পিরোজপুরে স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে দলীয় কার্যালয়

0
1162

পিরোজপুর প্রতিনিধি: পিরোজপুর জেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চুংগাপাশা গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক এর নামে ৩৬ শতাংশ জায়গা রয়েছে। যার দলিল নং ৭৩/৯৫ তারিখ ০৭-০১-১৯৯৫ইং। ১৯৯৫ সাল থেকে এই জায়গায় দক্ষিণ পূর্ব চুংগাপাশা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৪ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় সিডরে এই স্কুলটি ভেঙে পড়ে। এরপর দীর্ঘদিন স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এই সুযোগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক এর নামে থাকা জমির ১৮ শতাংশ জমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালকের বিনা অনুমতিতে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে দুই ব্যক্তি বিক্রয় করে।
এভাবে সরকারি জমি অবৈধ ভাবে বেদখল হতে দেখে ২০১১ সালে স্থানীয় গণ্যমান্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করে পুনরায় স্কুলের কার্যক্রম চালু করা সিদ্ধান্ত নেয়। তেজদাসকাঠী কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহিদুল ইসলামের দেয়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক এর নামে দেয়া জায়গায় একটি পাকা ঘর উঠিয়ে পূর্বের স্কুলের সাথে নামের মিল রেখে দক্ষিণ পূর্ব চুংগাপাশা (ডিপিসি) একাডেমী নামে পুনরায় স্কুলের কার্যক্রম চালু করে। স্কুলটি সুনামের সাথেই পড়াশোনা চলতে থাকে।
স্কুলটি লেখাপড়ায় ভালো করায় পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল স্কুলের সামনের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক এর নামে থাকা খালি জায়গার মাঠ ভরাট করার জন্য ৫ টন গম বরাদ্দ দেন এবং সেই গমের টাকা দিয়ে এই স্কুলের সামনের মাঠ ভরাট করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ছাত্র-ছাত্রীদের সরকারী বই প্রদান করেন। যার চালান নং ৪৪৬১৬২। বিদ্যালয়টির ইএমআইএস কোড ৫০২০৩০৮২১-০৬। জেলা শিক্ষা অফিসার স্কুলটি পরিদশর্ন করে স্কুলটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।
বর্তমানে স্কুলটি ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল স্কুলের সামনের মাঠটি দখল করে নিয়ে স্কুলের সামনে থেকে কাটাতারের বেড়া দিয়ে দিয়েছে। দখলকারীরা মাঠের মধ্যে ছোট্ট ঘর তুলে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের অফিসের একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। ফলে এখন স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করার সুযোগটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানায় ইতিমথ্যে দুইটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। (নং ১৯০ তারিখ ০৫-০৭-২০১৪ ইং এবং ১৩৬ তারিখ ০৪-০১-২০১০ইং)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক এর নামে থাকা ৩৬ শতাংশ জায়গা (ডিপিসি) একাডেমী স্কুলের শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেই জায়গায় গত ৪ জানুয়ারী গভীর রাতে একটি কুচক্রী মহল ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে এলাকায় বোমা ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের ৮নং ওয়ার্ডের কার্যালয় নাম দিয়ে দুটি ঘর উঠিয়ে তার কাটার বেড়া দিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বাধা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, উক্ত বিরোধীয় জায়গার উপরে পিরোজপুর জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে (এম পি কেস নং ৭০/১৬) একটি মামলা রয়েছে। ১৩/০৯/২০১৭ ইং তারিখে আদালত এই মামলার রায়ে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে শান্তি বজায় রাখতে আদেশ দেন। কিন্তু এই কুচক্রী মহল আদালতের রায় অমান্য করে ০৪/০১/২০১৯ ইং তারিখ গভীর রাতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে এলাকায় বোমা ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের ৮নং ওয়ার্ডের কার্যালয় নাম দিয়ে দুটি ঘর উঠিয়েছে। স্কুলের সামনে যে আওয়ামী লীগের অফিস ঘর উঠিয়েছে তার ৪০০ গজ সামনেই বাজারে আওয়ামী লীগের অফিস রয়েছে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ পূর্ব চুংগাপাশা (ডিপিসি) একাডেমীর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাহাদাত হোসেন মৃধা ২০/০১/২০১৯ইং তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। মন্ত্রী অভিযোগটি আমলে নিয়ে মো. মাহাবুবুর রশীদ সাক্ষরিত যার স্বারক নং-৩৮.০০.০০০০.০০৭.২৭.০০৩.১৯/৪০৯ তারিখঃ ২৭-০১-২০১৯ইং পত্রে পিরোজপুর জেলা প্রশাসকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলেছেন। কিন্তু এই পত্র পাঠানোর ৪২ দিনেও জেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।