানায় গত ৩০/০৪/১৮ইং তারিখে সাধারণ ডায়রী (নং ১৪১৯) করি। এর আগে ২৫/১২/২০১৫ইং তারিরখে একই থানায় লিখিত অভিযোগ দেই। ১৯/০৪/১৬ইং তারিখে সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি (নং৭৬৭) করি। ১৮/১২/১৭ইং তারিখে কেএমপির ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু অদ্যাবধি আমি প্রতিকার পাইনি। এ অবস্থায় গত ০১/০৮/১৮ইং তারিখে বেলা ১১টার দিকে আমার ভবনের (ফেরদৌস প্লাজা) দারোয়ান খোকন ডিউটিরত অবস্থায় দেবাশীষ পাল, দোলন পাল, সমর পালসহ অজ্ঞতনামা ব্যাক্তিরা এসে আমার জায়গায় দেয়াল দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন আমার দারোয়ান খোকন বাঁধা দিলে তারা খোকনকে হাতুরী দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। এঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে খোকন মামলা দায়ের করেন। সোনাডাঙ্গা মডেল থানার মামলা নং ০৪, তারিখ ০৩/০৮/১৮ইং, ধারা ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/৩৪ পেনাল কোর্ট।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের অনেকেই রাস্তা ঝাড়– দেওয়া, থালাবাটি মাজা, মুটে বওয়া, ড্রেন পরিস্কার করা, ড্রাইভিংসহ অবর্ননীয় কষ্ট করে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স এদেশে পাঠায়। সারাজীবনের অর্জিত অর্থদিয়ে এক টুকরো জমি ক্রয় করে। কিন্তু সেটিও যদি দখল হয়ে যায় তার থেকে কষ্টের আর কিছুই থাকেনা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর ১৮ইং তারিখে মহানগর ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে শিববাড়ী মোড়ের মানববন্ধনে তারা আমার প্রতিষ্ঠান ফেরদৌস প্লাজার পিছনে পালপাড়ার সমর পাল, দেবাশিষ পাল, দোলন পাল ও স্বাগতা পালের পৈত্রিক বাড়ি বলে দাবি করে এবং আমি ও আমার ভাই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে গত ৪ আগস্ট দুপুরে এবং ৮ আগস্ট গভীর রাতে দুটি হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে ভাংচুর তাদের এলোপাথারি মারপিটসহ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি প্রদানের অভিযোগ করে মিথ্যাচার করেন। এর আগেও কথিত হিন্দু নেতারা ও কিছু সুবীধাভোগীরা আমার কাছে চাঁদা চেয়েছেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা একের পর এক মিথ্যাচার করছেন। প্রশাসন ও বড় বড় নেতাদের কাছে নালিশ করছেন। আর নেতারা যখনই দুই পক্ষের জমির বৈধ কাগজপত্র নিয়ে শালিসীতে বসতে চাচ্ছেন তখনই তারা ওই নেতাকে ছেড়ে অন্য নেতার কাছে যাচ্ছেন। আসলে যারা জমি দাবি দাবি করছেন তাদেরতো কোন কাগজপত্রই নেই। ফলে এখন তারা অস্ত্র হিসেবে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছেন। আমি সামপ্রদায়িক সম্প্রতীতিতে বিশ্বাস করি। আমি বলতে চাই-পুজা উদযাপন পরিষদ, প্রশাসন এবং নেতাদের নিয়ে আপনারা বসুন, দেখেন জমি কার। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে অযথা ফায়দা লোটার চেষ্টা করবেন না। কারণ- আমরা প্রবাসীরা অনেক কষ্ট করে টাকা আয় করি। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। আর দেশের টানেই ছুটে আসি। আমার পরিবারের সদস্যদের ফ্রান্সের পাসপোর্ট রয়েছে, কিন্তু আমি কখনই ফ্রান্সের পাসপোর্ট নেইনি। তার কারণ দেশের প্রতি আমরা ভালোবাসা। এই দেশকে আমি দিতে চাই, নিতে চাইনা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফেরদাউস আমিনুল হকের মা আনজিরা খাতুন, স্ত্রী জেবুন নাহার ডেজী, মেয়ে ফেরদাউস নিশা এবং ভাই শেখ বাবলু।