পাইকগাছার কপিলমুনিতে শুরু হয়েছে সরকারি জমি দখলের মহোৎসব

0
203

শেখ নাদীর শাহ্:
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনিতে শুরু হয়েছে সরকারী জায়গা দখলের মহড়া। ইতোমধ্যে স্ব-নামে, বে-নামে একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে কিংবা দীর্ঘ দিনের অবৈধ দখল বজায় রাখতে সদরের কোটি কোটি টাকা মুল্যের সরকারি সম্পত্তিতে একের পর এক গড়ে উঠছে স্থায়ী পাকা ইমারত। অনেকে পূর্বে বন্দোবস্ত নিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে মোটা টাকায় হস্তান্তর ও পরে নতুন নামে নবায়নের ঘটনাও ঘটেছে। কোন কোন জমি বন্দোবস্ত নিয়ে ইমারত নির্মাণের পর ভাড়া দেয়ায় ভাড়াটিয়া কর্তৃক গোপনে নতুন করে বন্দোবস্ত নেয়ার ঘটনায় আদালত পর্যন্ত পৌছানোরও নজির রয়েছে কপিলমুনিতে। এসব ঘটনায় পত্রিকান্তরে বিভিন্ন সময় লেখালেখি হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি এতটুকু। মাঝে মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের নামে গরিব ভাসমান ছোট দোকানিরা উচ্ছেদ হলেও রাঘব বোয়ালরা বরাবরই রয়ে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফেরি-ফেরি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেকেই গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। বিশেষ করে আধুনিক কপিলমুনির (বিনোদগঞ্জের) রুপকার রায় সাহেব বিনোদ বিহারীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে রেখে যাওয়া সম্পতি ও কপোতাক্ষের চরভরাটি জমিতেই ঘটছে বেশিরভাগ দখলের ঘটনা। ইতোমধ্যে রায় সাহেবের প্রতিষ্ঠিত ভরত চন্দ্র হাসপাতাল স্ব-নামে ফিরে ২০ শয্যায় উন্নিত হলেও হাসপাতালের অনেক জায়গা পার্শ্ববর্তী দখলদাররা নিজ নামে রেকর্ড নিয়ে দখল করে আসছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফলে কপিলমুনিতে বিনোদগঞ্জ পৌরসভা বাস্তবায়নে সিংহভাগ কাজ এগিয়ে গেছে। কপিলমুনি পৌরসভা বাস্তবায়ন হলে পৌর ভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দাপ্তরিক অফিস নির্মাণ ও পৌর বাজার সম্প্রসারণে জায়গার প্রয়োজন। অথচ ঠিক সেই সময়ে বন্দোবস্তর নামে মূলবান সম্পত্তির এই দখল প্রক্রিয়ায় নানা আশংকা রীতিমত জেঁকে বসেছে। সর্বশেষ সদরের ঐতিহ্যবাহী কপিলেশ্বরী কালীমন্দির সংলগ্ন প্রায় ৭ শতাংশ সরকারী সম্পত্তির অবৈধ দখলে নিয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় মৃত নকুল চন্দ্র সাধুর ছেলে প্রদ্যুৎ কুমার ওরফে ভোলা সাধু। সদরের প্রাণ কেন্দ্রের এই জায়গাটির ম‚ল্য প্রায় কোটি টাকা। প্রতিনিয়ত এভাবে একের পর এক কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলে চলে গেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বরাবরের মত মুখে কুলুপ এটে বসেছে। গত ৯ ডিসেম্বর ২০’ কপোতাক্ষের চরভরাটি জায়গায় সরকারী উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করলেও দখলদাররা ফের ভিত্তিপ্রস্তরসহ সেই জায়গা দখলে নিয়ে কাটাতারের বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ৮০’র দশক থেকে সদরের সরকারি জায়গার দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিআরএস জরিপে অনেকে দখলীয় সম্পত্তির রেকর্ড নিজ নিজ নামে করে নিয়েছেন। দীর্ঘ দিনের অব্যাহত দখল প্রক্রিয়ায় সরকারি সম্পত্তির প্রায় ৮০ শতাংশ জমি চলে গেছে অবৈধ দখলে। সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের অভাব ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঐসকল সম্পত্তি জায়েজ করে নিয়েছেন তারা। তবে স্থানীয়রা জানান, গত ৪০/৫০ বছরে যে পরিমাণ জায়গা দখল হয়েছে গেল দু’এক বছরে সেই পরিমাণ জায়গা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চলে গেছে ব্যক্তি দখলে।
