নিউ বসুন্ধরা কর্তৃক একশ’ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে খুলনার আমানতকারীরা

0
433

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আকবর হোসেন। খালিশপুর নয়াবাটি বাড়ি। অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। নিউ বসুন্ধরার কাছে আমানত রেখেছেন ২০ লাখ টাকা। ক্রিসেন্ট জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক গোলাম মোস্তফা। তিনি জীবনের শেষ পুজি গ্রাইচুটি ও পিএফ ফান্ডের পাওয়া ৬ লাখ টাকা নিউ বসুন্ধরায় আমানত রেখেছেন। আরেক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম। তিনি নিউ বসুন্ধরায় আমানত রেখেছেন ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বিনা সুদে লাভ পাওয়ার আশায় তারা জীবনের শেষ সম্বল জমা রাখে এ সংস্থায়। শুধু এ তিনজন নয় খুলনার প্রায় সাড়ে চার হাজার গ্রাহক একই দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে নিউ বসুন্ধরায় টাকা জমা রাখেন। এসব গ্রাহকের জমাকৃত টাকার পরিমাণ প্রায় একশ’ কোটি টাকা। এ টাকা ফেরৎ না পেয়ে গ্রাহকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকের সংসার চলছে না। সন্তানদের লেখা-পড়া বন্ধ হওয়ার পথে। চরম আর্থিক সংকটে ভূগছে এসব গ্রাহকরা। গতকাল সকালে খালিশপুর পৌর সুপার মার্কেটে বসে এসব কস্টের কথাগুলো বলেন গ্রাহকরা। ২০১৭ সাল থেকে এসব গ্রাহকরা আর কোন লাভ্যাংশ পাননি। এখন আসল পাবেন কি না তা নিয়ে শংকার মধ্যে রয়েছেন এসব গ্রাহকরা।
আমানতকারীরা জানান, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে বেসরকারি একটি সংস্থা নগরীর সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে সদস্যের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করে। ইতোমধ্যে তারা প্রায় সাড়ে হাজার গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আমানত গ্রহন করে তা আত্মসাত করেছে। গ্রাহক প্রতি আমানতের টাকা পরিমাণ হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে পঁচিশ লাখ টাকা। গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু করে চলতি মাস পর্যন্ত গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ফেরৎ পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে আমানতের টাকা দেয়া নিয়ে গড়িমশি করছে। এতে করে গ্রাহকরা আর্থিক ও মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব আমানতের টাকা ফেরৎ পেতে গ্রাহকরা আন্দোলন সংগ্রাম করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। গত ২১ জুন এক সভার মাধ্যমে এগারো সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির নেতৃবৃন্দ হলেন, আহবায়ক মেহেদী হাসান, যুগ্ম আহবায়ক আলী আকবর, সদস্য সচিব গাজী মিজানুর রহমান, যুগ্ম সদস্য সচিব আবুল কাশেম, কোষাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক এস এম হাবিবুল্লাহ, সদস্য মুফতি শাহাদাত হোসেন, সুলতান হোসেন, আবুল হাসান, মাওলানা লোকমান হুসাইন ও শফিকুল ইসলাম। সভায় তারা বলেন, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ছয়টি অফিস রয়েছে। এসব অফিসের অধিনে হাজার হাজার গ্রাহকরা আমানত জমা দিয়ে পথে পথে ঘুরছে। অধিকাংশ অফিসের অধিনে থাকা গ্রাহকরা তাদের আমানত ফেরৎ পেলেও খুলনার গ্রাহকরা পায়নি। তারা বিভিন্ন সময়ে তাদের আমানত ফেরৎ পেতে কর্তৃপক্ষে সাথে যোগাযোগ করলেও কোন সুফল পায়নি। এ টাকা ফেরৎ পেতে গঠিত সংগ্রাম কমিটি কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু সুচতুর প্রতারক কোম্পানীর এমডি আঃ মান্নান তালুকদার ইতোমধ্যে দুদকের মামলায় কারাগারে রয়েছে। এ বিষয়টি সামনে এনে অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তারা কোম্পানীর এমডি জামিন পেলে টাকা ফেরৎ দেয়ার আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে। ওই সভায় কোম্পানীর এমডির ছেলে মিজানুর রহমানসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সংগ্রাম কমিটিকে কথা দিয়েছিল, শিগগিরই তাদের পাওনা পরিশোধ করবে। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। এতে করে গ্রাহকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচী আবারো নতুন করে শিগগিরই শুরু করবেন বলে জানান কমিটির আহবায়ক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, কোম্পানীর কর্মকর্তারা তাদের সাথে প্রতারণা করলো। এমন কি কোম্পানীর এমডি কবে নাগাদ জামিন পাবেন, মামলার খবরা খবকর কি তা সংগ্রাম কমিটিকে জানাচ্ছে না। সব কিছু আড়ালে রেখে তারা সকল টাকা আত্মসাৎ করতে নতুন করে কলাকৌশল শুরু করেছে। তবে এবার আর তাদের ক্ষমা করা হবে না। শিগগিরই আন্দোলন কর্মসূচী ঘোসণা কার হবে বলে এ নেতা জানান।