পুঁজি সংকটে মোরেলগঞ্জের স্বপ্নবাজ তরুন উদ্যোক্তারা, বাড়ছে “বেকারত্ব”

0
195
SAMSUNG CAMERA PICTURES

মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি:
মোরেলগঞ্জের মো. তানভীর হোসেন, রাস্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতক। একটি দুদ্ধ জাত গরুর খামারের সত্বাধীকারী। তিনি বলেন, ‘বলা হয়, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আখড়া। তাই নিজেকে যুটা গতিশীল আর কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখা যায়, ততই উত্তম।

বৈশ্বিক মহামারিতে গোটা দুনিয়া যখন থমকে যায় যায় অবস্থা, ঠিক তখনই অনেক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে এর মধ্যে কিছু একটা করতেই হবে চাকরির পেছনে ঘুরে আর সময় নস্ট করবো না। অনেক চেস্টা করে ব্যাংক ঋনের ব্যাবস্থা করতে পারি নি, নিজ অর্থায়নে চারটি দুদ্ধজাত গরু নিয়ে খামার শুরু করি।পুজি সংকটে খামার বড় করতে পারছি না,লোনের জন্য ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হলে ব্যাংকের বেধে দেয়া নানা শর্ত আমাকে লোন নিতে নিরুৎসাহিত করছে, সহজণর উপায়ে, স্বল্প সুদে লোন পাওয়া যাচ্ছে না, তাই মানসিক ভাবে এখন অনেকটা চিন্তিত কিভাবে সফল খামারি হবো। কথা হয় মোরেলগঞ্জের আরেক বেকার তরুন আল আমিন শেখের সাথে, গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে বাড়িতে বেকার বসে দিন পার করছিলো, করোনা ভাইরাসের কারনে দেশে সকল সরকারী চাকরির আবেদন বন্ধ রয়েছে,বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরীর জন্য আবেদনও করেছে কিন্তু কোন প্রতিস্টান তাকে ইন্টারভিউের জন্য ডাকে নি, অবশেষে তিনি চাকরীর আশায় না থেকে নিজ বাড়িতেই গড়ে উঠেছেন মৎস খামার। সরকারী একটি সরকারি প্রতিস্টান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেছেন স্বপ্নের মৎস খামার, হতে চান একজন সফল খামারী।

সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৪% সুদে বঙ্ঙ্গবন্ধু যুব ঋন চালু করেছিল, অনেক চড়াই, উৎড়াই পাড় করে ৪% সুদে তিনি এক লক্ষ টাকা ঋন গ্রহন করেছিল, যেটা তার কাঙ্খিণ চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কম ছিল বলে অভিযোগ তার এবার বলছি মোরেলগঞ্জ একজন নারী উদ্যোক্তা তামান্না আক্তারের কথা। পৌর সদরে বাড়ি এই নারীর। মাস্টার্স শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মোরেলগঞ্জে ছোট্ট বুটিক হাউজ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। দুই বছর আগের শুরুটা স্বল্প পুঁজি দিয়ে হলেও আর্থিক জোগানের অভাবে এই তরুণ নারী উদ্যোক্তার স্বপ্ন এখন ভঙ্গের পথে, তারপরেও ঘুরে দাড়াতে চান তামান্না,তিনি বলেন নিজ অর্থায়নে ব্যবসায়ের প্রথম স্টেজ পার করে যখন দ্বিতীয় স্টেজে যাই, সে সময়ে আমার টাকার প্রয়োজন হয়। তখন আমি মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানে যাই, তারা আমাকে লোন পাওয়ার জন্য নানা শর্ত জুড়ে দেয়। একজন নারী হয়ে কতবার একটি প্রতিস্টানে যাওয়া সম্ভব, তরুন এই নারী উদ্যোক্তা সরকারের ঋনের শর্তগুলো সহজণর হয় সেই দাবি করেছেন।

