পাইকগাছায় অসেচতনতায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

0
422

শেখ নাদীর শাহ্ :


খুলনার পাইকগাছায় আরো দু’জনের নমুনায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের একজন উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের মৃত মুনছুর মোড়লের ছেলে এম.মাহমুদ আসলাম বাড়ীতে ও অপরজন উপজেলার হরিঢালীর মামুদকাটী এলাকার মৃত অমূল্য দাশের ছেলে দুলাল দাশ(৫৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে রয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে আক্রান্ত দু’জনের বাড়ীসহ আশ পাশের অন্তত ২০ বাড়ি লক ডাউনের আওতায় নিয়েছে।

গত ১ জুন থেকে এখন পর্যন্ত পাইকগাছা উপজেলায় সাংবাদিক দম্পতিসহ ১২ জনের নমুনায় করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে উপজেলায় ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে উপসর্গ নিয়ে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেয়া নমুনা সংগ্রহের পর দেরিতে রিপোর্ট পাওয়ার অভিযোগ সেই প্রথম থেকে রয়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় ফিরে আসার তথ্যও রয়েছে। তবে দেরিতে রিপোর্ট প্রদান ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অসাবধানতার সাথে অবাধ বিচরণে সংক্রমন দ্রæত পরিবার পরিজনসহ বিভিন্ন স্থানে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে।

সর্বশেষ ১৭ জুন (বুধবার) খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের এম মাহমুদ আসলাম ও কপিলমুনির রামকৃষ্ণ বস্ত্রালয়ের মালিক মামুদকাটির রামপ্রসাদ দাশের পিতা দুলাল দাশ (৫৬) করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে কপিলমুনিতে।

এর আগে দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হলেও পাইকগাছার কপিলমুনিতে ১ জুন স্থানীয় সাংবাদিক তপন পালের নমুনায় প্রথম করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে শাহাপাড়া এলাকার পুলিশে কর্মরত রমজান আলী, ১০ জুন সাংবাদিক তপনের স্ত্রী তৃপ্তি পাল, কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের মৃত সন্তোষ শীলের ছেলে রামপ্রসাদ শীল, ১২ জুন কপিলমুনির প্রতাপকাটী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদার, ১৩ জুন উপজেলার রাড়ুলীর বাঁকা এলাকার সুমন দত্ত (২৮), ১৪ জুন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ এবং কপিলমুনি এলাকার প্রসেনজিৎ ও ১৫ জুন রাড়ুলীর শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম মোড়লের স্ত্রী হিমা বেগম, বেতবুনিয়ার স্বাস্থ্য কর্মী আন্জুয়ারা বেগম ও সর্বশেষ ১৭ জুন (বুধবার) এম মাহমুদ আসলাম ও দুলাল দাশ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান,সংক্রমিত কিংবা সংষ্পর্শে ব্যক্তির নমুনা দেওয়ার পর তার জেলা সদর থেকে রিপোর্ট পেতে অনেক সময় লাগছে। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবাধ বিচরণে তার দ্বারা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পাশাপাশি সংষ্পর্শে যাওয়া অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন বা ঝুঁকিতে থাকছেন। আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত অবস্থায় সংক্রমিতদের সংষ্পর্শে থাকা স্বজনদের অনেকেই এলাকায় ফিরে স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। এভাবে এক জন থেকে করোনা তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়ছে। শুরু থেকে এলাকায় সেনা টহলের পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা দৃশ্যমান থাকলেও সর্বশেষ খানিকটা হলেও কমেছে। কার্যত কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় প্রশাসনও খানিকটা অস্বস্থিতে রয়েছে। তবে কোন কোন এলাকায় স্থানীয়ভাবে তৎপরতা দৃশ্যমান থাকলেও অনেক এলাকায় নিস্তেজ রয়েছে লোকাল কোভিট কমিটি।

লক ডাউন প্রত্যাহারের পর ফের রিজিয়নভিত্তিক লকডাউনে উপজেলার ব্যস্ততম বানিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনিসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জনসাধারণের সামাজিক দুরত্ব বেষ্টনি ভেঙ্গে অবাধ বলগাহীন বিচরণই এর জন্য বহুলাংশে দায়ি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা এখন পর্যন্ত উপজেলায় করোনা আক্রান্তে কপিলমুনি শীর্ষে রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ১৪ মে’ (রবিবার) সকালে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে কপিলমুনিকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিতর্পর্বক লকডাউন ঘোষণা করলেও কার্যত লক ডাউন মানছেননা অনেকেই। এখন পর্যন্ত শতভাগ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারের আওতায় আনা যায়নি। লক ডাউন ঘোষণা করে ইউনিয়নব্যাপী কাঁচামাল,চাউল,ওষুধের দোকান দুপুর ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখতে ও অন্যান্য দোকান-পাঠ বন্ধ রাখাসহ মাস্ক বিহীন চলাফেরা না করতে নির্দেশনা দিয়ে প্রতিদিন মাইকিং করা হলেও তা মানছেননা অনেকেই।

কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,জীবন বাজি রেখে করোনা সচেতনতায় তিনিসহ তার প্রতিটি ইউপি সদস্য দিন-রাত কাজ করে চললেও সাধারণ মানুষকে পূর্ণ সচেতনতার আওতায় আনা যায়নি।

এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে কপিলমুনিকে অধিক ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন।

সর্বশেষ পরিস্থিতিতে গোটা উপজেলায় মূলত অসেচতনতায় করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে বলে মনে করছেন সচেতন এলাকাবাসী। তাদের দাবি,জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে করোনা ঘরে ঘরে পৌছে যাবে।