পাটকল শ্রমিক নেতাদের মাসব্যাপী নানা আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা

0
856

এম জে ফরাজী, খুলনাটাইমস:
খুলনা-যশোরসহ সারাদেশের মজুরী কমিশন, সাপ্তাহিক মজুরী বঞ্চিত পাটকল শ্রমিকদের দ্বিতীয় পর্বের আন্দোলন কর্মসূচি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছে শ্রমিক নেতারা। কর্মসূচিতে রাজপথ রেলপথ অবরোধ, ভুখা, লাল পতাকা, লাঠি মিছিলের মতো কর্মসুচি রয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে ১২ জানুয়ারী থেকে ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের সিবিএর সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন। এসময় তিনি দেশের সকল পাটকলে সম্পৃক্ত প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবিকার উৎস ও জাতীয় সম্পদ পাট, পাটজাত পণ্য এবং পাট শিল্প সুরক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, সরকারী কর্মচারী, কর্মকর্তাদের ২০১৫ সাল থেকে পে কমিশন ঘোষণা করে তা প্রদান করা হচ্ছে। শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মজুরী কমিশন প্রদান দুরের কথা এখন পর্যন্ত মজুরী কমিশন বোর্ড গঠন এবং বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়িনি। শ্রমিকরা মজরী কমিশন দাবী করলে তাদের মামলা দিয়ে চাকুরীচ্যুত করা হচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের সপ্তাহিক মজুরী ও বেতন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। টানা আন্দোলন ও মিলের চাকা বন্ধ রাখার বিষয়ে বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা প্রসঙ্গে ২০১৬ সালে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রনালয় এবং বিজেএমসির কাছে লিখিত দাবী নামা দিয়ে ধরনা দিয়েছের শ্রমিক নেতরা। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের কথা বিবেচনা ও পাট শিল্পকে রক্ষা করতে ১ হাজার কোটি টাকা প্রদানের ঘোষনা দেন। ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল পাট মন্ত্রী বকেয়া মজুরী, বেতন, ২০% মহার্ঘভাতার বকেয়া, চাকুরীচ্যুতদের সকল পাওনা, শ্রমিক ধর্মঘটের ৯ দিনের হাজিরা এবং ২০১৬ সালের ১ মে মজুরী কমিশন ঘোষনা করার প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু ঘোষনা আজো বাস্তবায়ন করা হয়নি। মিল অচল প্রসঙ্গে বিজেএমসিকে দায়ী করে শ্রমিক নেতারা বলেন পাট শিল্পকে সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করার জন্য সৎ ও দক্ষ প্রশাসন তৈরী করতে পারেনি বিজেএমসি। বর্তমান প্রশাসন নি¤œমানের কাঁচা পাট ক্রয়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল গুলিতে দীর্ঘদিনের ম্যাশিন ও যন্ত্রপাতি সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তাদের বিষয়ে নেতরার বলেন, মিলে আর্থিক সংকট দেখাচ্ছেন কর্মকর্তারা। শ্রমিক আন্দোলনের মুখে মোড়কি আইন (প্যাকেজিং এ্যাক্ট) ২০১০ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর সুফল ধরে রাখতে পারেনি কর্মকর্তরা। শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বস্তা তৈরী করলেও দক্ষ প্রশাসনের জন্য উৎপাদিত পন্য বাজার জাত করতে পারেনি। কর্মকর্তাদের চক্রান্তে প্যাকেজিং এ্যাক্ট’র পন্য বে সরকারী পাটকল গুলিকে বাজার জাত করার সুযোগ দিয়েছে। এতে রাষ্ট্রয়াত্ব পাটকলের বস্তার মান উন্নত হলেও বাজার জাত করার অন্তরায় কর্মকর্তরা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে ঢাকা থেকে মুঠা ফোনে খালিশপুর জুট মিলের সিবিএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান মানিক জানান, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের কার্যকারী আহবায়ক খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন, ইউএমসি জুট মিলের সভাপতি আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আকতারুজ্জামান, হাফিজ জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দিদারুল আলম চৌধুরী, করিম জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক আঃ সালাম, বাংলাদেশ জুট মিলের সভাপতি মোঃ ইউসুফ সরদার, আমিন জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ, গালফ্রা হাবিব মিলের সভাপতি মোঃ শরিয়তউল্যা, জেজেআই জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ মল্লিক, ইর্ষ্টান জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক এস,এম জাকির হোসেন, স্টার জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক আঃ মান্নান, খালিশপুর জুট মিলের সভাপতি মিজানুর রহমান মানিক, আলিম জুট মিলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিটু, ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সভাপতি মোঃ দ্বীন ইসলাম, সাবেক সহ-সম্পাদক আবু হানিফ, প্লাটিনাম জুট মিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, খালিশপুর জুট মিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার আলী আহমেদসহ সিবিএ-নন সিবিএ নেতরার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ১১ দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য যে বক্তব্য পাঠ করা হয়েছে তার অনুলিপি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট ও শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রনালয়ের সচিব, শ্রম পরিচালক রাজউক ঢাকা এবং বিজেএমসিতে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফা আন্দোলনের বিষয়ে সোহরাব হোসেন জানান, আগামী ১২ জানুয়ারী বিকাল ৩টায় খুলনার খালিশপুরে ও জন সভা, ১৩ জানুয়ারী ঢাকা ও চট্টগ্রামে সকাল ১০ টায় গেট সভার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফার আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষনা করা হবে। ১৫ জানুয়ারী পাট শিল্প অধ্যুষিত জেলা গুলিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশে এবং ১৭ জানুয়ারী সকাল ১১টায় লাল পতাকা মিছিল। ২১ জানুয়ারী স্ব-স্ব পাটকলে সকাল ১১ টায় রাজপতে লাঠি মিছিল ও ২৪ জানুয়ারী বাসন হাতে ভুখা মিছিল। ২৫ জানুয়ারী সাংবাদিক, পেশাজীবি সংগঠনগুলোর সাথে মতবিনিময় সভা। ২৬ জানুয়ারী স্ব-স্ব শিল্প এলাকায় বেলা ৩ টায় শ্রমিক জনসভা। ২৮ জানুয়ারী ৪৮ ঘন্টার হরতাল ও রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল। ৩১ জানুয়ারী সকাল ৮ থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত রাজপথ, রেলপথ অবরোধ করার কর্মসুচি ঘোষনা করেন শ্রমিক নেতারা। আন্দোলন চলাকালে কর্তৃপক্ষ দাবী না মানলে ৪ ফেব্রæয়ারী ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে কঠোর কর্মসুচি নেয়া হবে বলে নেতারা জানান।