নেতিবাচক ধারা কাটিয়ে ধনাত্মক প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে রফতানি খাত

0
440

চলতি বছরের শুরুতেই করোনার প্রভাবে দেশের রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে ওই নেতিবাচক ধারা কাটিয়ে ধনাত্মক প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসছে দেশের রফতানি খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হার দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর একক মাস হিসেবে শুধু নভেম্বর মাসেই রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে রফতানি খাতে ঋণাত্মক ধারায় শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু গত মাসে সেখান থেকে রফতানি প্রবৃদ্ধি আবারো ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য। আর একক মাস হিসেবে নভেম্বরে ৩০৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে তার পরিমাণ ছিল ৩০৬ কোটি ডলার। ওই হিসেবে গত মাসে রফতানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৭৬ শতাংশ। রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে ২১টি পণ্যের মূল ভূমিকায় ছিল। তার মধ্যে নিটওয়্যারে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে এ হার ৩৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। তাছাড়া জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইনে প্রবৃদ্ধির হার ৪৯ দশমিক ২৭ শতাংশ, কাঁচাপাটে দশমিক ৯২, হোম টেক্সটাইলে ৫০ দশমিক ৬১ ও জুতায় (চামড়া ব্যতীত) ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তার বাইরে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল, প্রকৌশল দ্রব্যাদি, প্রকৌশল যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রিক পণ্য, কার্পেট, ওষুধ, হ্যান্ডিক্রাফটস, বাইসাইকেল, অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং দ্রব্য, কৃষিপণ্য, গুঁড়া মসলা, শুকনো খাবার, রাবার, কপারওয়্যার ও চা।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। তবে নিটওয়্যারের রফতানি বেড়েছে। ৫ মাসে ৭১৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের নিটওয়্যার পণ্য রফতানি হয়েছে, যা লক্ষ্যের চেয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। তবে হিমায়িত মাছ রফতানি কমেছে ১ দশমিক ১২ শতাংশ। ৬৪ শতাংশ কমেছে শাকসবজি রফতানি। চামড়া ও চামড়া পণ্যের রফতানি কমেছে ৮ শতাংশ। তাছাড়া হিমায়িত মাছের রফতানি ১ শতাংশ ও ফলমূলের রফতানি কমেছে ৭১ শতাংশ। আর বাইসাইকেল ও চায়ের রফতানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৬ ও ২৭ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ব্যাপক হারে রফতানি হ্রাস পাওয়ার পর জুন এবং জুলাইতেও পোশাক রফতানি বাড়াতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। ফলে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মূলত কভিডের প্রভাবে বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশ পুনর্বহাল হওয়ায় স্বল্প সময়ের জন্য ওই সময় রফতানি পুনরুদ্ধার হয়। কিন্তু পরিস্থিতির উত্তরণের প্রত্যাশাকালেই কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে রফতানি আবারো ভেঙে পড়ার মুখে রয়েছে। ফলে গত অক্টোবরে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ রফতানি হ্রাস পায়। পশ্চিমের খুচরা বাজারে শ্লথতার কারণে নভেম্বরেও এ ধস অব্যাহত ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে মোট পোশাক রফতানি গড়ে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে। এ সময় ওভেন পোশাক রফতানির পতন ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। যদিও নিটওয়্যারের রফতানি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। শুধু নভেম্বরে নিটওয়্যার রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ওভেন পোশাক রফতানির সংকোচনের হার ছিল ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল টানা ১৬তম মাসের মতো ওভেন পোশাকের রফতানি কমেছে। আরসংক্রমণ পরিস্থিতি আবারো খারাপের দিকে যাওয়ায় বৈশ্বিক খুচরা বিক্রিতেই তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর মার্চ থেকে নিম্নমুখী ধারা বজায় রেখে অক্টোবরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের বিক্রি কমেছে ১৩ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক জানান, খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রের প্রবণতা উদ্বেগজনক। বিশেষত যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ধস এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের ফলে আয় ও ব্যয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে। সে অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার এখনো অনেক দূরে। কারণ চাহিদা কমে গিয়েছে; যার প্রভাব পড়েছে পণ্যের দামেও। নভেম্বরে পোশাক রফতানির হার ছিল ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, যার প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক।