পাইকগাছায় গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ

0
443

শেখ নাদীর শাহ্:
শীতের শেষে ফাগুনের হাওয়ায় গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। বাগান জুড়ে মৌমাছির গুঞ্জন আর ফাগুনের হাওয়ায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়া এ মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ একদিকে যেমন প্রকৃতি প্রেমিদের মুগ্ধ করছে পাশাপাশি জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। এবছর শীতের প্রভাব কম থাকায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় আম গাছে আগাম ধরেছে মুকুল ।
সরেজমিনে পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, সদ্য মুকুল ফোটার দৃশ্য এখন ইট পাথরের পৌরসভা শহর থেকে শুরু করে বিস্তৃত পাইকগাছার গ্রাম্য জনপদেও। উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নের আম বাগান গুলোতে মুকুলে ছেয়ে গেছে। আম গাছে মুকুল আশার আগে থেকে পরিচর্যা করলেও বর্তমানে চাষী ও বাগান মালিকরা বাগানের পরিচর্যা নিয়ে বেশ কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ ব্যাপারে কথাহয় কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা ও বাগান মালিকদের সাথে।তারা জানান,পূর্বে পাইকগাছায় আমের মৌসুমে “অফ ইয়ার” এবং “অন ইয়ার” থাকত।এর কারণ হিসাবে দায়ী করেছেন পরিচর্যার অভাব ও মাটিতে গাছের পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবকে। কিন্তু প্রায় এক যুগেরও বেশ কিছু সময় অতিবাহিতের পর হলেও বছরজুড়ে নিয়মিত পরিচর্যা,গাছের গোড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি সেচের ফলে সব বাগানের গাছগুলোতে নিয়মিত খাদ্য পাচ্ছে এবং চাষীদের এ অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে পূর্বের রেওয়াজ ভেঙেছে। যে কারণে আশানুরূপ ফলন বেড়েছে। উপজেলার গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, রাড়ুলী, পৌরসভা, চাঁদখালীসহ বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
কপিলমুনি ইউনিয়নের পুরস্কারপ্রাপ্ত আম চাষী অখিল বন্ধু ঘোষ জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু করেছে। আমরা কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বাগানে এসে আমের ভাল ফলন পাওয়ার বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন।
এদিকে আমের আগাম মুকুলে চাষীরা খুঁশি হলেও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা শঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন,পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই মুকুল আসা ভাল না,ঘন কুয়াশায় মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও ফাগুনে কুয়াশার আশংকা কম তারপরও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পাইকগাছা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান,এ বছর উপজেলায় মোট ৫৮৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে।যার প্রায় ৬০-৭০ ভাগ গাছে মুকুল চলে এসেছে,তাই চাষীদেরকে বলেছি ফুল ফোটা অবস্থায় কোন ঔষধ বা কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য। তবে ফুল ফোটার সময় মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্প মঞ্জুরি তে পাউডারি মিলডিউও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমন হতে পারে,যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এ সময়ে বাগানে হপার এবং ফুদকী পোকা গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকে। এ ধরনের পোকা খুব বেশী দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ প্রদানের কথা জানান তিনি।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলতি মৌসুমে পাইকগাছায় ৯ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া আশানরূপ ফলন পাওয়ায় পাইকগাছায় প্রতি বছর আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।
বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে তিনি এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।