পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পকে রক্ষা করতে হবে

0
277

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পে দুই হাজার ৬২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ১৫০ কোটি এবং ডেইরি শিল্পে ৯১২ কোটি টাকা। এ দুই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রভাব অব্যাহত থাকলে পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে দেশের অনেক খামারির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পে ২০ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ দিনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ১৫০ কোটি টাকার বেশি বলে জানিয়েছে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজারে পোল্ট্রি পণ্যের দরপতন এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পারার কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ খামারি থেকে শুরু করে শিল্প উদ্যোক্তারা। প্রতিদিনই এ পরিমাণ বাড়ছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত দেশের একমাত্র পিআরটিসি ল্যাবটি বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে পোল্ট্রি শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালগুলো ছাড় করানো যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে থমকে যেতে পারে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প। করোনা সতর্কতায় জনসমাগম ঠেকাতে সরকারের গৃহীত পদেক্ষেপের কারণে পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে খুচরা হাট-বাজারে ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি ব্যাপক হারে কমেছে। চাল-ডালের দাম বাড়লেও ব্যাপক হারে কমেছে ব্রয়লার মুরগি, একদিন বয়সী বাচ্চা ও ডিমের দাম। পোল্ট্রি শিল্পে ইতোমধ্যে ভয়াবহ ধস নেমেছে। এরপরও যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে দৈনিক প্রায় একশ কোটি টাকা। তাছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বাজার স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও অন্তত এক মাস।
এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ডেইরি শিল্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯১২ কোটি টাকা। গত ২০ মার্চ থেকে প্রতিদিন ১২০ লাখ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। এতে দেশের খামারিদের প্রতিদিন প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আগামী এক মাস এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দুগ্ধ খামারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। বাংলাদেশে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো দেশের মোট উৎপাদিত দুধের মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিদিন সংগ্রহ করে। এর পরিমাণ মাত্র ১৩ লাখ ৫৯ হাজার লিটার। বাকি ২ কোটি ২৮ লাখ ৩৬ হাজার লিটার খামারিরা মিষ্টির দোকানগুলো ও বাসাবাড়িতে বিক্রি করেন। করোনাভাইরাসের কারণে নানা অস্থিরতা দেখা দেয়ায় বর্তমানে মিষ্টির ও দধির দোকান সবই বন্ধ। করোনা সংকট চলতে থাকেলে অচিরেই প্রায় ৫০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পকে রক্ষা করা না গেলে অচিরেই দেশে আমিষ জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি দেখা যাবে। এছাড়া এসব শিল্পের সাথে জড়িতরা ব্যাপকহারে কর্মহীন হয়ে পড়বে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ার পাশাপাশি দারিদ্র ও সামাজিক সংকটও তৈরি হবে। যদিও পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের আর যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে, করোনা সংকটকালীন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই প্রাণিজ পুষ্টির উৎস দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এ-সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে পোল্ট্রি, ডিম, একদিন বয়সী মুরগীর বাচ্চা, হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য, দুগ্ধজাত পণ্য, অন্যান্য প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য, মাছ, মাছের পোনা ও মৎস্য খাদ্য সরকারঘোষিত ছুটিকালীন নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন সচল রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। এটি ভালো খবর। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আগামী কয়েকদিনে কেমন হবে তার উপরে নির্ভর করছে সব ধরণের শিল্প এবং ব্যবসা কার্যক্রম। তবে আমরা কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আশা রাখতে চাই।