প্রতারকদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে

0
197

প্রতারণার নতুন নতুন কৌশলে বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নানা পর্যায়ের নজরদারির কারণে এরইমধ্যে ছোট-বড় অনেক প্রতারককে আটক করা হয়েছে। তাদের প্রতারণার নানা কাহিনিও বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু তার পরও থেমে নেই প্রতারকচক্রের কারসাজি। প্রতারকচক্র নানা ছুতায় মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই প্রতারকদের কখনো ক্ষমতাসীন দলের নেতা সাজতে দেখা যায়। কখনো তাদের পরিচয় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা; এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয়েও অনেকে প্রতারণা করে থাকে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি বা ফটোশপের মাধ্যমে ছবি বসিয়েও প্রতারণা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে প্রচার করেও কেউ কেউ প্রতারণার ফাঁদ পাতে। এদের অনেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে শুরু করেছে প্রতারণা।
উদাহরণস্বরূপ, গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এক বাবা ও তার ছেলের বিষয়ে তথ্য রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই বাবা ও ছেলে মিলে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, পুলিশপ্রধানসহ বিশিষ্টজনের নাম ভাঙিয়ে অনেক মানুষকে বিপাকে ফেলছেন। দুটি ব্যাংকে তাঁদের হিসাবে প্রায় শতকোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ, যার কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। ছেলের বিরুদ্ধে ধানমÐি ও পল্টন থানায় প্রতারণা, মতিঝিল থানায় অস্ত্র ও মাদক এবং উত্তরা থানায় অপহরণসহ হত্যা মামলা রয়েছে। এত অভিযোগের পরও জামিনে মুক্ত থেকে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বাবা ও ছেলে; এমনকি তাঁদের কবলে পড়ে রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশ সুপারও খুইয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। গত বছর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাÐে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পরিবারও তাঁদের খপ্পরে পড়ে খুইয়েছে কয়েক লাখ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে ফুল বিক্রেতা শিশু জিনিয়াকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নারীর বিরুদ্ধেও রয়েছে প্রতারণার অনেক অভিযোগ। পুলিশের গোয়েন্দারা সিনিয়র সাংবাদিক পরিচয়ে তাঁর তদবির ও বহুরূপী প্রতারণার তথ্য পেয়েছেন। খবরে প্রকাশ, তাঁর বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর গলাচিপায় তিনটি হত্যা, অপহরণ ও মানবপাচারের মামলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আউটসোর্সিংয়ের কর্মী হিসেবে তিন মাস পিয়নের কাজ করেছিলেন এমন এক প্রতারক নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সচিব, কখনো উপসচিব, কখনো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক, আবার বর্তমান আওয়ামী লীগ সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
প্রতারকদের কৌশলের অন্ত নেই। দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়া, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিসহ বিভিন্ন টোপ ফেলে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। রাজনৈতিক দলের লোক পরিচয়ে অবৈধ প্রভাব খাটায়। আবার ক্ষমতাসীন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও অনেকের নৈকট্য রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অপরাধের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের বাঁচাতে কোনো সংসদ সদস্যই যেন চেষ্টা না করেন, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে চললে প্রতারকদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে যাবে বলে আমরা মনে করি। ক্ষমতাধর বা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় যতদিন না আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া বন্ধ হবে না, ততদিন প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। তাই প্রতারকদের পৃষ্ঠপোষকতা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে।