পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যপারটি পূন: বিবেচনা করা উচিৎ

0
125
মুম্বাইয়ে পরিত্যক্ত হাসপাতাল থেকে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার

টাইমস সম্পাদকীয় : গত ৯’জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন জাতীয় সংসদে। এটি তার উপস্থাপিত চতুর্থ বাজেট। তার দু’টি বাজেট ছিল করোনা-কালীন। এবার করোনার প্রকোপ না থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ^ অর্থনীতি সংকটে রয়েছে। যার ঢেউ বাংলাদেশেও পড়েছে। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ বলে ঢাকঢোল পেটালেও এ সংকটের সময় অধিকাংশ খাদ্য পণ্য আমদানি করতে হয়েছে। গত কয়েক মাসের বৈদেশিক খতিয়ান দেখলে চক্ষু চড়ক গাছ।
অর্থমন্ত্রী জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ ধরে ছ’লাখ ৭৮হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। আগের অর্থবছরে ছিল ছ’লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে তা কমে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকাতে দাড়ায়। প্রাক্কলিত বাজেট ও সংশোধিত বাজেটের মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকে। যা থেকে অর্থমন্ত্রী বেরুতে পারেন নি। তবে এবার বাজেটে দেশে সর্বজনীন পেনশন চালুর সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, দেশের শ্রমবাজারের ৮৫ শতাংশ জনবল অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো না থাকায় বৃদ্ধকালে তাদের জীবন যাপনে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা থাকে। সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরেই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেট (২০১৯-২০ অর্থবছরে) বক্তৃতায় দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার চার বছর পর তা বাস্তবায়িত করার ঘোষণা দিলেন। ২০০৮ সালের নির্বচনই ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সু-সংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, তাঁদের বৃদ্ধ-কালীন সুরক্ষা নিশ্চিতে জাতীয় ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। একই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল-পত্রে একটি ব্যাপক ভিত্তিক সমন্বিত অংশগ্রহণমুলক পেনশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য একটি খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এবছরই তা সংসদে উপস্থাপন করে পাশ করা হবে। তারপরে পেনশন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। আগামী অর্থবছর থেকে এ ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করা হবে। উদ্যোগটি নি:সন্দেহে উৎসাহ ব্যঞ্জক ও অভিনন্দন যোগ্য। অন্যদিকে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ যত সামান্য কর দিয়ে দেশে ফিরত আনার প্রস্তাবটি দেশের অর্থনীতিবিদরা অনৈতিক হিসেবে বিশ্লেষণ করেছেন। গত ৫০ বছরে সব সরকারই কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক সুযোগ দিলেও তা সাদা হয়েছে যত সামান্যই। তাই পাচার হওয়া অর্থও দেশে অনেকেই আনতে চাইবেন না। তবে অনেকে মনে করছেন, কানাডায় স¤প্রতি বিদেশীদের বাড়ি কেনা বন্ধ ঘোষণা করায় কেউ কেউ টাকা ফিরত আনতে চাইবেন।
ঘটনা যাই ঘটুক এ অনৈতিক ব্যাপারটি চলতে দেয়া উচিত নয়। তাই বাজেট পাশের আগে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিৎ। বিশ^ অর্থনীতির এ টালমাটাল অবস্থায় এমন সুযোগ দেশের অন্য জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।