পাইকগাছার আবিরন হত্যা মামলায় সৌদি আদালতে গৃহকত্রীর মৃত্যুদন্ড

0
368
শেখ নাদীর শাহ্ ::

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির রামনগর গ্রামের বাসিন্দা আবিরন বেগমকে সৌদি আরবে হত্যা মামলায় গৃহকত্রী আয়েশা আল জিজানিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে সেদেশের আদালত। একই সঙ্গে ওই বাসার কর্তা বাসেম সালেমকে ৩ বছর ২ মাস কারাদন্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হয়েছে। এই দম্পতির ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রে সাত মাস রাখার রায় দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রিয়াদের একটি আদালত এ রায় দেন। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মো.আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও রায়ের বিষয়টি জানানো হয়েছে। আদালত আসামিপক্ষকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য এক মাস সময় দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ছয় বোনদের মধ্যে মেঝ স্বামী পরিত্যক্তা আবিরন বেগম ছোট বোনদের পড়া-লেখার খরচ ও পিতার সংসারের ভরণপোষনের কথা চিন্তা করে পরিবারের অমতে ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। পারিবারিক সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের অবেদ আলী মোড়লের ছেলে আদম ব্যাপারী (দালাল) রবিউল ইসলামের মাধ্যমে সরকারিভাবে সৌদি অরবে যান আবিরন। এরপর সেখানেই ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ খুন হন তিনি। এরপর দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ঐ বছরের ২৩ অক্টোবর তার লাশ দেশে আসলে পরিবারের পক্ষে ছোট বোন রেশমা আক্তার ২৪ অক্টোবর তার লাশ গ্রহন করেন এবং ঐ রাতেই গ্রামের বাড়ী রামনগর পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়,লাশের সাথে থাকা আবিরনের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মার্ডারের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। আবিরনের বোন রেশমা খাতুন আরো জানান, আবিরন সৌদি আরবের জেদ্দায় যে বাসায় কাজ করতেন, সেখানে মোট আটজন পুরুষ থাকতেন। তাঁরা আবিরনকে যৌন নির্যাতনও করতেন। ঠিকমত খাবার খেতে দিতেননা। এছাড়া তারা তাকে নিয়মিত শারিরীক নির্যাতন বিশেষ করে মাথায় আঘাত করতেন। আবিরন দুই বছরের বেশি সময় কাজ করলেও তাঁর পরিবার ঐসময় মাত্র ১৬ হাজার টাকা হাতে পায়। বাকি টাকা দালাল চক্রসহ অন্যরা আতœসাৎ করেন বলেও জানান তিনি।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তার হত্যাকান্ডের পর সৌদি আরবে আবিরন হত্যা মামলায় গত ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয। সৌদি আরবের রিয়াদের ক্রিমিনাল কোর্টে বহুল আলোচিত আবিরন বেগমের হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ও সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকান্ড ঘটানোর দায়ে আদালত ‘কেসাস’–এর (জানের বদলে জান) রায় দিয়েছেন। গৃহকর্তা বাসেম সালেমের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের আলামত ধ্বংস, গৃহকর্মীকে নিজ বাসার বাইরে অবৈধভাবে কাজে পাঠানো এবং গৃহকর্মীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে আদালত জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের আদেশ দিয়েছেন। রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইং এই বিচারকার্য ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

                                                           রায়ে খুশী আবিরনের পরিবার

রায়ের প্রতিক্রীয়া জানতে সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আবিরনের বাড়ী পাইকগাছার রামনগরে গেলে তার বৃদ্ধ পিতা আনছার আলী সরদার, বৃদ্ধা মাতা নেছারুন বেগম ও ছোট বোন রেশমা আক্তার এ প্রতিনিধিকে জানান, ‘সরকার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ব্র্যাক ও বিশেষ করে গনমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন। তারা রায়ে সন্তুষ্ঠ তবে দেশের সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের অবেদ আলী মোড়লের ছেলে আদম ব্যাপারী (দালাল) রবিউল মোড়লকে বিচারের আওতায় নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। এসময় তারা দ্রুত রায় কার্যকরের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।