পাইকগাছার ওড়াবুনিয়ায় যাতয়াতের রাস্তার বেহাল দশা ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট

0
152

পাইকগাছা প্রতিনিধি:
পাইকগাছার ওড়াবুনিয়া গ্রামের যাতায়াতের রাস্তাটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। রাস্তার উপর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় যত্রতত্র ভাবে বাঁশের সাঁকো তৈরী করে যাতায়াত করছে কমলমতি শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার জনগণ। অত্র এলাকার দিকে নজর নেই জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এলাকাবাসী রাস্তাটি সংস্কার সহ বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে ব্রীজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন। সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউপির ওড়াবুনিয়া গ্রামটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত রয়েছে। গ্রামটির চারিদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশি হওয়ায় বাতাসে পানি গুচ্ছ গুচ্ছ ঢেউ কূলে আছড়ে পড়ে। গ্রামটিতে যাতায়াতের রাস্তাটি গজালিয়া গ্রামের চাঁদখালী অভিমুখে রাস্তাটির ব্রীজ হতে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার। উক্ত রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করতে পারেনি জনপ্রতিনিধিরা। এমনকি যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিতে নির্মাণ হয়নি ইটের সলিং। এছাড়া রাস্তার দু’ধারে মৎস্য লীজ ঘের থাকায় সব সময় কর্দমাক্ত থাকে। চলাচল করতে পারে না কোন যানবাহন। গ্রামটির কমলমতি শিশুরা পায়ে হেটে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। বর্ষা মৌসুমে তাদের লেখাপড়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি নির্বাচনের পূর্বে প্রার্থীরা রাস্তাটি সংস্কারের প্রতিশ্রæতি দিলেও নির্বাচন পরবর্তী তা বেমালুম ভুলে যায়। রাস্তাটির কোন কোন অংশ ভেঙ্গে পানিতে পরিণত হলে স্থানীয় লোকজন কোন রকমে যাতায়াতের জন্য যত্রতত্রভাবে ঝুকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করে থাকে। যে সাঁকো পার হয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়ায় প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। দ্রæত রাস্তা নষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, দু’পাশে মৎস্য লীজ ঘেরের পানির ঢেউ। এছাড়া গ্রামটিতে নেই কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা। অত্র এলাকার মহিলারা প্রতিদিন বিকালে কলসি কাকে নিয়ে গজালিয়া অথবা কৃষ্ণনগরে পানি আনতে যেতে হয়। যা অত্যন্ত দুরহ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। যারা পানির কলসি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পারাপার করতে পারে না তাদেরকে কোমর পানিতে নেমে পারাপার করতে হয়। বলতে গেলে গ্রাম আছে কিন্তু নেই যাতয়াতের ভাল কোন রাস্তা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। সরকারিভাবে মৎস্য লীজ ঘের করার জন্য যাতায়াতের রাস্তা থেকে ১০ ফুট দুরত্বে রিং বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার নির্দেশনা থাকলেও লীজঘের মালিকরা তা মানছে না। উক্ত গ্রামটির দু’পাশে শতশত লীজ ঘের থাকলেও সব লীজ ঘেরগুলো রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় জনদুর্ভোগের শেষ নাই। গ্রামে রয়েছে একটি প্রাইমারী স্কুল। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে হাইস্কুল বা কলেজে যেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। করোনাকালীন স্কুলটি বন্ধ থাকলেও একপ্রকার বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা যাতয়াতের জন্য স্কুল কলেজে যেতে পারে না। চারদিক পানি থৈ থৈ করলেও সুপেয় পানি নেই কোথাও। চার দশকের বেশি সময় ধরে চিংড়ি চাষের ফলে এলাকাটি অবহেলিত হয়ে রয়েছে। সুপেয় পানির অভাবে পানিবাহিত রোগ-ব্যাধিতে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য-সমস্যা দেখা যায়। গ্রামের বাসিন্দা তপন কুমার মন্ডল বলেন, আমি একজন শিক্ষক, বর্ষা মৌসুমে আমাকে স্কুলে যেতে হলে দু’টি ড্রেস নিয়ে বের হতে হয়! কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পানি ঠেলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়! সারাদেশ সহ পাইকগাছার অন্য ইউনিয়নে উন্নয়ন হলেও আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছাড়া আর কোন অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন হয়নি আজও। শিবানী মন্ডল নামে এক ৫০ উর্ধ্ব মহিলা খুবই হতাশ কণ্ঠে বলেন, আগে আমরা পুকুরের পানি পান করতাম, কিন্তু এহেনে চিংড়ি চাষ হওয়ায় সেই পানি নষ্ট হইয়ে গেছে। খাওয়ার পানি আনতে তাকে প্রতিদিন প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে এক কলস পানি আনতে হয়। সব থেবে বেশি সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। ছবি মন্ডল নামে দশম শ্রেনী পড়ুয়া শিক্ষার্থী জানান, রাস্তার কাদাপানিতে পড়ে বই জামাকাপড় নষ্ট হয়। তাদের দু’টি ড্রেজ নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে তাদের এক প্রকার স্কুল যাতয়াত বন্ধ থাকে। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম হীরা বলেন, রাস্তার দু’পাশে মৎস ঘের ও সরকারী খাল থাকায় রাস্তার কাজ করা সম্ভব হয় না। বাঁশের সাঁকো ও মেরামত করা হলেও বর্ষা মৌসুমে পানির চাপের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তার দু’পাশে পাইলিং করে মাটি দিয়ে উচু করতে পারলে হয়তো রাস্তাটি টিকবে। ইউনিয়ন পরিষদের এতোবড় বাজেট না থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাবিখা প্রকল্পে ৩ লাখ টাকার বাজেট করেও কাজ করতে না পেরে প্রকল্পটি গড়ের আবাদ গুচ্ছ গ্রামে নেয়া হয়েছে। চাঁদখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ আক্কাস ঢালী বলেন, ওড়াবুনিয়া রাস্তার মাপজোপ করা হয়েছে। আগামিতে রাস্তা সহ কালবার্টের কাজ করা হবে। পাইকগাছা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ওড়াবুনিয়া পার্শ্ববে খালের উপর একটা ব্রিজের জন্য পরিমাপ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আছে। বর্ষা মৌসুমের আগে অতিদ্রæত রাস্তাটি সংস্কার এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে স্থানীয় এমপি, উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।