পরীমণি গ্রেফতার, বিকাল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত যা হলো

0
171

খুলনা টাইমস: বুধবার বিকেলে হঠাৎ করেই অভিনেত্রী পরীমণির বাসায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে পারেন অভিনেত্রীর ফেসবুক লাইভ থেকে। তখন ঘড়ির কাটায় সময় বিকেল চারটা। পরী লাইভে এসে জানান, তার বাসায় কিছু লোক প্রবেশের চেষ্টা করছেন। তারা তাদের পরিচয় দিচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পরীর বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বনানীর পরিচিত এগারো নম্বর রোডের লেক ভিউ ১৯ /এ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়ির সামনে তখন পুলিশ ও সাংবাদিকের চেয়ে সাধারণ মানুষই বেশি। সবার হাতে মোবাইল, কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন, কেউ ভিডিও করে রাখছেন হয়তো তখন পর্যন্ত তার জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত। দেশে করোনাভাইরাস আছে কি নেই সেটা বুঝার কোনো উপায় ছিল না লোকজনের জমায়েত দেখে।

অভিনেত্রী গ্রেফতার হবে, তা সরাসরি দেখা। বিষয়টি আসলেই রোমাঞ্চকর। গুলশানে দোকানের বিক্রয়কর্মীদের দেখা গেল, খুব উৎসুক ভঙ্গিতে। পরীমণির লাইভ দেখে তারা ছুটে এসেছেন। কি হয় তা দেখার আশায়।

ততক্ষণে আলোচিত বড় পর্দার অভিনেত্রী পরীমণির বাসায় তল্লাশি শুরু করেছেন র‍্যাবের সদস্যরা। সময় পেরিয়ে গেছে মধ্যাহ্নের ঘর। তবে র‍্যাবের অভিযানকারী দল পরীমণির বাসায় ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই ওই এলাকায় যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। যেখানে নেতৃত্বে ছিলেন যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ। যদিও স্পটে না নেমে মাঝপথ থেকেই ফিরে আসেন তারা।

এরআগে র‍্যাব সদস্যরা তাঁর বাসার দরজায় এলে তিনি দরজা না খুলে ফেসবুক লাইভে আসেন। ফেসবুক লাইভে চিত্রনায়িকা বলেন, ‘কিছু লোক আমাকে ধরে নিতে এসেছে।’ ফেসবুক লাইভে থাকা অবস্থায় তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতেও দেখা যায়। বাঁচার জন্য পরিচিতজনদের কাছে আকুতিও জানান। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ পরীমণি ফেসবুক লাইভে থাকা অবস্থাতেই দরজার কাছে যান। তখন উল্টো দিক থেকে র‍্যাব পরিচয় দিয়ে পরীমণিকে দরজা খোলার অনুরোধ করেন। এ সময় কয়েক মিনিট কথোপকথনের পর তিনি দরজা খুলে দেন, কিন্তু ফেসবুক লাইভে বাসায় কারা ঢুকেছে তা দেখা যায়নি। দরজা খোলার পর একজন পরীমণিকে বলেন যে তারা আইনগতভাবে পরীমণির সাথে কথা বলবেন। এক ব্যক্তি পরীমণিকে ফেসবুক লাইভ বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ করেন।

পরীমণিকে এ সময় বলতে শোনা যায়, আপনারা সবার মোবাইল নিয়ে নিচ্ছেন কেন? এ সময় একজন আবারো তাকে ফেসবুক লাইভ নিজের হাতে বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ করেন এবং একপর্যায়ে ফেসবুক লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল চারটা থেকে প্রায় ৩২ মিনিট লাইভে ছিলেন পরীমণি। রাত ১১টা পর্যন্ত সেই লাইভ দেখা হয় ১ কোটি ২০ লাখ বার। ৭৯ হাজার শেয়ার হয়। আর মন্তব্য করেছেন ৫ লাখ ১ হাজার মানুষ। ফেসবুক লাইভের সময় আশপাশ থেকে অনেকেই ছুটে যান বনানীতে। গণমাধ্যমকর্মীরাও ছুটে যান পরীমণির বাসার দিকে।

বিকেল চারটার দিকে র‍্যাবের কর্মকর্তারা পরীমণির বাসায় প্রবেশ করেন। এর মাঝে কি পাওয়া গেল, কে কে আছে এ নিয়ে তথ্য আদানপ্রদানে কেটে যায় প্রায় চার ঘণ্টা। আটটার দিকে একটি গাড়িতে তোলা হয়, পরীমণির বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় অর্ধশত বিদেশি মদের বোতল। বহু নামী ব্রান্ডের দেখা মেলে সেখানে। তবে তা খোলাসা করেননি অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা।

রাত সোয়া আটটার দিকে পরীমণিকে নামানো হয় নিচে। ওই বাসাটির চার ও পাঁচতলায় একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তিনি। বছরখানেকেরও কম সময় হয় সেখানে উঠেছেন। পরীমণির পরে তার বাসার গৃহকর্মী ও গাড়িচালককেও হেফাজত নেয় র‍্যাব। তাদের সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলায় র‍্যাবের সদর দফতরে। সেখানে পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাব। বুধবার দিবাগত রাত একটায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে কি বলেছেন পরীমণি তা জানা সম্ভব হয়নি।