দখলের এ মহোৎসবে বাদ পড়েনি কপোতাক্ষের কপিলমুনি-কানাইদিয়া খেঁয়াঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাইপাস সড়কও। মানচিত্রে কোথাও রাস্তার প্রস্থ ৪৫ ফুট থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্ব রয়েছে ৩০/৩৫ ফুট। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক দখলদাররা গিলে খাচ্ছে কপিলমুনির মানচিত্র। সূত্র জানায়, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কপিলমুনি সরকারী ভরত চন্দ্র হাসপাতালের জায়গা দখল নিয়ে আবাস গড়ে ওঠায় বর্তমানে হাসপাতালের আধুনিকায়নে বরাদ্দকৃত ভবন নির্মাণে শুরু হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপকালে বেরিয়ে আসে অনেকের থলের বিড়াল। তবে তাদের অবৈধ দখল উচ্ছেদে এখন পর্যন্ত দৃশ্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি প্রশাসন। সর্বশেষ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৬ মার্চ কপিলেশ্বরী কালিবাড়ি সংলগ্ন ভোলা সাধু কর্তৃক দখলকৃত সরকারী সম্পত্তির জরিপকাজ শেষে কংক্রিটের সড়ক সংলগ্ন সীমানায় লাল নিশান টানালেও জমির অপর প্রান্তে কোনো নিশান না দিয়ে অদৃশ্য কারণে স্থান ত্যাগ করেন সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার। কপিলমুনি ভ‚মি অফিস স‚ত্র জানায়, কপিলমনি মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ১০৮ দাগে ৭ শতক জমির সম্পূর্ণ দখলে নিয়ে বহুতল বভন নির্মাণ করছেন অভিযুক্ত ভোলা সাধু। এ ব্যাপারে উপজেলা সার্ভেয়ার কওসার আহমেদ’র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু খাস সম্পত্তি তাদের অনুক‚লে রয়েছে তাই, বন্দোবস্তের জন্য আবেদনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, কপিলমুনি বাজার কেন্দ্রিক এমন অনেক জায়গা প্রথমত দকল ও পর্যায়ক্রমে চলে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া। সর্বশেষ ভোলা সাধুর দখলে থাকা ১০ শতক জমির ৭ শতকই খাস। এ প্রসঙ্গে ভোলা সাধু জানান, তার নামে উক্ত জমির রেকর্ড হয়েছে। কোনো খাস জমিতে তিনি ঘর করছেন না। এসময় তার কাছে রেকর্ড দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হলেও তার ছেলে প্রণব সাধু ডিপি নং বিহীন মাঠ পর্চার একটি ফটোকপি দেখান যাতে এস.এ ১০৭, ১০৮ ও ১০৯ দাগে মোট ১৩ শতক জমির ১০ শতক তার অনুক‚লে বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা হাসমত আলী জানান, জমিটি ১নং খতিয়ানের ১০৮ দাগে পাকিস্তান প্রদেশের পক্ষে কালেক্টর খুলনার নামে রেকর্ড রয়েছে। তবে যেহেতু সার্ভেয়ার কাওসার সাহেব জরিপ করেছেন তাই তিনিই বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন। সচেতন এলাকাবাসী কপিলমুনি অবৈধ দখলমুক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।