মোরেলগঞ্জের এরকম হাজারো শিক্ষিত তরুন মেধাবী মুখ রয়েছে, যারা চাকরি না পেয়ে বাড়িতে বসে অলস সময় পার করছেন, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তারা নিজ উদ্যোগে সাবলম্বি হতে পারছে না, তাদের অভিযোগ শিক্ষিত বেকার হয়েও দক্ষ প্রশিক্ষনের অভাব, ঋনের প্রক্রিয়া সহজণর না হওয়ায় তারা বুঝে উঠতে পারছে না তারা কিভাবে বেকারত্ব সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন মোরেলগঞ্জের কিছু তরুন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে অেিভ্যাগ শোনা যায় যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের বিনা সুদে ঋণ দিতে রাজি না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক এর আদেশ থাকলেও জামানতবিহীন ঋণের ব্যাপারে ব্যাংকরা খুব রক্ষণশীল।

অর্থসংকটে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা গেছে। কথা হয় এ রকম কয়েকজনের বেকার সাথে,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেকার তরুন বলেন সরকার যেভাবে তরুন প্রজন্মকে জাগ্রত করেছে তাতে আমরা নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই,তাই আমাদের দক্ষ প্রশিক্ষণ, ব্যাংক ঋন সহজণর করা হলে আমরা সফল উদ্যোক্তা হতে পারবো, যদি আমাদের কাছে টাকা থাকত তাহলে সরকারের কাছে টাকা কেন চাইব।তাদের অভিযোগ, শুধু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও পুজির অভাব ও ব্যবসায়িক কাগজপত্র করতে নানা জাটিলতায় মাঝপথেই থেমে যেতে হয় অনেক উদ্যোক্তাদের,পুজির অভাবে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান কাঙ্খিণ লক্ষে পৌছাতে পারছে না, আমরা জানি কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা বাস্তবায়ন করার জন্য যিনি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তাকে উদ্যোক্তা বলা হয়। অর্থাৎ উদ্যোক্তা হল সংগঠক। উদ্যোক্তা হলো নিজ আগ্রহে নিজে কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করা।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশের শিক্ষিত তরুণ বেকারদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। এটি একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য এবং তার দূরদর্শিতার পরিচায়কও বটে।

কিন্তু এ দেশের বাস্তবুায় এটি কতটা প্রয়োগযোগ্য সঠিক ব্যাবস্থাপনার অভাবে তরুনদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তরুণ উদ্যোক্তা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি কমছে। কিন্তু এই ঝরে পড়ার কারণ বিশ্লেষণ করছেই বা কজন।উদ্যোক্তা হতে আগ্রহ আছে অনেকের আবার বিভিন্ন বাঁধার জন্য পিছিয়ে পড়ছে মোরেলগঞ্জের অনেক স্বপ্ন বাজ বেকার তরুণ। বাঁধার মধ্যে রয়েছে, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কোন প্রকার সাপোর্ট না পাওয়ার জন্য। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহ তৈরিতে বাঁধা রয়েছে পরিবার ও সমাজের। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এই কাজ করতে হয়, এসব ব্যবসা করতে হবে তাহলে পড়াশোনা কেন করলো।

এজন্য তরুণ সমাজ উদ্যোক্তা হতে আগ্রহ ও ইচ্ছা দুটিই হারায়। আর রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন সহযোগীতা না পাওয়াতেও ইচ্ছে হারায় তরুণ উদ্যোক্তারা। দেশে শ্রম অনেক সস্তা হওয়া সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে কাঙ্খিণ বিনিয়োগ আসেনি বাধাগুলো দূর না হওয়ায়। নীতি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে বিরাট ফারাক। তাই বাংলাদেশ এখনও উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত বন্ধুর। উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে নানারকম প্রশাসনিক জটিলতা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও উদ্যোক্তাবান্ধব নয়। দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ৯০ শতাংশ উদ্যোগই কৃষিভিত্তিক। অর্থাৎ জমির মালিক না হলে ব্যবসা শুরু করা মুশকিল। আর অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণ পারিবারিক সূত্রে নিম্ন বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত। তাদের পড়াশোনাই চলে একমাত্র সম্বল সামান্য জমির ওপর নির্ভর করে বা জমি বিক্রির টাকার উপর। চাকরি মুখী শিক্ষা ব্যবস্থা আরো বেশি বাঁধা তরুণ উদ্যোক্তাদের।শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করা প্রয়োজন।

