পাইকগাছায় বছরজুড়ে চিংড়িতে মড়ক: লোকসানের মুখে হতাশাগ্রস্থ চাষীরা

0
435

:::শেখ নাদীর শাহ্:::


বছরের শুরু থেকে শেষ সময়েও চিংড়িতে মড়কের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পাইকগাছা উপজেলার চিংড়ি চাষীরা।বছর জুড়ে অনাবৃষ্টি, পানিতে লবণাক্ততার হার বৃদ্ধি,ভাইরাসের আক্রমণসহ বিভিন্ন কারণে কাংখিত চিংড়ি উৎপাদনে ব্যার্থ হয়েছেন উপজেলার সর্বোস্তরের চিংড়ি চাষীরা। ফলে লোকসানের মুখে রীতিমত হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। মৌসুমের প্রায় শেষ সময়ে এসে চিংড়ির আবাদ কিছুটা ভাল হলেও প্রথম দিকের লোকসান কাটিয়ে উঠার আগেই আবার বিভিন্ন সমস্যার কারণে উৎপাদন খরচ উঠানো নিয়ে আশংকায় রয়েছেন তারা।

ব্যাপক হারে চিংড়ি মরার কারণ হিসেবে চাষিরা ভাইরাস সংক্রমণের দাবি করেন। তবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন কিছুটা ভিন্ন কথা। এখন পর্যন্ত মরা চিংড়িতে তারা কোনো রোগবালাই খুঁজে পাননি বলে দাবি করেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা । তাদের ধারণা, বৃষ্টি না হওয়ায় গরমের সময় ঘেরগুলোতে পর্যাপ্ত পানির অভাব, পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত নানা কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ি মরে যাচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাযায় কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে আট হাজারের মত চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর আয়তন প্রায় ২২ হাজার হেক্টর। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে চিংড়ির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরও চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় চলতি বছর ঘেরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এবারও মৌসুমের শুরুতে ব্যাপক হারে বাগদা চিংড়িতে মড়ক ও শেষ সময়েও বিভিন্ন সমস্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ের চিংড়ি চাষীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ঘের প্রস্তুত করে তারা হ্যাচারীর পোণা ছেড়েছিলেন। আবার অনেকেই স্থানীয় নদী থেকে আহরণ করা পোণা ছেড়েছিলেন,কিন্তু যে সব ঘেরে হ্যাচারির পোণা ছাড়া হয়েছিল সে সব ঘেরে অধিকাংশেরই চিংড়িতে তুলনামূলক বেশি মড়ক লক্ষ্য করা যায়। এভাবে কয়েকদফা পোনা ছাড়লেও সেগুলোর অধিকাংশই মারা গেছে।

এব্যাপারে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ বলেন, মৌসুমের প্রথমে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঘেরের পানি ও মাটিতে এর প্রভাব পড়ে। ফলে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে চিংড়ি মরতে শুরু করে। এছাড়া ঘের তৈরী করার সময় চাষিরা মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না, নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ না করাসহ, বিভিন্ন কারণে মাছ মারা যায়। এর উপর বৈরি আবহাওয়ার কারণেও মাছা মারা গেছে।

উৎপাদনের ঘাটতির কারণে গেল অর্থ বছরেও রপ্তানী কম হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানাযায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ি ও সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার ৬ দশমিক ৮২১ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গলদা, বাগদা ও অন্যান্য চিংড়ি মাছ রপ্তানি হয়েছে ২৪ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ২ হাজার ১৭১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।