প্রতিবন্ধীদের জন্য গৃহীত অপ্রতুল কর্মসূচীর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন

0
1088

খুলনাটাইমস ডেস্কঃ সারা দেশে প্রায় দেড় কোটি জনগণ প্রতিবন্ধী। তাদের জন্য মাত্র ৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। সরকারি কিছু কর্মসূচীও রয়েছে। কিন্ত এ সকল প্রতিবন্ধীদের দক্ষ করে তোলার জন্য যথেষ্ট নয়। এরপর ওই সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে প্রতিবন্ধীদের অপ্রতুল কর্মসূচী ও বরাদ্দ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন কমিটির সদস্য লুৎফা তাহের। তিনি বলেন, মাত্র ৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কিভাবে সারা দেশের প্রতিবন্ধীদের কর্মক্ষম করে তুলবে? আবার সেখানে জনবল সংকটও রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি বছর বাজেটে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এই টাকা প্রতিবন্ধীদের জন্য কতোটা কাজে আসছে তা দেখা দরকার।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ প্রতিবন্ধীতার শিকার। আর বাংলাদেশের ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্রতিবন্ধী। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বৈষম্য, দয়া-দাক্ষিণ্য, করুণা ও অনুকম্পার উপর ভর করে জীবন নির্বাহ করে। তবে দেশে ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদ (সিআরপিডি) গৃহীত হওয়ার পর রাষ্ট্র ও সমাজে এ সম্পর্কে ধারণার ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। ওই সনদের আলোকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে ২০১৩ সালের ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এই বিলটি ৩ অক্টোবর পাস হয়। আর প্রতিবন্ধীদের কর্মদক্ষ করে তুলতে ও পূনর্বাসনে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু সেই সকল প্রকল্প নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বগুড়ার শিবগঞ্জ, সাতক্ষীরার আশাশুনি, পটুয়াখালী সদর, মৌলভীবাজার সদর, মাদারীপুরের শিবচর ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ওই ৬টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের জন্য অনুমোদিত পদ ৯০টি হলেও কাজ করছেন মাত্র ৪০ জন। আরো বলা হয়েছে, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অধীনে দেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু আছে। আরো ৪০টি চালুর প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সরকার প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে আন্তরিক। কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পূর্নবার্সনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নতুন স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে একটি করে ‘প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

তবে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র চলছে বলে দাবি করেছেন মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক গবেষক ম. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোকবল নেই। আর প্রতিবন্ধীরা জানেনই না তাদের জন্য কি এই ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, সেখানে যারা আছেন তারা প্রতিবন্ধী বান্ধব না। সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় পাস হওয়া আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রতিবন্ধীদের তুলনায় সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কম হলেও বেসরকারিভাবে তাদের নানাভাবে সুবিধা দেওয়া হয়। আর আগামীতে প্রশিক্ষণ ও পুনবার্সন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।একাধিক বেসরকারি সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, দেশে মাত্র ৩৫ শতাংশ কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্মের সাথে সম্পৃক্ত আছে। ৮৭ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্ম পাওয়া সত্বেও শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী বান্ধব কর্মপরিবেশ না থাকায় চাকুরী ছেড়ে চলে যায়। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্ঠিতে কর্মমূখী প্রশিক্ষণ, স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু ছাড় এবং চাকুরী ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী কোটা সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তাই প্রতিবন্ধীদের ক্ষমতায়নে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষা ও কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি প্রতিবন্ধীদের সংগঠনগুলোর।