রাষ্ট্রীয় ভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা এবং সঠিকত।তরুণ উদ্যোক্তাকে সাহায্য করার মাধ্যম উদ্যোক্তা তৈরি করা। তাছাড়া অধিকাংশ ব্যাংক ঋণ দেয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে, হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা, জামানত হিসেবে জায়গার দলিল প্রদান ইত্যাদি ইত্যাদি। তরুন উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের ঋন সহায়তার বিষয়ে কথা হয় সোনালী ব্যাংক মোরেলগঞ্জ শাখার ব্যাবস্থাপক সুমন কুমার শীলের সাথে, তিনি শুনালেন ভিন্ন কথা, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন ব্যাংক একটি লাভজনক ও মুনাফা প্রত্যাশী প্রতিষ্ঠান। ভালো গ্রাহকের সন্ধান তারা নিজ তাগিদেই করে। বিপণনের জন্য তারা প্রচুর খরচ করে।

উদ্দেশ্য একটাই ভালো এবং নতুন উদ্যোক্তা বা গ্রাহক পাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিস্ট ব্যাংকিং নীতিমালা ঠিক রেখে ব্যাংক সকল উদ্যোক্তাদের ঋন সহায়তা প্রদান করে থাকেন। তিনি বলেন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মোরেলগঞ্জের শত উদ্যোক্তাকে ৪% সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যাংক ঋন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তরুন উদ্যোক্তাদের ব্যাংক লোনের ব্যাপারে কর্মসংস্থান ব্যাংক মোরেলগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মোঃআব্দুস সালাম বলেন সরকার কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের ১৮ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত বয়সের কোটি তরুন উদ্যোক্তাদের ৪%, ৮%, সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋন সহায়তা প্রদান করছেন, তাছাড়া মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকার বঙ্গবন্ধু যুব ঋন চালু করেছিল, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মোরেলগঞ্জে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বঙ্ঙ্গবন্ধু যুব ঋন প্রদান করা হয়েছে,সরকারি প্রতিষ্ঠান কোন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহন করে আমাদের কাছে ঋনের আবেদন করলে আমরা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের ঋন সহায়তা প্রদান করে থাকি। মোরেলগঞ্জ উপজেলার কিছু উদ্যোক্তার অভিজ্ঞতা বলে, স্বল্প পুঁজি নিয়ে দরিদ্র পরিবারের যে শিক্ষিত তরুণরা ভালো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাদের মধ্যে শতকরা পাঁচজনই সফল হয় না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক অবস্থা ও ঝুঁকি। যেমন, কেউ একজন মাছের চাষ বা গরুর খামার করল, কোনো কারণে মাছ বা ওই গরুগুলো মরে গেলে হতাশাগ্রস্ত ও ঋণগ্রস্তদের পাশে কি কেউ দাঁড়ায়? সভা, সমাবেশ ও সেমিনারে আমরা বলতে পারি- উদ্যোক্তা হও, দেশ গড়ো। কিন্তু এর প্রকৃত পৃষ্ঠপোষক ক’জন?

উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উপরোক্ত বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধান করে এর জন্য একটা অনুকূল ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রণয়ন করতে হবে যুগোপযোগী নীতিমালা। তবে এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ায় দেশের র্বুমান অপার সম্ভাবনাময় ও শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে চাকরি ক্ষেত্রে কাজে লাগানোই উচিত। এতে করে অন্তত র্বুমান প্রজন্ম কর্মে প্রবেশের মাধ্যমে বেকারত্ব থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারবে। আর এই জনশক্তির অপচয় রোধকল্পে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগটা দ্রুত উন্মুক্ত করে দেয়াই যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছি। যু বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হবে তত বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং তত বেকার সমস্যা কমবে।তাই সরকার এর এই তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আগ্রহ দেখাতে হবে। এতে শিক্ষিত যোগ্য উদ্যোক্তা তৈরি করা সম্ভব।

খুলনা টাইমস/এমআইআর