পাইকগাছা-কয়রার কাঠালতলা বদ্ধ জলমহলের দখল নিতে পারেনি মৎস্যজীবী সমিতি

0
532

শেখ নাদীর শাহ্, কপিলমুনি(খুলনা):
পাইকগাছা-কয়রার সীমান্তবর্তী কাঠালতলা বদ্ধ জলমহলের ইজারাদারদের ৫ টি বাসা অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার ভোরে জলমহলের বাইনবাড়িয়া ও চান্নিরচক এলাকায়। ধারণা করা হচ্ছে, জলমহলটি নিতে ব্যর্থ হয়ে পূর্বের ইজারাদাররা বর্তমান ইজারাদারদের ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সর্বশেষ ঘটনায় এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযোগে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার পাইকগাছা সীমান্তবর্তী ভান্ডারপোল মৌজায় কাঠালতলা বদ্ধ জলমহলটি সরকারের ১ খতিয়ানের ১৪৪৩, ১৬ ও ৪৭ দাগের ২৭.০৮ একর জমি। যা খুলনা জেলা প্রশাসকের সায়রাত কেস নং- ২০/২০১৯, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সায়রাত কেস নং- ১, তাং- ০৪/০৪/১৯ দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, খুলনাকে নির্দেশ দিলে গত ২৪ এপ্রিল কয়রার পাটনীখালী পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ৬ বছর মেয়াদী ইজারা নেন।
ইতোপূর্বে উক্ত জলমহলের উত্তর খন্ডে রবিউল ইসলাম ও তৌহিদ হোসেন চান্নিরচক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিকট থেকে ৩ বছর মেয়াদী দেখাশুনার দায়িত্ব নেন। তাদের মেয়াদ ৩০ চৈত্র ১৪২৫ শেষ হয়, কিন্তু রবিউল জলমহল ছেড়ে দিলেও তৌহিদ হোসেন অবৈধভাবে জলমহলটি দখল রেখেছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খুলনা থেকে আসা তৌহিদ হোসেন ও রায়হান এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে জলমহল এলাকায় তাদের নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের ভয়ে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবন যাপন নানাভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। জনৈক মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে তারা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। জলমহলে স্থানীয়দের কোন হাঁস গেলেও তা ফেরত আসে না। তাদের সাথে বিল্লাল,রহমান,আজগার,সাঈদ,খোকন,আয়জুল,কার্তিক,সাইফুল গংরা সংঘবদ্ধভাবে খালের দু’পার পাইকগাছার বাইনবাড়িয়া ও কয়রার চান্নিরচক গ্রাম দু’টি সন্ধ্যার পর আতংক সৃষ্টি করে। তাদের হামলা-মামলার ভয়ে এলাকাবাসীও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না। জলমহলের বর্তমান ইজারাদাররা জানান,পাইকগাছা এবং কয়রা সীমান্ত দিয়ে তাদের কয়েকটি ছোট ছোট বাসা ছিল। শুক্রবার ভোর রাতে তারা বর্তমান ইজারাদারকে ফাঁসাতে প্রধান বাসা সহ ৫টি বাসায় আগুন জ্বালিয়ে ভস্মিভূত করে দেয়। খালের পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা প্রসাদ চক্রবর্তী, জয়ন্ত মন্ডল, সঞ্জয় মন্ডল, বাপ্পী মন্ডল, নিতিশ বৈরাগীরা জানান, শুক্রবার ভোরে জনৈক কার্তিক,বিল্লাল,সাইফুল ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকারে দিয়ে বাসাগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই দাবি, খালের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ফুলকি মন্ডল, মমতা মন্ডল, শেফালী মন্ডল সহ একাধিক মহিলারা।
বর্তমানে ইজারাদার পাটনীখালী পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষে সভাপতি আনিছ সরদার প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা সরকারী রাজস্ব জমা দিয়েও এখন পর্যন্ত জলমহলটির দখল নিতে পারেননি। অন্যদিকে বাসা পুড়ানোর ঘটনাটি তাদের দখল প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। পাটনীখালী পূর্বপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আনিছ সরদার বলেন, ভোরে তৌহিদরা ঘেরের বাসায় আগুন ধরিয়ে তাদের নামে ব্যর্থ দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। তবে থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে তৌহিদ হোসেন জানান, এখানে এনটিভি চ্যানেল এসোছিল। তারা বিস্তারিত নিয়ে গেছে। এছাড়া কোন মন্তব্য করতে রাজী হয়নি। কয়রা থানার ওসি তারক বিশ্বাস জানান,খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনায় কেউ কোন প্রকার অভিযোগ তাদের কাছে করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।