নির্মাণ শুরু হবার ১১ বছর পার হলেও উদ্বোধনের মুখ দেখেনি খুলনা নার্সিং কলেজ

0
1049

সাইমুম মোর্শেদঃ খুলনা নার্সিং কলেজের নির্মাণ কাজ নিয়ে প্রায় ১১ বছর মামলা চলার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমঝোতা হয়েছে। এখন অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ভবনগুলো সংস্কার ও অবশিষ্ট কাজ শেষ করলেই চালু হতে পারে এই নার্সিং কলেজটি। কিন্তু গত ৬ মাসে সেই সংস্কার কাজের প্রাক্কলন ব্যয় অনুমোদন হয়নি। ফলে দরপত্র প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়নি। মামলার পর এখন ব্যয় প্রাক্কলন অনুমোদন নিয়ে নতুন করে দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়েছে এ কলেজটি।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) থেকে জানা গেছে, কর্মরত নার্সদের উচ্চ শিক্ষার (বিএসসি নার্সিং) লক্ষ্য নিয়ে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুরার সাথে খুলনায়ও প্রতিষ্ঠা হয় খুলনা নার্সিং কলেজ। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বয়রার কলাবাগান এলাকায়১০ একর জমির উপর ১৬ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটির নির্মাণ কাজ থেমে যায় ২০০৯ সালে। তখন একটি একাডেমিক ভবন, একটি গেস্ট হাউজ, দুইটি হোস্টেল, ও তিনটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ কাজের অধিকাংশ সম্পন্ন করা হয়।

 

 

দীর্ঘ চার বছর পর ২০১১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর উদ্যোগে নিয়ে ১৩ জন শিক্ষক পদায়ন করা হলেও বর্তমানে দুই জন প্রভাষকসহ ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন কাগজে-কলমে। তারা সবাই এখনো ডেপুটিশনে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রভাষক মফিজ উল্লাহ, প্রভাষক রেবা মন্ডল, ডিমোনেস্ট্রেটর টেটোর আছেন শরিফুল ইসলাম, আসমাতুল নেছা, আলেয়া বেগম ও জুথিকা রানী মুখার্জী। এদের মধ্যে আবার শিক্ষা ছুটি এবং বাকীরা প্রেষনে অন্যত্র কর্মরত আছেন। এছাড়া ৩য় শ্রেনীতে ১০ জন কর্মরত আছেন। যার মধ্যে প্রেষনে আছেন ৩ জন। কর্মরত আছেন ৭ জন। এরা হচ্ছে ল্যাব সহকারি ৪ জন, কম্পিউটার অপারেটর ২ জন, স্টোর কিপার ১ জন ও ক্যাশিয়ার ১ জন রয়েছে।

এসবের মধ্যে গত সেশনে দেশের অন্য তিনটি নার্সিং কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অপেক্ষমান তালিকা থেকে ৬০ জনকে খুলনাতে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তা বাতিল করে ডিজি নার্সিং-এর কার্যালয়।

এবং কাজ শুরুর দেড় বছরের মাথায় কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুন কনস্ট্রাকশন। ততদিনে একটি গেস্ট হাউস, অধ্যক্ষের বাসভবন, তিনটি স্টাফ কোয়ার্টার, একটি একাডেমিক ভবন এবং দুটি হোস্টেল ভবনের কাজ অর্ধেকের মতো শেষ হয়।

 

 

সূত্রটি জানায়, কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে এইচইডি। এ আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই মামলা গত ১১ বছর ঝুলে ছিল। অবশেষে দুপক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে পুনঃটেন্ডারের ঘোষনা আসলেও তা এখন পর্যন্ত কার্যত হয়নি।

নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ খালেদা আক্তার বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বার বার পুনঃনির্মাণ প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তিও পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের নার্সিং পেশায় নিয়োজিত শত শত নার্স উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আগামী বছর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। সরকারিভাবে কিছু আসবাবপত্র পাঠানো হয়েছে।জুলাই মাসে রিটেন্ডার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, পুনঃ টেন্ডার হলে জটিলতা নিরসন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের (স্বানাপ) খুলনা মহানগর সভাপতি জেসমিন নাহার বলেন, খুলনায় নার্সিং কলেজটি চালু না হওয়ায় এ অঞ্চলের কর্মরত নার্সদের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় গিয়ে বিএসসি নার্সিং কোর্স করতে হচ্ছে। এতে অনেকে সংসার, স্বামী-সন্তান রেখে দুই বছর ধরে দূরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ খুলনা নার্সিং কলেজটি চালু থাকলে বাড়িতে বসেই অনেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেতেন।তিনি আরো বলেন, খুলনার নবনির্বাচিত মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচিত হবার পরে খুমেক নার্সিং বিভাগ সহ সকল বিভাগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের ছয় মাসের মধ্য এই নার্সিং ইনিষ্টিটিউট চালু করবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।আমরা আশাবাদী খুব শিঘ্রই সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে চালু হবে আমাদের এই নার্সিং কলেজটি।

স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি শীলা রানী দাস বলেন, বর্তমান সরকার নার্সদের ব্যাপারে অতীতের সব সরকারের চেয়ে আন্তরিক। সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে ১০ হাজার নার্স পদায়ন ছাড়াও নার্সদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছে। খুলনা নার্সিং কলেজটিও দ্রুত চালু করা হবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।