নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে গৃহবধূ নির্যাতন: স্বামীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

0
189

টাইমস ডেস্ক:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণচেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় এএসপি, ওসিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কেউই দায় এড়াতে পারেন না বলে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানির জন্যে গতকাল বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে (ভার্চুয়াল) এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আদালতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টর খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, ঘটনাটি আদালতের নজরে আনয়নকারী আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী। পরে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনের অবহেলা পেয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আসার পর গতকাল বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় নারীর স্বামীর সম্পৃক্ততা ছিল। গত ১০-১২ বছর ধরে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু তিনি ঘটনার ৫-৬ দিন আগে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এসেছিলেন। নারীকে শ্লীলতাহানি করার ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও চৌকিদারের অবহেলা রয়েছে। ওই নারীকে শ্লীলতাহানির অবহেলা ও দায়ীর ঘটনায় এএসপি, ওসি, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও চৌকিদারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পর এ বিষয়ে শুনানির জন্যে আগামী ১২ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত। এদিকে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে থাকা ভিডিও ফুটেজের একটি কপি সংরক্ষণ করে বাকিগুলো সরানো হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে বিটিআরসি। ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী। বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদালতের আদেশ মতো একটি কপি সংরক্ষণ করা হয়েছে। একটি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুক বিটিআরসিকে ফুটেজ সরানোর কথা ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়েছে। এর আগে গত ৫ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণচেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান হাইকোর্ট। ওইদিন আদালতের নজরে আনার পর ফুটেজ শ্লীলতাহানির ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সরানোর জন্যে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে, সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে ফুটেজ সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে, ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি-না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছেন আদালত। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটিতে থাকবেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ। কমিটি এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ২৮ অক্টোবর ওই প্রতিবেদন জমা দিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ৪ অক্টোবর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে তারা মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।